প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর এবং দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০২৪ ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে বেইজিং পৌঁছেন। সফরকালে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং ও প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও চীনের ১৪তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াঙ হুনিন ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সর্বোপরি সাংগ্রিলা হোটেলে দুই দেশের কয়েক শ উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীর অংশগ্রহণে যৌথভাবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি) আয়োজিত ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। বর্তমান সরকার গঠনের পর সরকারপ্রধান হিসেবে গত মাসে ভারত সফর ছিল তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। আর চীন সফরটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। সফরের এই গুরুত্বই বলে দেয় বাংলাদেশের সঙ্গে ওই দুটি দেশের সম্কর্কের মাত্রা। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি করেন ১০ জুলাই সকালে। ওই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদি ছাড়াও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার প্রতি যেমন জোর দেওয়া হয়, তেমনি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে চীনের কার্যকর ভূমিকার প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গও উঠে আসে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীন ও বাংলাদেশ পারস্করিক অবস্থান ও স্বার্থ রক্ষা করে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করে। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং দুই দেশের সম্কর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক নবায়নসহ ২১টি দলিল এবং সাতটি ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। স্বাক্ষরিত নতুন দলিলগুলো হলো—১. ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সহায়তা শক্তিশালী করা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ২. ব্যাংকিং এবং ইনস্যুরেন্স নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; ৩. বাংলাদেশ থেকে চীনে তাজা আম রপ্তানির জন্য উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সম্কর্কিত (ফাইটোস্যানিটারি) উপকরণ বিষয়ক প্রটোকল; ৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতি সহায়তা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ৫. বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহায়তা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; ৬. ডিজিটাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ৭. বাংলাদেশে প্রকল্পে চায়না-এইড ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ বিষয়ক মিনিটস (কার্যবিবরণী); ৮. চীনের সহায়তায় ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু সংস্কার প্রকল্পের পত্র বিনিময়; ৯. নাটেশ্বর আর্কিওলজিকাল সাইট পার্ক প্রকল্পে চায়না-এইড কনস্ট্রাকশনের ফিজিবিলিটি স্টাডি বিষয়ক পত্র বিনিময়; ১০. চীনের সহায়তায় নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্প বিষয়ক পত্র বিনিময়; ১১. চিকিৎসাসেবা এবং জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; ১২. অবকাঠামো ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ১৩. গ্রিন অ্যান্ড লো-কার্বন উন্নয়ন সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ১৪. রেডিও এবং টেলিভিশন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; ১৫. চীনের মিডিয়া গ্রুপের ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মধ্যে পারস্করিক সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; ১৬. চীনের মিডিয়া গ্রুপ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ১৭. চিনহুয়া নিউজ এজেন্সি এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি; ১৮. চিনহুয়া নিউজ এজেন্সি এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি এবং ১৯. টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক। অন্যদিকে বন্যার মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য প্রদান এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝাতা স্মারক দুটি নবায়ন করা হয়। এ ছাড়া বৈঠকের পর চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ক যৌথ ফিজিবিলিটি স্টাডি, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রকল্পের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন ও ডাবল পাইপলাইনের মাধ্যমে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের ট্রায়াল-এর সমাপ্তি এবং দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি চুক্তির আলোচনা শুরু, শানদং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট শুরু এবং লুবান ওয়ার্কশপ নির্মাণ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এতগুলো দলিল স্বাক্ষর এবং নতুন পরিকল্পনার ঘোষণা আগামী দিনে দুই দেশের সম্কর্ককে আরো শক্তিশালী ও গভীর করবে। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী ১০ জুলাই বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই নেতার মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। শি চিনপিং জানান যে চীন বাংলাদেশকে অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ এবং বাণিজ্যিক ঋণ দিয়ে সহায়তা করবে। এ ব্যাপারে দুই দেশের কারিগরি কমিটি একসঙ্গে বসার জন্য শিগগিরই চীনের একটি টেকনিক্যাল কমিটি বাংলাদেশে আসবে। তিনি বাংলাদেশে আরো চীনা বিনিয়োগের আশ্বাস দেন। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে তিনি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতার কথাও বলেন। শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যকার সম্কর্ক গভীর করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং চীনকে ব্যবধান হ্রাস করার আহ্বান জানান। চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ থেকে আরো পণ্য আমদানি করার কথা জানান। কারিগরি সহায়তা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কৃষি খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার আশ্বাস দেন তিনি। শি চিনপিং আরো বেশি করে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। চীনের প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, চীন ও বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করবে। ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিতে চীনের সমর্থনের কথাও তিনি জানান। রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি বলেন, মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি চীন ও বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাসী, বিশ্বের সর্বত্র শান্তি চায়। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, যেমনটি প্রেসিডেন্ট শি বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন আন্তরিকভাবেই এগিয়ে আসবে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। সাংগ্রিলা হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সুবিধা’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অবকাঠামো, জ্বালানি ও লজিস্টিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগের উল্লেখ করে রিয়েল এস্টেট, সেবা, তথ্য-প্রযুক্তি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং উন্নয়ন খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে আসতে চীনা বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানান। বাংলাদেশের বন্দর ও অবকাঠামো উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ ও সুন্দর করতে সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ব্যাবসায়িক সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের কম্কানিগুলোকে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন, যা উভয় পক্ষের জন্য প্রযুক্তি স্থানান্তর, দক্ষতা উন্নয়ন এবং বাজারে প্রবেশকে সহজতর করবে। তিনি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্পে চীনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানান। তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং এর সংলগ্ন বাজারগুলোতে সমগ্র অঞ্চলের জন্য অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে।’ আমরা জানি বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক সম্কৃক্ততা প্রশংসনীয় অবস্থানে থাকায় এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর তাদের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা অবশ্যই ইতিবাচক সাড়া দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠককালে চায়নিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থেকে চীন সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে বলে জানান। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ উপযোগী খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে এক-চীন নীতি মেনে চলে, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের অবস্থানকে সমর্থন করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির আলোকে বাংলাদেশ চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপকারী বহিরাগত শক্তির দৃঢ় বিরোধিতা করে এবং চীনের মূল স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, এই দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক অংশীদারি দর্শনকে ভিত্তি করে দুটি দেশই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। সাংগ্রিলা হোটেলে অনুষ্ঠিত ব্যবসা ও বিনিয়োগবিষয়ক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যদি ভবিষ্যতের দিকে তাকাই, তাহলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অংশীদারিতে সীমাহীন প্রতিশ্রুতি লক্ষ করব। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য দ্বিপক্ষীয় সম্কর্কের ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি করছে।’ দুই দেশ একসঙ্গে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারে, যা উভয়কে উপকৃত করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা একটি শক্তিশালী, আরো সমৃদ্ধ এবং আরো সংযুক্ত বিশ্ব গড়তে একসঙ্গে কাজ করি।’ তাঁর এই বক্তব্যই হোক আগামী দিনের বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্কর্ক আরো বহুমুখী ও সম্ক্রসারিত করার অভিন্ন লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্যে এই দুটি দেশ একসঙ্গে পথচলার প্রত্যয়ে দৃঢ় অবস্থান নিতে সক্ষম হলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর
৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে বেইজিং পৌঁছেন। সফরকালে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং ও প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও চীনের ১৪তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াঙ হুনিন ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সর্বোপরি সাংগ্রিলা হোটেলে দুই দেশের কয়েক শ উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীর অংশগ্রহণে যৌথভাবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি) আয়োজিত ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। বর্তমান সরকার গঠনের পর সরকারপ্রধান হিসেবে গত মাসে ভারত সফর ছিল তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর।
আর চীন সফরটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। সফরের এই গুরুত্বই বলে দেয় বাংলাদেশের সঙ্গে ওই দুটি দেশের সম্কর্কের মাত্রা। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি করেন ১০ জুলাই সকালে। ওই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদি ছাড়াও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার প্রতি যেমন জোর দেওয়া হয়, তেমনি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে চীনের কার্যকর ভূমিকার প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গও উঠে আসে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীন ও বাংলাদেশ পারস্করিক অবস্থান ও স্বার্থ রক্ষা করে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করে। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং দুই দেশের সম্কর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক নবায়নসহ ২১টি দলিল এবং সাতটি ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। স্বাক্ষরিত নতুন দলিলগুলো হলো—১. ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সহায়তা শক্তিশালী করা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ২. ব্যাংকিং এবং ইনস্যুরেন্স নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; ৩. বাংলাদেশ থেকে চীনে তাজা আম রপ্তানির জন্য উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সম্কর্কিত (ফাইটোস্যানিটারি) উপকরণ বিষয়ক প্রটোকল; ৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতি সহায়তা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ৫. বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহায়তা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; ৬. ডিজিটাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ৭. বাংলাদেশে প্রকল্পে চায়না-এইড ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ বিষয়ক মিনিটস (কার্যবিবরণী); ৮. চীনের সহায়তায় ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু সংস্কার প্রকল্পের পত্র বিনিময়; ৯. নাটেশ্বর আর্কিওলজিকাল সাইট পার্ক প্রকল্পে চায়না-এইড কনস্ট্রাকশনের ফিজিবিলিটি স্টাডি বিষয়ক পত্র বিনিময়; ১০. চীনের সহায়তায় নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্প বিষয়ক পত্র বিনিময়; ১১. চিকিৎসাসেবা এবং জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; ১২. অবকাঠামো ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ১৩. গ্রিন অ্যান্ড লো-কার্বন উন্নয়ন সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ১৪. রেডিও এবং টেলিভিশন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; ১৫. চীনের মিডিয়া গ্রুপের ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মধ্যে পারস্করিক সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; ১৬. চীনের মিডিয়া গ্রুপ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ১৭. চিনহুয়া নিউজ এজেন্সি এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি; ১৮. চিনহুয়া নিউজ এজেন্সি এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি এবং ১৯. টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক। অন্যদিকে বন্যার মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য প্রদান এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝাতা স্মারক দুটি নবায়ন করা হয়। এ ছাড়া বৈঠকের পর চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ক যৌথ ফিজিবিলিটি স্টাডি, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রকল্পের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন ও ডাবল পাইপলাইনের মাধ্যমে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের ট্রায়াল-এর সমাপ্তি এবং দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি চুক্তির আলোচনা শুরু, শানদং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট শুরু এবং লুবান ওয়ার্কশপ নির্মাণ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এতগুলো দলিল স্বাক্ষর এবং নতুন পরিকল্পনার ঘোষণা আগামী দিনে দুই দেশের সম্কর্ককে আরো শক্তিশালী ও গভীর করবে।
বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী ১০ জুলাই বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই নেতার মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। শি চিনপিং জানান যে চীন বাংলাদেশকে অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ এবং বাণিজ্যিক ঋণ দিয়ে সহায়তা করবে। এ ব্যাপারে দুই দেশের কারিগরি কমিটি একসঙ্গে বসার জন্য শিগগিরই চীনের একটি টেকনিক্যাল কমিটি বাংলাদেশে আসবে। তিনি বাংলাদেশে আরো চীনা বিনিয়োগের আশ্বাস দেন। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে তিনি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতার কথাও বলেন। শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যকার সম্কর্ক গভীর করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং চীনকে ব্যবধান হ্রাস করার আহ্বান জানান। চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ থেকে আরো পণ্য আমদানি করার কথা জানান। কারিগরি সহায়তা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কৃষি খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার আশ্বাস দেন তিনি। শি চিনপিং আরো বেশি করে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। চীনের প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, চীন ও বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করবে। ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিতে চীনের সমর্থনের কথাও তিনি জানান। রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি বলেন, মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি চীন ও বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাসী, বিশ্বের সর্বত্র শান্তি চায়। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, যেমনটি প্রেসিডেন্ট শি বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন আন্তরিকভাবেই এগিয়ে আসবে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। সাংগ্রিলা হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সুবিধা’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অবকাঠামো, জ্বালানি ও লজিস্টিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগের উল্লেখ করে রিয়েল এস্টেট, সেবা, তথ্য-প্রযুক্তি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং উন্নয়ন খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে আসতে চীনা বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানান। বাংলাদেশের বন্দর ও অবকাঠামো উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ ও সুন্দর করতে সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ব্যাবসায়িক সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের কম্কানিগুলোকে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন, যা উভয় পক্ষের জন্য প্রযুক্তি স্থানান্তর, দক্ষতা উন্নয়ন এবং বাজারে প্রবেশকে সহজতর করবে। তিনি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্পে চীনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানান। তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং এর সংলগ্ন বাজারগুলোতে সমগ্র অঞ্চলের জন্য অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে।’ আমরা জানি বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক সম্কৃক্ততা প্রশংসনীয় অবস্থানে থাকায় এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর তাদের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা অবশ্যই ইতিবাচক সাড়া দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠককালে চায়নিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থেকে চীন সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে বলে জানান। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ উপযোগী খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে এক-চীন নীতি মেনে চলে, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের অবস্থানকে সমর্থন করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির আলোকে বাংলাদেশ চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপকারী বহিরাগত শক্তির দৃঢ় বিরোধিতা করে এবং চীনের মূল স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, এই দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক অংশীদারি দর্শনকে ভিত্তি করে দুটি দেশই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। সাংগ্রিলা হোটেলে অনুষ্ঠিত ব্যবসা ও বিনিয়োগবিষয়ক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যদি ভবিষ্যতের দিকে তাকাই, তাহলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অংশীদারিতে সীমাহীন প্রতিশ্রুতি লক্ষ করব। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য দ্বিপক্ষীয় সম্কর্কের ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি করছে।’ দুই দেশ একসঙ্গে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারে, যা উভয়কে উপকৃত করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা একটি শক্তিশালী, আরো সমৃদ্ধ এবং আরো সংযুক্ত বিশ্ব গড়তে একসঙ্গে কাজ করি।’ তাঁর এই বক্তব্যই হোক আগামী দিনের বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্কর্ক আরো বহুমুখী ও সম্ক্রসারিত করার অভিন্ন লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্যে এই দুটি দেশ একসঙ্গে পথচলার প্রত্যয়ে দৃঢ় অবস্থান নিতে সক্ষম হলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব