সমুদ্রগামী জাহাজ কেনার সুদিন

প্রকাশিত: ৮:৫৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
 নিজস্ব প্রতিবেদক

আর দুটি সমুদ্রগামী জাহাজ নিবন্ধিত হলেই বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা শতক পূর্ণ হবে। এরই মধ্যে ৯৯টি জাহাজ নিবন্ধন নিয়েছে, এর মধ্যে ৯৭টি জাহাজ বিশ্বের বিভিন্ন বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন করছে। কার্যক্রম চলছে আরো একাধিক জাহাজ নিবন্ধনের। সেটি চূড়ান্ত হলে শততম সমুদ্রগামী জাহাজের মাইলফলক গড়বে বাংলাদেশ।

জানতে চাইলে নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ  বলেন, ৯৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ নিবন্ধন হয়ে গেছে।

এর মধ্যে ৯৭টি জাহাজ পণ্য পরিবহন করছে। দুটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই শততম জাহাজের নিবন্ধন হবে, এর মাধ্যমেই আমরা শত জাহাজের মাইলফলক পূর্ণ করব। তবে এরই মধ্যে একটি জাহাজ স্ক্র্যাপ বা ভেঙে ফেলার কারণে জাহাজের সংখ্যা এখন ৯৮ হয়েছে।
 

তিনি বলেন, সমুদ্রগামী জাহাজ কেনার এখন সুবর্ণ সময়। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা খুবই উৎসাহী। মূলত নীতিগত সহায়তা, সরকারি প্রণোদনা, করছাড়, দেশি জাহাজে পণ্য পরিবহনে বাড়তি সুবিধা দেওয়াসহ নানা কারণে জাহাজ কেনায় আগ্রহ বেড়েছে। এখন সময় এসেছে সেটির সুফল লুফে নেওয়ার।

জানা গেছে, করোনা মহামারির শুরুতে বিশ্বের সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালন ব্যবসায় চরম দুর্দিন নামে।

অনেকেই জাহাজ স্ক্র্যাপ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগটি লুফে নিয়ে একে একে ৩২টি জাহাজ নিবন্ধন করেন। মূলত সেই সময় থেকে সরকারের নীতি সহায়তা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জাহাজ মালিক হতে বেশ সহযোগিতা করেছে। এখন আবারও সেই সুযোগ এসেছে। 

জানতে চাইলে সাইফ মেরিটাইম লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ জহীর  বলেন, ‘এখন বিশ্বের জাহাজ পরিচালন ব্যবসায় মন্দা চলছে। জাহাজ ও কনটেইনার পর্যাপ্ত থাকলেও পণ্য পরিবহন চাহিদায় ব্যাপক ধস নেমেছে। এতে জাহাজভাড়া একেবারেই কমে গেছে। আর এই দুর্দশা কাটাতে অনেকেই জাহাজ বিক্রি করে দিচ্ছেন। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’

নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, বর্তমানে বাংলাদেশি সচল সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ৯৮। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জাহাজের মালিক চট্টগ্রামভিত্তিক কেএসআরএম গ্রুপ। এসআর শিপিং নামেই তারা ২৫টি জাহাজ নিবন্ধন করেছে। তাদের আরো একাধিক জাহাজ কেনা প্রক্রিয়াধীন।

জানতে চাইলে কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাহাজ পরিচালন ব্যবসায় বিশ্বজুড়েই মন্দার কারণে জাহাজের দাম কমেছে। এখন সেই জাহাজ কেনার জন্য আমরা আগ্রহী। এ জন্য সরকারকে ঋণপত্র খোলাসহ এই প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে দ্রুত জাহাজের নিবন্ধন ও কেনা সম্পন্ন হবে।’

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মেঘনা গ্রুপের নিবন্ধিত জাহাজ আছে ২২টি, আকিজ গ্রুপের আছে ১০টি, এইচআর লাইন অর্থাৎ কর্ণফুলী গ্রুপের আছে ৯টি; তাদের সব জাহাজই কনটেইনার। সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ আছে সাতটি, বসুন্ধরা গ্রুপের আছে ছয়টি, ভ্যানগার্ড শিপিংয়ের আছে ছয়টি, বিএস শিপিংয়ের তিনটি, ডুরিয়া শিপিংয়ের দুটি, হানিফ মেরিটাইমের দুটি, ওরিয়ন গ্রুপের একটি, মবিল-যমুনা গ্রুপের একটি, পিএনএন শিপিংয়ের একটি, অ্যাডভান্সড শিপিংয়ের একটি, ডরিন শিপিংয়ের একটিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জাহাজ আছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ৯৮। এর মধ্যে ২০১৮ সালে নিবন্ধিত ৯টি, ২০১৯ সালে ১৩টি, ২০২০ সালে ১৫টি, ২০২১ সালে ১২টি ও ২০২২ সালে ১৭টি। নিবন্ধিত বেশির ভাগ জাহাজই ১৮ থেকে ২০ বছরের পুরনো। তবে ৩০ বছরের পুরনো জাহাজও পণ্য পরিবহন করছে।

ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, এখন ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন জাহাজ কেনার আগ্রহ বেড়েছে। সেই আগ্রহকে বাস্তব রূপ দিতে সরকার সে ক্ষেত্রে প্রণোদনা বাড়াতে পারে। এতে সমুদ্রগামী জাহাজ ব্যবসা নতুন রূপ পাবে; শিল্প টেকসই হবে।