খাতুনগঞ্জে পণ্য কেনাবেচা কমেছে ৬০ শতাংশ

প্রকাশিত: ১০:৪৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে কেনেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের আড়তদার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। সঙ্গে সাত টাকা পরিবহন খরচ যোগ করে প্রতি কেজি বিক্রি করেন ৯৭ টাকায়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের অবরোধে ক্রেতা নেই। পচনশীল পণ্য বলে লোকসান দিয়ে ৮৮ টাকা কেজিতে ছাড়ছেন।
তবু ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না।খাতুনগঞ্জের আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, হরতাল-অবরোধের কারণে দেশের মহাসড়কে নিরাপত্তাহীনতায় কমেছে পণ্য পরিবহন। বেশির ভাগ ট্রাক মালিক ভাড়া বাড়িয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি করা পণ্য খাতুনগঞ্জে ঢুকলেও সেখান থেকে বের হচ্ছে কম।
ক্রেতা কম থাকায় কেনাবেচা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।গত ২৯ অক্টোবর সারা দেশে হরতাল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াত। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন চলে অবরোধ। মাঝখানে এক দিন বিরতি দিয়ে আরো দুই দিনের অবরোধ পালন করে।
গত বুধবার থেকে আজ শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত দুই দিনের অবরোধ আছে।গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের ভোগ্য পণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডাল, চাল, মসলাসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রায় সাড়ে তিন হাজার আড়ত আছে। আগে প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কমপক্ষে ৩০০ পণ্যবাহী ট্রাক চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জে প্রবেশ করত। কিন্তু এখন পণ্যবোঝায় ট্রাকের সংখ্যা নেমে এসেছে ১৩০টিতে। শতকরা হিসেবে ট্রাক কমেছে প্রায় ৪৩ শতাংশ।
এসব আড়তে স্বাভাবিক সময়ে গড়ে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হতো। অবরোধে তা নেমে এসেছে ৪০০ কোটি টাকায়। সে হিসাবে খাতুনগঞ্জে কেনাবেচা কমেছে ৬০ শতাংশ।খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও কাঁচা পণ্যের আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রীস  বলেন, আগে প্রতিদিন দেশের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাক (১৩ টন) খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করত ২৫ থেকে ৩০টি। অবরোধে সেটা এখন ১০টিতে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, অবরোধের আগে খুচরা ব্যবসায়ীরা যেখানে ১০০ বস্তা ভোগ্য পণ্য কিনতেন, সেখানে এখন ৩০ বস্তা কিনছেন। অথচ পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম আমদানি মূল্যের চেয়ে কমে গেছে।গতকাল খাতুনগঞ্জে আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৯৫ টাকা। আট দিন আগেও দাম ছিল ১০৫ টাকা। আর নতুন করে পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। ওই পেঁয়াজের দাম ৮৮ টাকা। বাজারে দেশি পেঁয়াজ নেই। ভারতীয় আদা (কেরালা) প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। এ পণ্যের দামও কেজিতে কমেছে ১০ টাকা। দেশি আদার কেজি এখন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সেটি কমেছে ১২ টাকা। আর বাজারে এখন চীন থেকে আমদানি করা রসুনের সরবরাহ আছে। সেটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকা। আট দিন আগের দামের তুলনায় কমেছে কেজিতে পাঁচ টাকা।

খাতুনগঞ্জের ভোগ্য পণ্যের কমিশন এজেন্ট ও সাফা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. সালাউদ্দিন মারুফ   বলেন, ‘আগে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে খাতুনগঞ্জে ১৪ টনের একটি ট্রাকের ভাড়া ছিল ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এখন একই ট্রাক ৪০ থেকে ৪৪ হাজার টাকায়ও পাচ্ছি না। ট্রাক মালিকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে ট্রাক ভাড়া দিচ্ছেন না।’

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী ও মাহা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, ‘অবরোধে দেশের জেলা-উপজেলা ও মোকামগুলো থেকে খাতুনগঞ্জে ট্রাক ঢুকতে না পারায় আমরা অর্ডার নিয়েও পণ্য সরবরাহ করতে পারছি না। অলস বসে আছি। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে।’

খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, হারতাল-অবরোধে খাতুনগঞ্জের সব আড়ত ও দোকান খোলা আছে। বন্দর থেকে আমদানি করা ভোগ্য পণ্য আড়তে প্রবেশ করছে। তবে বেচাকেনা কমেছে গেছে। অনেক আড়তদার ও ব্যবসায়ী সামনের কঠিন সময়ের চিন্তা করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। অবরোধের সময় কী পরিমাণ পণ্য কেনাবেচা কম হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা, এই অবরোধে ভোগ্য পণ্য বেচাকেনা ৪০ শতাংশের বেশি হবে না। এখন বেশির ভাগ আড়ত ভোগ্য পণ্যে ভর্তি। সামনের সময়গুলোতে বিক্রি আরো কমবে।’

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভোগ্য পণ্যবাহী ট্রাক খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করলেও দেশের স্থলবন্দর থেকে ট্রাক পাইকারি বাজারে আসছে খুবই কম। এ ছাড়া খাতুনগঞ্জ থেকে ট্রাক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারছে না। তিনি বলেন, মহাসড়কে যাতে পণ্যবাহী ট্রাক নিশ্চিন্তে চলাচল করতে পারে সে বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে সরবরাহে সংকট