ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান

ইমনের শরীরে লাগে ৭৬টি ছররা গুলি

প্রকাশিত: ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪

ইমন আহমদের (৪২) শরীরে, মাথায় ৭৬টি ছররা গুলি লেগেছিল। এর থেকে ৪টি বের করা হয়েছে। এখন আছে ৭২টি। শরীর ও মাথায় গেঁথে থাকা এই ছররা গুলির কষ্ট নিয়ে বাড়িতেই এখন বসে, শুয়ে দিন কাটছে তাঁর। প্রায় এক মাস ধরে ব্যবসাকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে আছে। আরও এক মাসের আগে দোকানে ফেরা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন না তিনি।

ইমন আহমদের বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম দীঘলগজি গ্রামে। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। এখন এই সংসার চলছে বড় এক ভাই ও পরিচিতজনদের টুকটাক আর্থিক সহযোগিতায়। এদিকে শরীর থেকে সব কটি ছররা গুলি আদৌ বের হবে কি না, তা তাঁর জানা নেই।

মঙ্গলবার সকালে পাহাড়ি উঁচু–নিচু পথ মাড়িয়ে ইমন আহমদের বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল, তিনি ঘুম থেকে উঠেছেন। ঘুমের আমেজ তখনো চোখেমুখে লেগে আছে। টিলার ওপর টিনের তৈরি আধাপাকা বাড়ি। শরীরভরা গুলি নিয়ে বাড়িতেই এখন তাঁর সময় কাটছে।

ইমন জানিয়েছেন, গত ৪ আগস্ট অন্যান্য দিনের মতো বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি তাঁর কাজের স্থানে যান। মৌলভীবাজার শহরতলির চাঁদনীঘাটে তাঁর গাড়ি মেরামতের একটি দোকান আছে। ওই দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মৌলভীবাজার শহর উত্তাল হয়ে উঠেছিল। তিনি আর চুপ থাকতে পারেননি। আন্দোলনে শরিক হন।

৪ আগস্ট দুপুর দুইটার দিকে ইমন মৌলভীবাজার শহরের টিসি মার্কেট এলাকায় যান। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আবার চাঁদনীঘাটের দিকে ফিরে আসেন। বিকেল ৪টার দিকে ছাত্রদের সঙ্গে টিসি মার্কেট এলাকায় গেলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করে। এরপর ছররা গুলি ছুড়তে থাকে। ধাওয়া খেয়ে আন্দোলনকারীরা চাঁদনীঘাটের দিকে সরতে থাকেন। এ সময় পুলিশ প্রায় কাছাকাছি অবস্থান থেকে গুলি করায় তাঁর শরীরে অনেকগুলো ছররা গুলি লাগে।

ইমনকে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান আশপাশের লোকজন। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। ৬ আগস্ট উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখান থেকে রাতে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরের দিন তিনি মৌলভীবাজারে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। ২০ আগস্ট আবার তাঁকে নিয়ে ভর্তি করা হয় সিলেটের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর পিঠ ও মাথায় ৭৬টি ছররা গুলি থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে চারটি ছররা গুলি বের করা হয়েছে। ৭২টি ছররা গুলি পিঠ ও মাথায় আটকে আছে। পিঠের ডান দিক এবং মাথার ডান-বাম দুই দিকেই ছররা গুলি আছে।

কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না বলে দাবি ইমন আহমদের। তবে করোনায় মারা যাওয়া রোগীর লাশ দাফনের জন্য করা সংগঠন তাকরীম ফাউন্ডেশনের একজন সদস্য তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা কাম (কাজ) করি। সবাই মিল-মহব্বত লইয়া (নিয়ে) এলাকায় থাকি। আমরা চাই এ রকম সবাই মিলেমিশে থাকতাম। হিংসা, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ; এটা ঠিক না। হিন্দু-মুসলিম বলে কিছু নেই। সবাই এক দেশের মানুষ।’ তিনি চান, গুলি খাওয়ার পর এখন তিনি একজন অসুস্থ মানুষ। তাঁর সন্তানেরা যেন পড়ালেখা করে চাকরি-বাকরি করতে পারে, এমন একটা ব্যবস্থা করা হোক, এটুকুই সরকারের কাছে চাওয়া।