বন্যাদুর্গতদের পাশে সর্বস্তরের মানুষ, বিরামহীন চলছে ত্রাণকাজ

প্রকাশিত: ৮:৫৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২৪

বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও দুর্গত মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এখনো ডুবে আছে গ্রামের পর গ্রাম, নেই খাবার, পানি—বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপকরণ। এই মানুষগুলোর দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সর্বস্তরের জনগণ। ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সংস্থা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণকাজ চলছে পূর্ণোদ্যমে।

আজ মঙ্গলবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ও শরীরচর্চা কেন্দ্রে সর্বস্তরের মানুষ এসে বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ দিয়ে যাচ্ছেন। গত ২২ আগস্ট থেকে এখানে চলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যবস্থাপনায় ত্রাণ তৎপরতা।

সকালে টিএসসিতে গিয়ে দেখা যায়, আগের মতোই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। তাঁরা বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে খাদ্যসহ বিভিন্ন ত্রাণ বস্তায় ভরছেন। আরেক দল বস্তাগুলো টিএসসির সামনে অপেক্ষমাণ ট্রাকে তুলছে। ত্রাণসামগ্রী বোঝাই শেষ হলে ট্রাকগুলো ছুটছে দুর্গত এলাকার উদ্দেশে।

বৃষ্টির কারণে টিএসসির মাঠ থেকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ক্যাফেটেরিয়া ও মিলনায়তনের ভেতরে ও বারান্দায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখানে ত্রাণসামগ্রীর স্থান সংকুলান না হওয়ায় শরীরচর্চা কেন্দ্রের সুইমিংপুল ও মাঠের পশ্চিম পাশের গ্যালারিতে ত্রাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। টিএসসির মতো সেখানেও ত্রাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সামনে শিক্ষার্থীরা টেবিল পেতে ব্যানার টাঙিয়ে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন।

স্তূপ করে রাখা হয়েছে ত্রাণসামগ্রী
স্তূপ করে রাখা হয়েছে ত্রাণসামগ্রী

দুপুরে টিএসসিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ত্রাণ তৎপরতা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কুমিল্লা, লাকসাম, ফেনী ও নোয়াখালী—এই চার জেলায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। এ চারটি জেলার প্রায় ৬ হাজার ৩০০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। প্রতিটি গ্রামের জন্য অন্তত এক ট্রাক করে ত্রাণসামগ্রী পাঠালেও প্রতিদিন ন্যূনতম ছয় হাজারের বেশি ট্রাক ত্রাণসামগ্রীর প্রয়োজন।

সারজিস আলম বলেন, তাঁরা প্রতিদিন টিএসসি থেকে ২৫টির মতো ট্রাক পাঠাতে পারছেন। গত ২৩ এপ্রিল থেকে ত্রাণ পাঠানো শুরু হয়েছে। এক শর বেশি ট্রাক ত্রাণ নিয়ে গেছে। প্রয়োজনের তুলনায় এটা খুবই সামান্য। তবে অন্যান্য ফাউন্ডেশন ও সংস্থাও ত্রাণসামগ্রী পাঠাচ্ছে।

গতকাল সোমবার টিএসসিতে নগদ অর্থসহায়তা পাওয়া গেছে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। আজও টিএসসির সামনে অনেকে নগদ অর্থসহায়তা দিয়েছেন। সারজিস আলম বলেন, অনেকেই ত্রাণসামগ্রী হিসেবে কাপড় দিচ্ছেন। তবে কাপড়ের চেয়ে জরুরি খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি। তাই শুকনা খাবারসহ নানা ধরনের খাদ্য, শিশুখাদ্য, ওষুধ, পানি শোধনকারী ট্যাবলেট, দেশলাই, লাইটার, মোমবাতি বেশি বেশি দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের এই ত্রাণকাজের পাশাপাশি অনেক সংগঠন ও সংস্থা ত্রাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম ভূমিকা রাখছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। বন্যার শুরু থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণসংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ত্রাণ তহবিলে অর্থ ও ভান্ডারে ত্রাণসামগ্রী দান করছেন।

ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে দেখা গেছে, গতকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশনের তহবিলে অর্থ, পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান পরিবহনসুবিধা দিয়েছে। ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলে গবাদিপশুর জন্য ৬৭ টনের বেশি ভুসি পাঠিয়েছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। লক্ষ্মীপুরে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মুঠোফোন ও বাতি চার্জ দেওয়ার জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রেড ক্রিসেন্ট ফাউন্ডেশনও বড় ধরনের ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের ফেসবুক পেজে উল্লেখ করা হয়েছে, রেড ক্রস সোসাইটি অব চায়না ত্রাণসহায়তার জন্য এক লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছে। ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত গতকাল এই অর্থের চেক হস্তান্তর করেছেন। এ ছাড়া গ্রামীণফোন, সিটি ব্যাংক পিএলসি ও বিকাশ লিমিটেড আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

বন্যার্তদের জন্য ত্রাণের ট্রাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি এলাকায়
বন্যার্তদের জন্য ত্রাণের ট্রাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি এলাকায়

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিল্পীদের ত্রাণসহায়তাও অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে অভিনয়শিল্পী সিয়াম আহমেদ তাঁর দুই মাসের ও তাঁর স্ত্রী এক মাসের আয় ত্রাণসহায়তা হিসেবে দিয়েছেন। চলচ্চিত্রশিল্পী মনোয়ার হোসেন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন কুমিল্লা এলাকায়। এর আগে টিএসসিতে কনসার্ট করে ২১ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে রক ব্যান্ড শিরোনামহীন।

এদিকে আজ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গুণবতী এলাকায় গিয়ে দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ। সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরীর নেতৃত্বে শিল্পীরা ৩০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য ও জরুরি প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেন।