কুমিল্লা বিমানবন্দরসহ দেশের ৭টি বিমানবন্দর নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩ কুমিল্লা বিমানবন্দরসহ দেশের ৭টি বিমানবন্দর নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কুমিল্লা বিমানবন্দর ছাড়া বাকি বিমানবন্দরগুলো হলো -ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, বগুড়া, শমসেরনগর ও তেজগাঁও বিমানবন্দর। দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের বিকাশ ও যাত্রী পরিবহণ বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। কুমিল্লাবাসী দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা বিমানবন্দর চালুর জন্য দাবি জানিয়ে মানববন্ধন,স্মারকলিপি প্রদান ও মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ এবং বিভিন্ন বিমান পরিবহন কোম্পানীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে আসছিলো। প্রতিদিন কুমিল্লা বিমানবন্দরের ভিওআর সিগন্যাল ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক রুটের ৩৫ থেকে ৪০টি বিমান। এতে মাসে ৩০ লাখ টাকার মতো আয় করছি। এ বিমানবন্দরে সবকিছুই আছে। অথচ শুধু উদ্যোগের অভাবে এখানে বিমান উঠানামা করে না। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লা ইপিজেড স্থাপনের সময় স্টল বিমান সুবিধা প্রদানের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সে ওয়াদা পূরণ হলে কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগ বাড়তো এবং আশপাশের দেশে কুমিল্লা থেকেই মানুষ বিমানে ভ্রমণ করতে পারতেন। ২০১০ সালে ২৯ এপ্রিলে কুমিল্লা বিমানবন্দর চালুর দাবিতে আন্দোলনের উদ্যোক্তা দৈনিক কুমিল্লার কাগজ সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয় জানান, কুমিল্লা বিমানবন্দরটি চালু অবস্থায় আছে। শুধু রানওয়ে কার্পেটিং করলে এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করলেই এখানে ছোট বিমান বিমান উঠানামা সম্ভব। কুমিল্লা থেকে কোলকাতা, চেন্নাই, দিল্লি, নেপাল, মালদ্বীপ, দুবাই ও কাতারে ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এটি অপরিহার্য। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই কুমিল্লা বিমানবন্দরসহ দেশের ৭টি বিমানবন্দর নতুন করে চালু করা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাজ শুরু হয়েছে। বেবিচকের ২০৩০ সালের কর্মপরিকল্পনা এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। আরও জানা গেছে, বর্তমানে এই বিমানবন্দরগুলোর কোনোটিতেই বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করছে না। দৈনিক যুগান্তরের খবরে জানা গেছে, কয়েকটি রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার দখলে। অনেকগুলো বিমানবন্দরের রানওয়েতে গরু-ছাগলসহ গবাদি পশু অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো কোনো বিমানবন্দরের চারদিকে বাউন্ডারি দেওয়ালসহ কোনো ধরনের নিরাপত্তা চৌকি নেই। রানওয়েতে ক্রিকেট খেলেন স্থানীয়রা। আবার কোনো কোনো রানওয়েতে জšে§ছে বড় গাছ। ঘাস বড় হওয়ায় অনেক রানওয়েও দেখাও যায় না। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত থাকায় রানওয়ের শক্তি পিসিএন (পেভমেন্ট ক্ল্যাসিফিকেশন নাম্বার) নষ্ট হয়ে গেছে। আর সংস্কার না করায় ও পানি জমে যাওয়ায় কোথাও কোথাও রানওয়ের পিস ঢালায় ও ব্লক ভেঙে গেছে। বেবিচকের পিএন্ডডিকিউ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে ২৮টি বিমানবন্দর রয়েছে। এগুলো ব্রিটিশ সরকারের আমলে তৈরি। সব বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফুটের মধ্যে। রানওয়েগুলো বর্তমানে যাত্রীবাহী বিমান পরিচালনায় অনুপযুক্ত। পর্যায়ক্রমে এই রানওয়েগুলোর দৈর্ঘ্য ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার ফুটে উন্নীত করার টার্গেট আছে বেবিচকের। এছাড়া রানওয়ের পিসিএন ৩০ থেকে ৬০ ফুট করার টার্গেট আছে। তাহলে এটিআর কিংবা ড্যাস-৮ কিউ ৪০০ মডেলের ছোট ছোট যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করা সম্ভব হবে। জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, ঈশ্বরদী বিমানবন্দর মেরামত ও সংস্কারের পর পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ কাজের ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কাজ চলছে। এছাড়া সারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। শিল্প কারখানার পাশাপাশি দেশব্যাপী পর্যটন খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। একের পর এক মেগা প্রকল্প, অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এসব কারণে নতুন নতুন বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কুমিল্লা বিমানবন্দর ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে চালু ছিল। ১৯৯৪ সালে এটি পুনরায় চালু করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় দুই সপ্তাহের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ অঞ্চলে দ্রুত শিল্পায়নের ফলে বিমান চলাচলের চাহিদা বদলেছে। তাছাড়া এ জেলায় একটি ইপিজেড থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা রাজধানী থেকে সহজে সেখানে যেতে পারেন না। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ৯০-এর দশকে যখন কুমিল্লা বিমানবন্দর ফ্লাইট স্থগিত করেছিল, তখন যানজট বলতে কিছুই ছিল না। কিন্তু এখন তিন ঘণ্টা সময়েও ঢাকা থেকে সড়কপথে কুমিল্লা পৌঁছানো যায় না। অথচ ফ্লাইটে মাত্র ২৫ মিনিটে কুমিল্লা যাতায়াতের সুবিধা মিলবে। বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু হলে চাঁদপুর ও ফেনী অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার আরও ভালো সংযোগ তৈরি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে ১৭-১৮ আসন বিশিষ্ট বিমানগুলো ঢাকা-বগুড়া এবং ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে বাণিজ্যিকভাবে চালু করা যেতে পারে। এতে করে ১০-১১ জন যাত্রী নিয়েও একটি ফ্লাইট কোনোরকম লোকসান ছাড়াই চলাচল পারবে। কুমিল্লা বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আবদুল গণি বলেছেন, প্রতিদিন আমাদের সিগন্যাল ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক রুটের ৩৫ থেকে ৪০টি বিমান। এতে মাসে ৩০ লাখ টাকার মতো আয় করছি। এ বিমানবন্দরে সবকিছুই আছে। শুধু উদ্যোগের অভাবে এখানে বিমান উঠানামা করে না। বর্তমানে আমাদের এখানে ২০ জন কর্মরত রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে একটু উদ্যোগ নিলেই বিমানবন্দরটি সচল করা সম্ভব। এজন্য রানওয়ে মেরামতসহ কিছু কাজ করতে হবে। পাশাপাশি আরও ২০-২২ জন লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। আমরা চাই দ্রুত বিমানবন্দরটি চালু হোক। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা, ব্যবস্থাপনা, যন্ত্রপাতি, জনবল থাকার পরও শুধু উদ্যোগের অভাবে তিন যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে কুমিল্লা বিমানবন্দর। কুমিল্লা বিমান বন্দর পুনরায় চালু এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচলের দাবিতে ২০১০ সালের ২৯ এপ্রিল কুমিল্লার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা, সাংবাদিক ও সর্বস্তরের জনগণ ইতোমধ্যে মানবন্ধনসহ নানা কমৃসূচি পালন করে। কুমিল্লা বিমান বন্দর সূত্রে জানা যায়- কুমিল্লা বিমানবন্দর এখনো চালু অবস্থাতেই আছে। শুধু বিমান ওঠা নাম করে না। এ বিমান বিন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী সব বিমানকে আশাপথের সিগন্যাল দেয়া হয়। আর এ কাজ করে কুমিল্লা বিমান বন্দর প্রতি মাসে আয় করে বিপুল পরিমান অর্থ। কুমিল্লা বিমান বন্দরে নেভিগেশন ফ্যাসিলিটিজ, কন্ট্রোল টাওয়ার, ভিইচএফ সেট, এয়ার কমিউনিকেশন, যন্ত্রপাতি, ফায়ার স্টেশন, ফায়ার সার্ভিসহ সব সুবিধা রয়েছে। এদিকে কুমিল্লা বিমান বন্দর চালুর বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মুজিবুল হক মুজিব, স্থানীয় সংসদ সদস্য নাসিমূল আলম চৌধুরী নজরুল বিমান বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা বিমান বন্দরটি চালুর বিষয়ে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবেন বলে সে সময় আশ্বাস প্রদান করেন। এরপর বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক মি. ওকে চৌধুরী কুমিল্লা এলে জিএমজির ফ্লাইট চালুর ব্যাপারেও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বাংলাদেশে ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ৫টি অভ্যন্তরীণ বিমান বন্দর এবং ৭টি সট টেক অব ল্যান্ড ল্যান্ডিং (স্টক) বিমান বন্দর রয়েছে। এই ৭টি বিমান বন্দররের মধ্যে কুমিল্লা বিমানবন্দরটি একটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্দের সময় নির্মাণ করা কুমিল্লা বিমান বন্দর থেকে ১৯৭৬ সালে আগ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল করেছিল। কুমিল্লার অনেক যাত্রী ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিবিন্ন স্থানে যাতায়াত করেছেন বিমানের মাধ্যমেই। কিন্তু ১৯৮৬ সালের পর কুমিল্লা বিমানবন্দর থেকে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্টল বিমান সার্ভিস সুবিধাসহ কুমিল্লা বিমান বন্দর এলাকার পাশে রফতানি প্রক্রিয়াজাতরকরণ অঞ্চল করে। SHARES জাতীয় বিষয়: