মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা নেই নতুন করে

প্রকাশিত: ৩:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২৩

১০ জানুয়ারি ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দেশগুলো থেকে নতুন করে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করছে না সরকার। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পৃথকভাবে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ল ফার্ম নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে বানোয়াট তথ্য দেন। তার ফলে কোনো ব্যক্তি বিশেষকে প্রভাবিত করতে পারে। আমরা মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছি। তবে আমাদের দুর্বলতা জানালে আমরা অবশ্যই পদক্ষেপ নেব। এ ক্ষেত্রে আমরা খুবই পজিটিভ। তিনি জানান, আমেরিকা যে ধরনের মূল্যবোধ ও নীতি বিশ্বাস করে, আমরাও একই ধরনের মূল্যবোধ ও নীতিতে বিশ্বাস করি। তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে বিশ্বাস করে, আমরাও সেটা বিশ্বাস করি। তবে আমাদের কোথাও গ্যাপ থাকতে পারে, দুর্বলতা থাকতে পারে। তারা যদি বন্ধু হিসাবে আমাদের সেটা বলে তাহলে আমাদেরই লাভ। আমরা যথাযথ অ্যাকশনও নিয়েছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন আরও বলেন-২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে বোমাবাজি, সন্ত্রাসের বিভীষিকা ছিল। তখন র‌্যাব হয়তো কিছু অতিরিক্ত করেছে। তবে গত কয়েক বছরে র‌্যাব বাড়তি কিছু করেনি। তাদের ম্যাচুরিটি হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কয়েকশ’ জনের প্রমোশন হয়নি। শাস্তিও হয়েছে। এখন তাদের জবাবদিহিতায় আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্য র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ধারাবাহিক যে সম্পর্ক, মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সে কারণে হয়তো কারও আগ্রহটা বাড়তি এবং বিশেষ বাড়তি আগ্রহে পানি ঘোলা করে মাছ শিকার করার উদ্যোগ নিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত। তিনি বলেন, তারা আশা করছিল ৯-১০ ডিসেম্বরের সময়ে আরেকটি নিষেধাজ্ঞা আসবে। ওই তারিখে তারা জনসভা ডেকেছিলেন। তারা লবিস্ট ও তাদের প্রপাগান্ডা মেশিনের ওপর নির্ভরশীল।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, কোথাও রাজনীতি করতে হলে জনগণের সমর্থন নিয়ে আসতে হবে। বিদেশি কারও সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি হয়নি কোনো দিন বা হবেও না। সাময়িক হয়তো কেউ সুবিধা পেয়েছেন। আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি-বিশেষ করে এক-এগারো পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে। কিন্তু সেটা স্থায়ী নয়।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপর গত বছর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ। একই প্রেক্ষাপটে বা অন্য কোনো কারণে চলতি বছরও সরকারি সংস্থা-ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা থেকে সদ্য শেষ হওয়া বছরের শেষ দিনে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রদূতদের চিঠির প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, পররাষ্ট্র সচিব একটি চিঠি দিয়েছেন। এটি আমাদের রুটিন কাজ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রথম ইচ্ছা থাকবে সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করছি। আগামীতে তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) যেসব প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসবেন তাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা হবে। তখন র‌্যাবের বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়াটা পরিষ্কার হবে। তিনি বলেন, সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ‘সিটি শাহীন’ নিহত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত করার জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। তারা সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে এর তদন্ত করেছে এবং সেই তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র সেটা ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে আমাদের দূত এরই মধ্যে সে দেশে সংশ্লিষ্টদের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, এ ঘটনায় ন্যায়বিচার হবে। এ ছাড়া যে পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।