বড় মশকরা হচ্ছে : হাসনাত আবদুল্লাহ

উপদেষ্টাদের নিয়ে ক্ষোভ ছাত্রদের

প্রকাশিত: ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্র-জনতার মতামত না নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করে- এমন কাউকে উপদেষ্টা পরিষদে মেনে নেওয়া হবে না বলেও এসব বিক্ষোভ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, সবচেয়ে বড় মশকরা হচ্ছে ছাত্রদের সঙ্গে। ছাত্রদের রক্তের ওপর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন হচ্ছে।

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, জুলাই-আগস্টে যে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে, আহত হয়েছে তাদের চাওয়া বা আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থি ব্যক্তিদের আমরা উপদেষ্টা পরিষদে দেখতে চাই না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা একযোগে এই কর্মসূচি পালন করেন।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার সঙ্গে মশকরা করা হচ্ছে। ছাত্রদের রক্তের ওপর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন হচ্ছে। ধানমন্ডির ৩২ কে যারা কাবা মনে করে তাদের উপদেষ্টা করা হয়েছে। কার মদতে, প্রশ্রয়ে আওয়ামী পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আমরা তা জানতে চাই। ফ্যাসিবাদের যারা দোসর, ’২৪ পরবর্তী         বাংলাদেশে কোনো ফরম্যাটেই তাদের দেখতে চাই না। উপদেষ্টা হিসেবে যাদের নিয়োগ দিচ্ছেন গত ১৬ বছরে তারা কী করেছেন তার ইতিহাস আমরা জানতে চাই। নতুন যাদের উপদেষ্টা বানানো হয়েছে দেশের জন্য তাদের অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ৫ জুন থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের সবচেয়ে বড় আইরনি হলো তিন মাস পরেও হাসিনার বিচার চাইতে হয়। ধানমন্ডি ৩২ কে আদর্শ মনে করা লোকদের উপদেষ্টা দেওয়া হয়। আমরা খুনি হাসিনাকে উৎখাত করেছি, তার লিগ্যাসি রক্ষা করার জন্য না। আমাদের প্রতিবাদের মুখে গণভবন থেকে মুজিবের ছবি সরানো হয়েছে। যাদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের দূরতম সম্পর্ক রয়েছে তাদের সরকারে দেখতে চাই না।

 

গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। পরে মিছিলটি ভিসি চত্বরে গিয়ে সমাপ্ত হয়। বিক্ষোভে বিতর্কিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবি জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই-আগস্টে ফেসবুকে ২/১টা পোস্ট দিয়েই উপদেষ্টা হয়ে যাচ্ছেন। ভারতের দালালি করা ব্যক্তিরাও ডাক পাচ্ছেন বঙ্গভবনে, যেটি অভ্যুত্থানের সঙ্গে বেইমানি। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হলো সেটি স্পষ্ট করার আহ্বানও জানান তারা। বিক্ষোভে উত্তরবঙ্গের কোনো জেলার কেউ উপদেষ্টা নিয়োগ না পাওয়ার সমালোচনাও করেন আন্দোলনকারীরা। এমন নিয়োগ ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ছাত্র-জনতার অংশীদারিবিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল নগরীর তালাইমারীতে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরী বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের গণ অভ্যুত্থানসহ সব আন্দোলনে ছাত্রজনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। কিন্তু বারবার ছাত্র-জনতার সঙ্গে বেইমানি হয়েছে। কিন্তু এবার আর প্রতারিত হতে চাই না। ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরকারে রেখে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চালু করা হচ্ছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। আমরা কোনো সরকারের অংশ নই। আমরা জুলাই অভ্যুত্থান ও শহীদদের প্রতি দায়বদ্ধ।