বিএফ.৭ শনাক্ত হলো চীন থেকে আসা এক যাত্রীর

প্রকাশিত: ৩:২১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০২৩

 ০২ জানুয়ারি ২০২৩

চীন থেকে বাংলাদেশে আসা এক ব্যক্তির শরীরে ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএফ.৭ শনাক্ত হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নাজমুল ইসলাম জানান, বিএফ.৭ আক্রান্ত একজনসহ করোনা আক্রান্ত চীনা নাগরিকের প্রত্যেকেই সুস্থ আছেন। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। পরবর্তী শারীরিক পরিস্থিতি জানার জন্য এক সপ্তাহ পর ফের পরীক্ষা করা হবে। তবে আশা করা যাচ্ছে, শরীরের প্রাকৃতিক ইমিউনিটি গ্রোআপে তারা দ্রুতই নতুন উপধরন-মুক্ত হয়ে যাবে।

নতুন ধরন প্রসঙ্গে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন উপধরন নিয়ে আমরা ভীত নই। আমরা চাই না কেউ করোনা সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কিত হোক, কারণ আমাদের সংক্রমণের হার বর্তমানে ১ শতাংশেরও কম। তবে নতুন উপধরনকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি। সংক্রমণের হার যেন কোনোভাবেই বাড়তে না পারে, আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ তবে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং করোনা টিকার বুস্টার ও চর্তুথ ডোজ নিলে করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

বিএফ.৭ না ছড়ানো প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বর্তমান উদ্যোগ কী-এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, ‘নতুন উপধরনকে আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমিত দেশগুলো থেকে যারা আসছেন, তাদের নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। পরীক্ষায় যাদের নমুনা পজিটিভ পাচ্ছি, তাদের আইসোলেটেড (বিচ্ছিন্নকরণ) করছি, আরটিপিসিআর টেস্ট করছি। এই কার্যক্রমগুলো আমাদের নিয়মিত চলছে।’

এ বিষয়ে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, দেশে ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএফ.৭-এর সংক্রমণ পাওয়া গেছে। প্রথম দফায় আসা চারজনের মধ্যে একজনের নমুনায় নতুন উপধরন পেয়েছি। আক্রান্ত ব্যক্তি আইসোলেশনে এবং সুস্থ রয়েছেন। বাকি তিনজনের মধ্যে দুজনের ওমিক্রন বিএ ৫.২ উপধরন এবং আরেকজনের বিএ ৫.২.১ উপধরন শনাক্ত হয়েছে।

২৬ ডিসেম্বর বিকালে চায়না ইস্টার্ন এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইটে ২০ চীনা নাগরিক ঢাকায় আসেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট পজিটিভ শনাক্ত হন তারা। বর্তমানে তাদেরকে মহাখালীর কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা যুগান্তরকে বলছেন, ভারত ও চীনের সঙ্গে অবাধ যোগাযোগ থাকায় বাংলাদেশ উচ্চসংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে চারজন সন্দেহভাজন রোগীও শনাক্ত হয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্টটিতে আক্রান্ত ব্যক্তি তার সংস্পর্শে আসা ১৮ জনকে সংক্রমিত করতে পারে। ফলে এটি অতিসংক্রামক। এ উপধরনটি এভাবেই চীনে বর্তমানে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। তাই নতুন উপধরনটির চিকিৎসায় সব হাসপাতালকে এখনই যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে।

আরও ১৭ রোগী শনাক্ত : এদিকে নতুন বছরের প্রথম দিন রোববার দেশে ১৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তবে এই সময়ে মৃত্যু হয়নি কারও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ১৩ জন রোগী শনাক্ত হয়। তাতে দিনে শনাক্তের হার বেড়ে ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ হয়েছে, যা আগের দিন শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ ছিল।

গত একদিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ১৬ জনই ঢাকার বাসিন্দা। এছাড়া রাজশাহীতে একজন নতুন রোগী মিলেছে। দেশের বাকি ৬২ জেলায় আর কারও দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েনি। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ১৪২ জন হয়েছে। মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতোই ২৯ হাজার ৪৪০ জন রয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় ৮৮ জন করোনা রোগীর সেরে ওঠার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৮২১ জন।