অস্ট্রেলীয় নারীর মস্তিষ্কে ৩ ইঞ্চি লম্বা জীবন্ত কৃমির সন্ধান

প্রকাশিত: ৮:১৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২৩

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘বিশ্বে প্রথমবারের মতো’ অস্ট্রেলীয় এক নারীর মস্তিষ্কে আট সেন্টিমিটার বা তিন ইঞ্চি লম্বা জ্যান্ত একটি কৃমি পাওয়া গেছে। ক্যানবেরা শহরে গত বছর ওই রোগীর মস্তিষ্কের সম্মুখ ভাগে অস্ত্রোপচারের সময় ‘সুতার মতো দেখতে’ কৃমিটি বের করে আনা হয়। ডা. হারি প্রিয়া বানডি, যিনি অস্ত্রোপচার করেছিলেন, তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই এমনটি ধারণা করিনি। সবাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল।

ডাক্তাররা জানান, ৬৪ বছর বয়সী ওই নারী বেশ কিছুদিন ধরে একসঙ্গে ‘অস্বাভাবিক কয়েকটি উপসর্গে’ ভুগছিলেন—পেটে ব্যথা, কাশি, রাতের বেলায় অতিরিক্ত ঘাম। সেই সঙ্গে তার স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছিল এবং অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলেন।

ডাক্তাররা মনে করছেন, কৃমিটি ওই নারীর মস্তিষ্কে দুই মাসের মতো ছিল।

গবেষকরা সাবধান করছেন, এ ঘটনা জীবজন্তু থেকে মানুষের শরীরে রোগবালাই এবং সংক্রমণ ছড়ানোর মতো বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ক্যানবেরা হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসক ডা. সঞ্জয় সেনানায়েকে বলেন, ‘সার্জন যখন চিমটি দিয়ে অস্বাভাবিক বস্তুটি বের করে আনলেন এবং দেখা গেল সেটি লাল রঙের আট সেন্টিমিটার লম্বা একটি কিলবিলে পোকা, তখন অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত বাকি সবাই হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন।’

ডা. সঞ্জয় বলেন, ‘মানুষের শরীরে এ ধরনের সংক্রমণের কোনো তথ্য-প্রমাণ আগে কখনো ছিল না।’

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ওই নারী হয়তো তার বাড়ির কাছে একটি লেকের কাছে ওয়ারিগল গ্রিনস নামের এক প্রজাতির ঘাস তোলার সময় ওই কৃমিতে সংক্রমিত হয়েছিলেন। এমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজ নামে এক মেডিক্যাল সাময়িকীতে অস্ট্রেলিয়ার রোগজীবাণু বিশেষজ্ঞ মেহরাব হোসেন লিখেছেন, ওই নারী হয়তো ঘাসের ওপর পাইথনের মল ও তার মধ্যে থাকা ওই কৃমির ডিমের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন।

ডা. হোসেন লিখেছেন, ‘অফিডসকারিস লার্ভা বা কীটের মানুষের মস্তিষ্কে ঢুকে পড়ার কথা এর আগে জানা যায়নি।’ তিনি বলছেন, মানুষের দেহে এই লার্ভা ঢুকে টিকে থেকে ক্রমে বড় হওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর আগে গৃহপালিত ভেড়া, কুকুর ও বিড়ালের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে তাদের দেহে লার্ভার টিকে থাকা ও পূর্ণতা পাওয়ার কোনো নমুনা দেখা যায়নি।

ড. সেনানায়েকে, যিনি একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) মেডিসিন বিভাগের একজন অধ্যাপক, তিনি বলেন, এ ঘটনা একটি সতর্কসংকেত।

এএনইউর একটি গবেষক দল জানিয়েছে, গত ৩০ বছরে ৩০টি নতুন ধরনের সংক্রামক রোগ আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোর তিন-চতুর্থাংশই জুনোটিক, অর্থাৎ জীবজন্তুর দেহ থেকে রোগজীবাণু মানুষকে সংক্রমিত করছে।

দলটি বলেছে, ‘এ থেকে প্রমাণ হয় যে মানুষের সংখ্যা যত বাড়ছে, আমরা জীবজন্তুর আবাসস্থলের আরো কাছাকাছি চলে যাচ্ছি। বারবার এটি দেখা যাচ্ছে, সেটি নিপা ভাইরাস হোক—যেটি বাদুড় থেকে শুকরের দেহ হয়ে মানুষের শরীরে ঢুকেছে, অথবা সেটি সারস বা মারসের মতো ভাইরাস, যেগুলো বাদুড় থেকে অন্য কোনো প্রাণীর দেহ হয়ে মানুষের শরীরে ঢুকেছে।’

‘যদিও কভিড এখন ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে, তার পরও বিজ্ঞানীদের ও সরকারগুলোর উচিত সংক্রামক রোগের বিস্তারের ওপর কড়া নজর রাখা।’

সূত্র : বিবিসি