সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের জনগণের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হতে প্রস্তুত

প্রকাশিত: ৯:৫২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪

 

মোহাম্মদ শরীফুজ্জামান (বিশেষ প্রতিনিধি):শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হতে প্রস্তুত সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ।  ১৬ ই ডিসেম্বর সকালের সূর্য উঠার সাথে সাথে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কুটনাটিকব্রিন্দ, অজানা লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।  এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে তিন বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।  রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।  পরে সেখানে শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধ চত্বর সাজানো হয়েছে হরেক রকম ফুলে। পুরো এলাকা ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে এবং চার ধাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার অধিনে থাকবে।  লাল ইট সাদার ছোঁয়ায় শুভ্রতা ছড়াচ্ছে।  বিভিন্ন স্থানে লাল টবে শোভা পাচ্ছে বুনো ফুল।  লেকের পানিতে নতুন করে লাগানো হয়েছে লাল বিটরুট।  ইতিমধ্যে স্মৃতিসৌধ দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া স্মৃতিসৌধ এলাকার সড়কগুলো বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।  একই সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে চারদিকে সিসিটিভি আনা হয়েছে।  মহাসড়কগুলোও পরিষ্কার করা হয়েছে। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মৃতির মিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে দুই সপ্তাহ ধরে কাজ করছেন শতাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী।  ছোট বাগানগুলো লাল-সবুজ ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।  চত্বরের সিঁড়িতে ও বিভিন্ন স্থাপনায় আঁচড় রয়েছে।

ফুলের পরিচর্যা ও গাছ লাগাচ্ছেন আব্দুল মতিন নামের এক ব্যক্তি।  তিনি বলেন, মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে বিভিন্ন স্থানে স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্যায়নে ফুলের গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হচ্ছে।  তিনি এখানে কাজ করতে পছন্দ করেন।  কারণ বিজয় দিবসে লাখো মানুষ এখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসবে।  এবং সেখানে তিনি কাজ করছেন।  তিনি আরও বলেন, তিনি অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করেছেন।

নাঈম নামের এক ব্যক্তি রিকশায় করে স্মৃতিসৌধ এলাকার এক স্থান থেকে ফুলের চারা নিয়ে যান।  তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে নতুন ফুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপণ করা হচ্ছে।  এতে স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্য বাড়বে।

অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে নাঈম বলেন, এখানে কাজ করার অনুভূতি তার আলাদা।  আমি এটা খুব পছন্দ.  কবে এখানে লাখো মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসবে তা ভাবতেই তার ভালো লাগে।

জিএম আনোয়ারুল ইসলাম জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকার হাতের লেখা শেষ করেন।  আমরা তার সাথে কথা বলি, তিনি জানান, ১৯৮১ সাল থেকে তিনি নিয়মিত স্মৃতিসৌধে হাতের লেখার সব কাজ করে আসছেন।  প্রতি বছর ১৬ ই ডিসেম্বর, ২৬ এ মার্চ স্বাধীনতা দিবস সহ, তিনি নিয়মিত স্মৃতিসৌধে হাতের লেখা করেন।  এবার তিনি ১লা ডিসেম্বর থেকে লিখছেন।  পারিবারিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মনের আনন্দে তিনি ৪২ বছর ধরে এখানে লিখছেন।

সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও গণপূর্ত বিভাগের ইনচার্জ উপ-সহকারী গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান, বলেন, ১৬ ই ডিসেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদ এবং বিদেশী কূটনীতিকরা জনতা সভা জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।  সেই লক্ষ্যে গণপূর্ত বিভাগ স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স পরিষ্কার করা, ফুল দিয়ে সাজানো, রং করা, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর মতো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।  প্রায় দেড় মাস ধরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ চত্বরের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।

গতকাল রবিবার অতিরিক্ত পুলিশের আইজিপি জনাব আকরাম হোসেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি জনাব একেএম আওলাদ হোসেন এবং রোববার ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার জনাব আহমেদ মুয়েদ বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মৃতিসৌধে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ১৬ ই ডিসেম্বর। এ সময় তিনি বলেন, ঢাকা আরিচা সড়কসহ স্মৃতিসৌধকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  তিনি আরও বলেন, কোনো নাশকতা বা হুমকি নেই। এ সময় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে সাভারে অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মীরা নানা অনুষ্ঠান উদযাপন করবেন।