আইন সংশোধনে ১৮ বছর পর ইসির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ২:০৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৩

২০ জানুয়ারি ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন সংক্রান্ত আইন পাশের ১৮ বছর পর সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিদ্যমান আইনের ১০টি ধারা-উপধারায় সংশোধনী এনে একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সঙ্গে মিল রেখে ওই খসড়া আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ৪৫ দিনের পরিবর্তে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান যুক্ত হচ্ছে।

রোববার অনুষ্ঠেয় কমিশন সভায় খসড়া আইনটি অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে। ওই বৈঠকে এজেন্ডায় না থাকলেও দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প পাশ না হওয়ার বিষয়টিও আলোচনা হতে পারে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা পদত্যাগ করায় জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসন-৫০ শূন্য হয়। ওই আসনে উপনির্বাচনের আয়োজন করতে গিয়ে এ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ অবস্থায় দ্রুত আইনের খসড়া তৈরির পর, রোববারই কমিশনের সভা ডাকা হয়েছে। সভার একমাত্র এজেন্ডাই হচ্ছে এ আইনের খসড়া অনুমোদন।

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার নেতৃত্বাধীন আইন সংস্কার কমিটি একটি খসড়া আইন প্রস্তুত করেছে। কমিশন সভায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে এ কমিটি। সেখানে অনুমোদনের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এ আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

জানা গেছে, জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইনটি ২০০৪ সালের ৮ ডিসেম্বর পাশ হয়। সর্বশেষ ২০০৫ সালে এ আইন সংশোধন করা হয়। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ হয়।

ওই সংশোধনীর ফলে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০টিতে উন্নীত হয়। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ২৩ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হয়। এসব বিষয় এ আইনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হলেও এত বছরেও আইনটি সংশোধন করেনি ইসি।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সাত সংসদ-সদস্য পদত্যাগ করেন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য ছিলেন। ৬টি সংসদীয় আসনে ১ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ওইসব আসনে যে রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, সেই দলটি ওই সংরক্ষিত আসনের অধিকারী হবে।

আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য হিসাবে ইসি বলছে, সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের (৩) দফার অধীনে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনগুলো আনুপাতিক হারে বণ্টন এবং বণ্টনকৃত আসনে নির্বাচন পদ্ধতি নির্ধারণ ও অন্যান্য বিধান করার জন্য এ সংশোধন আনা হচ্ছে। ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সংখ্যা ৫০টি নির্ধারণ করা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, খসড়ায় বিদ্যমান আইনের ১০টি ধারা-উপধারায় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ধারা-উপধারাগুলো হচ্ছে- ২(ক), ৩(২), ৩(৭), ৪(৫), ৪(৬), ৫(৪), ৬(২), ৯, ২৭ ও ৩০(১)। ধারা ২(ফ) ও ৩(৭) সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ২৩ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ দুটি উপধারা ওই তফসিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কারণে দুটি উপধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। খসড়ায় ৩(২), ৫(৪) ও ৬(২) উপধারা বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে পাশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে চতুর্থ তফসিলের ২৩ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হওয়ায় ওই তিনটি উপধারা অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রচলিত হয়ে পড়েছে। আর জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বেড়ে ৫০টি হওয়ায় ধারা ৪(৫) ও ৪(৬) সংশোধনী আনা হচ্ছে। এ দুটির ধারার সঙ্গে আইনের প্রথম তফসিলটিও পুরোপুরি নতুন করে সাজানো হয়েছে। ওই তফসিলে জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও জোটভিত্তিক আসন অনুযায়ী কীভাবে সংরক্ষিত আসনের ভাগাভাগি হবে তার বর্নণা গাণিতিকভাবে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ধারা-২৭ সংশোধন করে সংরক্ষিত আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। বর্তমানে এ সময়সীমা ৪৫ দিন উল্লেখ রয়েছে।

এজেন্ডার বাইরে ইভিএম নিয়ে আলোচনা : ইসির একাধিক সূত্র জানায়, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে দুই লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প পাশ না হওয়ার বিষয়টি কমিশন সভায় উঠতে পারে। এজেন্ডার বাইরে বিবিধ হিসাবে এটি আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে ইসি তার অবস্থানও পরিষ্কার করবে-কমিশনে এমনটি আলোচনা চলছে।

বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরও এমন তথ্যই জানিয়েছেন। নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্প এখনো অনুমোদন পায়নি। তবে লেটেস্ট কী অবস্থায় আছে তা এখনো পরিকল্পনা কমিশন থেকে আমাদের জানায়নি, আমিও জানি না। তবে কমিশন সভায় এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যদিও এটি এজেন্ডাভুক্ত নয়, তবু আলোচনা হতে পারে। আলোচনা হলে একটা সিদ্ধান্ত হতে পারে।