মৃগীরোগ: খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে প্রথম মাথার খুলিতে যন্ত্র স্থাপন ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ২:৫৮ অপরাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২৪ নিজস্ব প্রতিনিধি পরীক্ষামূলকভাবে খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বের প্রথম মৃগী রোগীর মথার খুলিতে বসানো হলো নতুন ডিভাইস বা যন্ত্র। ‘নিউরোস্টিমুলেটর’ যন্ত্রটি রোগীর মস্তিষ্কের গভীরে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠায়, ফলে মৃগীরোগে আক্রান্ত ওরান নোলসনের দিনের বেলা খিঁচুনি ৮০ শতাংশ কমিয়েছে। ওরান নোলসনের মা জাস্টিন বিবিসিকে বলেন, যন্ত্র স্থাপনের পর অনেক ভালো সময় পার করছে ওরান। লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে এই যন্ত্রটি এই কিশোরের মথার খুলিতে বসানো হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে অস্ত্রোপচারটি করা হয়েছিল, যখন ওরান ১২ বছর বয়সী ছিল। এখন তার রয়স ১৩ বছর। প্রায় আট ঘন্টা স্থায়ী হয় অস্ত্রোপচারটি। যুক্তরাজ্যের সমারসেটের বাসিন্দা ওরান। তার লেনক্স-গ্যাস্টট সিনড্রোম রয়েছে। এটি মৃগীরোগের একটি মারাত্মক পর্যায়, যা শিশুদের স্নায়ুকে শৈশব থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তিন বছর বয়সে প্রথম এই রোগ ধরা পড়ে তার। তারপর থেকে দৈনিক ১২ থেকে শতাধিকবার খিঁচুনি হতো তার। অস্ত্রোপচারের আগে ওরানের মা ব্যাখ্যা করেছিলেন, কীভাবে ওরানের মৃগীরোগ তার জীবনে প্রভাব পড়েছিল। যা তার শৈশব কেড়ে নিয়েছে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ওরানের বিভিন্ন ধরণের খিঁচুনি হয়। সে মাটিতে পড়ে যায়, প্রচণ্ডভাবে কাঁপে আবার জ্ঞান হারায়। তিনি আরো বলেছেন, মাঝে মাঝে ওরানের শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং তাকে বাঁচাতে তখন জরুরি ওষুধের প্রয়োজন হয়। ওরানের অটিজম এবং এডিএইচডি আছে। কিন্তু মা জাস্টিন জানান, তার জীবনে মৃগীরোগ সবচেয়ে বড়েএকটি বাধা। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তিন বছর বয়স পর্যন্ত মোটামুটি সুস্থ ছিল এবং তার খিঁচুনি শুরু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই দ্রুত অবনতি ঘটে। পাশাপাশি সে অনেক দক্ষতা হারিয়ে ফেলে।’পরামর্শদাতা পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন মার্টিন টিসডালের নেতৃত্বে দলটি ওরানের মস্তিষ্কের গভীরে দুটি ‘ইলেক্ট্রোড’ (ছোট ধাতব প্লেট বা সুই, যা অস্ত্রোপচারের সময় বিদ্যুৎ পরিবহন করে) প্রবেশ করান। যতক্ষণ না তারা থ্যালামাসে (মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় অংশের মধ্যে জোড়াযুক্ত ধূসর পদার্থ) পৌঁছান। যা নিউরোনাল তথ্যের একটি মূল অংশ। সীসাগুলোর প্রান্ত নিউরোস্টিমুলেটরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। মাথার হাড় সরিয়ে ৩.৫ সেমি বর্গক্ষেত্র এবং ০.৬ সেমি পুরু ডিভাইস বা নিউরোস্টিমুলেটর যন্ত্রটি ওরানের মাথার খুলির ফাঁকে স্ক্রুর সাহায্যে বসানো হয়েছিল। পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন মার্টিন টিসডাল বিবিসিকে বলেছেন, ‘আশা করা যায় গুরুতর মৃগীরোগের ক্ষেত্রে এটি একটি কার্যকর চিকিত্সা হতে যাচ্ছে এবং নতুন ধরণের ডিভাইসটি শিশুদের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর। আমরা আশা করছি এটি সম্ভাব্য জটিলতা কমিয়ে আনবে।’ এর মধ্যে রয়েছে অস্ত্রোপচারের পরে সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করা এবং ডিভাইসটি যোনো কাজ করে, সেটা নিশ্চিত করা। নিউরোস্টিমুলেটর যন্ত্রটি চালু করার আগে ওরানকে অপারেশনের ধকল থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য এক মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। এটি চালু হলে ওরান তা বুঝতে পারে না এবং টিভি দেখতে দেখতে বা অন্য কাজ করার সময় ওয়্যারলেস হেডফোনের মাধ্যমে ডিভাইসটি প্রতিদিন রিচার্জ করতে পারবে। জাস্টিন বলেছেন তার ছেলে ওরানের মৃগীরোগের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। দিনের বেলা তার খিঁচুনি হয় না এবং রাতেও খিঁচুনিও কম পরিসরে হয় এবং কম গুরুতর হয়। ওরান ‘ক্যাডেট’ নামে একটি প্রকল্পের অংশ। যেটি গুরুতর মৃগীরোগে আক্রান্ত রোগীদের মস্তিষ্কের গভীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং এর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার একটি সিরিজ পরীক্ষা।’ এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছে গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতাল, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, কিংস কলেজ হাসপাতাল এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ‘পিকোস্টিম নিউরোট্রান্সমিটার’ যুক্তরাজ্যের কম্পানি অ্যাম্বার থেরাপিউটিকস তৈরি করেছে। মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক সংকেতের অস্বাভাবিক কার্যকলাপের কারণে মৃগী রোগের খিঁচুনি শুরু হয়। নতুন এই যন্ত্রটি অবিরাম বৈদ্যুতিক স্পন্দন পাঠিয়ে অস্বাভাবিক সংকেতগুলোকে থামিয়ে দেয় বা ব্যাহত করতে সাহায্য করে। সূত্র : বিবিসি SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: #খিঁচুনি#মৃগীরোগ
পরীক্ষামূলকভাবে খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বের প্রথম মৃগী রোগীর মথার খুলিতে বসানো হলো নতুন ডিভাইস বা যন্ত্র। ‘নিউরোস্টিমুলেটর’ যন্ত্রটি রোগীর মস্তিষ্কের গভীরে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠায়, ফলে মৃগীরোগে আক্রান্ত ওরান নোলসনের দিনের বেলা খিঁচুনি ৮০ শতাংশ কমিয়েছে। ওরান নোলসনের মা জাস্টিন বিবিসিকে বলেন, যন্ত্র স্থাপনের পর অনেক ভালো সময় পার করছে ওরান। লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে এই যন্ত্রটি এই কিশোরের মথার খুলিতে বসানো হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে অস্ত্রোপচারটি করা হয়েছিল, যখন ওরান ১২ বছর বয়সী ছিল। এখন তার রয়স ১৩ বছর। প্রায় আট ঘন্টা স্থায়ী হয় অস্ত্রোপচারটি। যুক্তরাজ্যের সমারসেটের বাসিন্দা ওরান।
তার লেনক্স-গ্যাস্টট সিনড্রোম রয়েছে। এটি মৃগীরোগের একটি মারাত্মক পর্যায়, যা শিশুদের স্নায়ুকে শৈশব থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তিন বছর বয়সে প্রথম এই রোগ ধরা পড়ে তার। তারপর থেকে দৈনিক ১২ থেকে শতাধিকবার খিঁচুনি হতো তার।
অস্ত্রোপচারের আগে ওরানের মা ব্যাখ্যা করেছিলেন, কীভাবে ওরানের মৃগীরোগ তার জীবনে প্রভাব পড়েছিল। যা তার শৈশব কেড়ে নিয়েছে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ওরানের বিভিন্ন ধরণের খিঁচুনি হয়। সে মাটিতে পড়ে যায়, প্রচণ্ডভাবে কাঁপে আবার জ্ঞান হারায়। তিনি আরো বলেছেন, মাঝে মাঝে ওরানের শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং তাকে বাঁচাতে তখন জরুরি ওষুধের প্রয়োজন হয়।
ওরানের অটিজম এবং এডিএইচডি আছে। কিন্তু মা জাস্টিন জানান, তার জীবনে মৃগীরোগ সবচেয়ে বড়েএকটি বাধা। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তিন বছর বয়স পর্যন্ত মোটামুটি সুস্থ ছিল এবং তার খিঁচুনি শুরু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই দ্রুত অবনতি ঘটে। পাশাপাশি সে অনেক দক্ষতা হারিয়ে ফেলে।’পরামর্শদাতা পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন মার্টিন টিসডালের নেতৃত্বে দলটি ওরানের মস্তিষ্কের গভীরে দুটি ‘ইলেক্ট্রোড’ (ছোট ধাতব প্লেট বা সুই, যা অস্ত্রোপচারের সময় বিদ্যুৎ পরিবহন করে) প্রবেশ করান। যতক্ষণ না তারা থ্যালামাসে (মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় অংশের মধ্যে জোড়াযুক্ত ধূসর পদার্থ) পৌঁছান। যা নিউরোনাল তথ্যের একটি মূল অংশ। সীসাগুলোর প্রান্ত নিউরোস্টিমুলেটরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। মাথার হাড় সরিয়ে ৩.৫ সেমি বর্গক্ষেত্র এবং ০.৬ সেমি পুরু ডিভাইস বা নিউরোস্টিমুলেটর যন্ত্রটি ওরানের মাথার খুলির ফাঁকে স্ক্রুর সাহায্যে বসানো হয়েছিল। পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন মার্টিন টিসডাল বিবিসিকে বলেছেন, ‘আশা করা যায় গুরুতর মৃগীরোগের ক্ষেত্রে এটি একটি কার্যকর চিকিত্সা হতে যাচ্ছে এবং নতুন ধরণের ডিভাইসটি শিশুদের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর। আমরা আশা করছি এটি সম্ভাব্য জটিলতা কমিয়ে আনবে।’ এর মধ্যে রয়েছে অস্ত্রোপচারের পরে সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করা এবং ডিভাইসটি যোনো কাজ করে, সেটা নিশ্চিত করা। নিউরোস্টিমুলেটর যন্ত্রটি চালু করার আগে ওরানকে অপারেশনের ধকল থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য এক মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। এটি চালু হলে ওরান তা বুঝতে পারে না এবং টিভি দেখতে দেখতে বা অন্য কাজ করার সময় ওয়্যারলেস হেডফোনের মাধ্যমে ডিভাইসটি প্রতিদিন রিচার্জ করতে পারবে। জাস্টিন বলেছেন তার ছেলে ওরানের মৃগীরোগের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। দিনের বেলা তার খিঁচুনি হয় না এবং রাতেও খিঁচুনিও কম পরিসরে হয় এবং কম গুরুতর হয়। ওরান ‘ক্যাডেট’ নামে একটি প্রকল্পের অংশ। যেটি গুরুতর মৃগীরোগে আক্রান্ত রোগীদের মস্তিষ্কের গভীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং এর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার একটি সিরিজ পরীক্ষা।’ এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছে গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতাল, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, কিংস কলেজ হাসপাতাল এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ‘পিকোস্টিম নিউরোট্রান্সমিটার’ যুক্তরাজ্যের কম্পানি অ্যাম্বার থেরাপিউটিকস তৈরি করেছে। মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক সংকেতের অস্বাভাবিক কার্যকলাপের কারণে মৃগী রোগের খিঁচুনি শুরু হয়। নতুন এই যন্ত্রটি অবিরাম বৈদ্যুতিক স্পন্দন পাঠিয়ে অস্বাভাবিক সংকেতগুলোকে থামিয়ে দেয় বা ব্যাহত করতে সাহায্য করে। সূত্র : বিবিসি