রাজশাহীতে তরণ হয়নি অর্ধেক বই

প্রকাশিত: ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৩

০৪ জানুয়ারি ২০২৩,

১ জানুয়ারি দেশব্যাপী উৎসাহ আর উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়েছে।

বিতরণ করা হয়নি অর্ধেক বই। মঙ্গলবারও স্কুলে এসে খালি হাতে ফিরে গেছে শিক্ষার্থীরা। রাজশাহীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা তাদের সব বিষয়ের বই এখনো হাতে পায়নি। জেলার এগারো থানার এ চিত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের হাতে সব বিষয়ের বই পৌঁছাতে আরও ১৫ দিন সময় লাগবে। ফলে নতুন বছরের ক্লাস শুরু হলেও পরিপূর্ণভাবে পাঠদান শুরু করা যায়নি।

জেলার দুর্গাপুর উপজেলার শহিদ আবুল কাশেম স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বই হাতে পায়নি। জ্যোতি আক্তার এবং মুশফিকুর রহমান নামে দুই শিক্ষার্থী জানায়, তাদের ক্লাসের ৭৯ জন শিক্ষার্থী কোনো বিষয়েরই বই পায়নি। আজ (মঙ্গলবার) তাদের বই দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্কুলে এসে খালি হাতে ফিরে গেছে। সপ্তম, অষ্টম এবং নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও একই অবস্থা। তারাও এখনো বই পায়নি। অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আমাদের এখনো বই সরবরাহ করেনি। মঙ্গলবার তাদের বই দেওয়ার কথা ছিল। শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন। একই উপজেলার শাহার বানু উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও বই পায়নি। মঙ্গলবার তারা স্কুলে গিয়ে বই না পেয়ে ফিরে গেছে। ওই স্কুলে ৫০ শতাংশ বই এসেছে। বাকি ৫০ শতাংশ বই এখনো আসেনি।

জেলার বাঘা উপজেলার আড়ানি সরকারি মনোমোহীনি উচ্চবিদ্যালয়েও একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো অর্ধেক বই সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছয় বিষয়ে, সপ্তম শ্রেণিতে তিন বিষয়ে, অষ্ঠম শ্রেণিতে ছয় বিষয়ে বই বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, নবম শ্রেণির মানবিক বিষয়ের সব শিক্ষার্থীকে বই সরবরাহ করা সম্ভব হলেও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের এখনো বিজ্ঞান বিষয়ের বই সরবরাহ করতে পারেনি। এ কারণে পরিপূর্ণভাবে পাঠদান শুরু করতে পারিনি। একই উপজেলার চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনো অর্ধেক বই পায়নি বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, আমার স্কুলে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২৩ জন। এর মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পেয়েছে। তবে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ছয় বিষয়ের মধ্যে তিনটি বিষয়ের বই পেয়েছে। বাকি তিন বিষয়ের বই এখনো শিক্ষার্থীদের কাছে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। উপজেলার পিরিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়েছে। তবে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ছয় বিষয়ের মধ্যে এখনো তিন বিষয়ের বই পায়নি। পাশেই পিরিজপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছে অর্ধেক বিষয়ের বই বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। জেলার অন্যান্য উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোরও একই অবস্থা বলে জানা গেছে।

জেলার বেশ কয়েকজন প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা যুগান্তরকে জানান, বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি রাজশাহীতে চাহিদার বিপরীতে অর্ধেক বই এসেছে। এ ছাড়া বিজ্ঞান এবং ধর্মবিষয়ের বই এখনো রাজশাহীতে পৌঁছেনি। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ের কারিকুলাম পরিবর্তন হওয়ার কারণে ছাপাখানা থেকে বই ছাপাতে দেরি হয়েছে। ধর্ম বইয়েরও কিছুটা পরিবর্তনের কারণে সেটিও আসতে দেরি হচ্ছে। ফলে পাঠাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে এ বছর অন্য বছরের তুলনায় বইয়ের কাগজ অত্যন্ত নিম্নমানের এবং ছাপাও খুব খারাপ বলে তারা অভিযোগ করেন।

অর্ধেক বই এখনো বিতরণ করা সম্ভব হয়নি কেন-এ প্রশ্নের উত্তরে জেলা শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো চাহিদামতো বই সরবরাহ পাইনি। এ কারণে শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে পুরাতন বই দিয়ে সে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন বলেন, বর্তমানে কী পরিমাণ বইয়ের ঘাটতি আছে- সেটি আমার জানা নেই। আগামীকাল (বুধবার) দুপুরে সব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে আমার কার্যালয়ে ডেকেছি। তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। আশা করছি, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে। জেলার সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে।

সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা মোট এক হাজার ৫৭টি। এ পরিমাণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় তিন লাখ পাঁচ হাজার। আর বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১৩ লাখ ১১ হাজার। এ ছাড়া জেলায় রয়েছে ৬৪৩টি মাধ্যমিক স্কুল এবং ২০২টি দাখিল মাদ্রাসা। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্কুল (ষষ্ঠ থেকে নবম) পর্যায়ে দুই লাখ ২৫ হাজার ৪০ এবং দাখিলে (ষষ্ঠ থেকে নবম) শিক্ষার্থী রয়েছে ৪১ হাজার ৮৯০ জন। এ পরিমাণ শিক্ষার্থীর জন্য মাধ্যমিকে ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৯০৫ এবং দাখিলে ছয় লাখ ৩২ হাজার ৩৪৫টি পাঠ্যবইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ের বই এখনো হাতে পায়নি।