বিশ্ববাণিজ্যে বাধা-নিষেধ তিন গুণ বেড়েছে! হুমকির মুখে বিশ্ব অর্থনীতি।

প্রকাশিত: ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক বাধা-নিষেধ নতুন কিছু নয়, তবে ২০১৯ সালে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ বাধা-নিষেধ ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে, যা বিশ্বের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক ব্লগ পোস্টে বলা হয়, ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে পণ্য, সেবা ও বিনিয়োগে বাণিজ্যিক বাধা-নিষেধ বেড়েছে তিন গুণ। ২০১৯ সালে বিশ্বে যেখানে বাণিজ্যিক বাধা-নিষেধের সংখ্যা ছিল এক হাজারের নিচে। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে তিন হাজারের কাছাকাছি।

দ্য হাই কস্ট অব গ্লোবাল ইকোনমিক ফ্র্যাগমেন্টেশন’ শীর্ষক ওই ব্লগ পোস্টে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে যখন করোনা মহামারিসহ একের পর এক ধাক্কা লেগেই আছে, তখন প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। এ জন্য সব দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু বাণিজ্যে বড় আকারে সুরক্ষা নীতির প্রয়োগ দেশগুলোর ঐক্য ভেঙে দিচ্ছে। এমনকি একেকটি দেশ প্রতিদ্বন্দ্বী ব্লকেও পরিণত হচ্ছে।

আইএমএফ জানায়, বাণিজ্যিক বাধা-নিষেধের কারণে দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ব অর্থনৈতিক অর্জন ৭ শতাংশ কমে যেতে পারে। যার পরিমাণ হবে বর্তমানে ডলারের হিসাবে ৭.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এই ক্ষতি সম্মিলিতভাবে ফ্রান্স ও জার্মানির অর্থনীতির সমান এবং সাব-সাহারা আফ্রিকার বার্ষিক অর্থনীতির তিন গুণ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশগুলোর মধ্যে স্বেচ্ছায় পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

এ জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারে।’ কিন্তু কার্যত দেখা যাচ্ছে, দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা নেই বরং স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্যিক সুরক্ষানীতির পথে হাঁটছে সবাই।

সম্প্রতি আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ বাজার সুরক্ষার নামে ভারতের পাশাপাশি আরো অনেক দেশ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পথে হেঁটেছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ খাদ্য নিরাপত্তা আপডেট অনুসারে, মোট ২০টি দেশ তাদের প্রধান খাদ্যপণ্যের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের মধ্যে ভারত চাল ও গম, আফগানিস্তান গম এবং ক্যামেরুন উদ্ভিজ্জ তেল ও খাদ্যশস্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে।

অন্যদিকে রাশিয়া ও উগান্ডা সূর্যমুখী তেল, গম, বার্লি, ভুট্টা ও চালের মতো কিছু পণ্যের ওপর রপ্তানি কর আরোপ করেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে বাণিজ্য সীমাবদ্ধ করার নীতির প্রয়োগ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

এমন পরিস্থিতিতে ভারত বলেছে, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উৎপাদন কমাসহ নানা কারণে তারা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে।

জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও কৃষি অর্থনীতির অধ্যাপক মতিন কাইম বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে এমনিতেই খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। এর ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ববাজারকে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বাধিক অস্থির করে তুলেছে।’