যে কারণে ‘গ্রেপ্তার’ হয়েছিল পাকিস্তানের এই বটগাছ

প্রকাশিত: ৬:০৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিনিধি

পাকিস্তানের পেশোয়ারের ‘চেইনড ট্রি’, গাছটি ১৮৯৮ সাল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া অবস্থায় রয়েছে। নিজের স্থান থেকে দূরে সরে যাওয়ার অপরাধে এক মাতাল ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা বটগাছটিকে শিকল দিয়ে বেঁধে প্রেপ্তার করেছিলেন। ১২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ধাতব শিকলটি এখনও বটগাছটির চারপাশে জড়িয়ে আছে।

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ কর্মকর্তা জেমস স্কুইড এই উদ্ভট গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।

ঘটনাটি ঘটে পাকিস্তানের তুরখান সীমান্তের কাছে ল্যান্ডি কোটাল শহরে। জেমস স্কুইড ঘটনার দিন মাতাল অবস্থায় ছিলেন, তখন তাঁর মনে হয়েছে বটগাছটি তাঁর কাছ থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং সে গাছটির কাছে যাওয়ার জন্য লড়াই করছে। অবশেষে স্কুইড গাছটিকে মাটিতে শিকল দিয়ে আটকে রাখার নির্দেশ দেন। সেই চেইনগুলো তখন থেকে এখনো রয়ে গেছে।
যা কৌতূহলী পর্যটকদের গ্রেপ্তারের গল্পটি বলে আসছে। 

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করলেও বটগাছটি স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি। গাছের ওপর একটি বোর্ডে এখনও লেখা আছে, ‘আমি গ্রেপ্তার হওয়া অবস্থায় আছি। এক সন্ধ্যায় ব্রিটিশ এক কর্মকর্তা মাতাল ছিলেন।

তিনি ভেবেছিলেন আমি আমার আসল অবস্থান থেকে দূরে সরে যাচ্ছি এবং মেস সার্জেন্টকে নির্দেশ দেন আমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য। এরপর থেকে আমি গ্রেপ্তার।’ গাছটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ল্যান্ডি কোটাল সেনানিবাসের মাঠে রয়েছে। 

২০১৮ সালে তুর্কির আনাদোলু এজেন্সি ঘটনাটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, লান্ডি কোটালের খোগিখিল উপজাতির প্রধান ৬০ বছর বয়সী ইসলাম খান শিনওয়ারি বলেছিলেন, “আমার দাদা ফতেহ খান শিনওয়ারি আমাকে বলেছিলেন, ব্রিটিশ সেনা অফিসার জেমস ছিলেন একজন নির্দয় ব্যক্তি।

যিনি ১৮৯৮ সালে এই গাছটিকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন।’ শিনওয়ারি আরো বলেছিলেন, বর্তমানে জায়গায় গাছটি রয়েছে তা তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। কিন্তু ওই সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তাঁর পরিবারের কাছ থেকে জোর করে কেড়ে জায়গাটি কেড়ে নেয় এবং সেখানে অফিসারদের মেস তৈরি করেছিলেন। 

একই প্রতিবেদনে স্থানীয় এক সাংবাদিক আবু জার খান আফ্রিদি বলেছিলেন, “গাছটি উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেছে। একবার ভাবুন, যদি একজন ব্রিটিশ কর্মকর্তা একটি গাছকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে পারে, তাহলে সেই যুগের মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হতো?” খাইবার এজেন্সির একজন আদিবাসী মুনসিফ খান বলেছেন, “আমি আমার বাবার কাছ থেকে শুনেছি, আমাদের আফ্রিদি উপজাতিরা এলাকাটি দখল করে নেয়। ব্রিটিশরা উপমহাদেশের মানুষের সঙ্গে কী আচরণ করত, তা আমাদের আগামী প্রজন্মকে দেখানোর জন্য গাছটিকে এই অবস্থায় রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা।”

বিতর্কিত অতীত থাকা সত্ত্বেও পেশোয়ারের ‘চেইনড ট্রি একটি’ গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক হিসেবে পরিচিত। যা এখন পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য এটি একটি আকর্ষণের জায়গা।