শিল্পী সুমিত্রা সেন

প্রকাশিত: ৬:৪০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩, ২০২৩
কলকাতা: বছর শুরুতেই সুরের আকাশে ফের নক্ষত্র পতন। প্রয়াত বর্ষীয়ান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুমিত্রা সেন। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্রের পর এবার চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন সুমিত্রা সেনও। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। কিছুদিনের মধেই তিনি ৯০ বছর পূরণ করতেন। দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তারই মধ্যে ডিসেম্বরে ভীষণ ঠাণ্ডা লাগিয়ে ফেলেন তিনি। এর ফলে জ্বরের সঙ্গে বুকে সর্দি বসে অবস্থার অবনতি হতে থাকে ক্রমশ।  গত ২১ ডিসেম্বর তাঁর ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া ধরা পড়ে। ভর্তি হয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন নিউমোনিয়া থেকেই দেহে আনুষঙ্গিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল শিল্পীর। শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক থাকলেও চিকিৎসকদের পরামর্শ মতই গতকাল সোমবার রাতে  তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। বাড়ি থেকেই শিল্পীর চিকিৎসা চলবে এমনটাই সিদ্ধান্ত হয় পরিবারের তরফে। কিন্তু, সব রকম প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে আজ মঙ্গলবার ভোর চারটে নাগাদ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তী শিল্পী। স্যোশাল মিডিয়ায় এই দুঃসংবাদ জানান, কন্যা শ্রাবণী সেন। লেখেন, ‘আজ ভোরে মা চলে গেলেন’। বয়সের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই গানের রেকর্ডিং বন্ধ করে দিয়েছিলেন সুমিত্রাদেবী। দূরে থাকতেন গানের অনুষ্ঠান থেকেও। তবে ডিসেম্বরের শুরুতে ঩স্যোশাল মিডিয়ায় নিজের সাম্প্রতিক একটি ছবি দিয়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তিনি।
মায়ের কাছে সঙ্গীতের হাতে খড়ি হলেও অনেক অল্প বয়স থেকেই ‘গীতবিতান’-এ গান শিখতে শুরু করেন সুমিত্রা সেন। সঙ্গীতের পাঠ নেন ‘বৈতনিক’-এও। পরর্তীকালে শিক্ষাগুরু হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন অনাদি দস্তিদার, প্রদ্যুৎ নারায়ণ, সুরেন চক্রবর্তী, শ্রীমতি রাধারাণী, সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়, ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত সঙ্গীত ব্যক্তিত্বকে। এরপর দীর্ঘ কয়েক দশক নিজস্ব গায়কি দিয়ে শ্রোতা হৃদয় জয় করেছেন তিনি। পেয়েছেন অসংখ্য সম্মানও। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০১২ সালে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া  ‘সঙ্গীত মহাসম্মান’।
শাপমোচনই হোক বা মায়ার খেলা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্যের গান সুমিত্রা সেনের গলায় চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। চলচ্চিত্রে সুচিত্রা সেনের লিপে তাঁর রবীন্দ্রসংগীতও অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’, ‘বিপদে মরে রক্ষা করো’, ‘ঘরেতে ভ্রমর এল’, ‘সখি ভাবনা কাহারে বলে’, ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’-এর মতো রবীন্দ্রসংগীতগুলি তাঁর কণ্ঠে আলাদা মাধুর্য লাভ করেছে। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা সংগীতজগৎ। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে শোকপ্রকাশ করা হয়েছে। শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী সুমিত্রা সেনের মৃত্যুকে সঙ্গীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নিজস্ব গায়কিতে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন বর্ষীয়ান এই শিল্পী। রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি তৈরি করেছেন অগুন্তি ছাত্র-ছাত্রীদেরও। শিল্পীর দুই কন্যা ইন্দ্রানী সেন ও শ্রাবণী সেন সহ পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।