করযোগ্য অর্ধেক মানুষ কর দেন না ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ১১:৫৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১, ২০২৩ নিজস্ব প্রতিবেদক দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৩৫ লাখ সরকারকে সরাসরি কর দেন। কিন্তু এই সংখ্যা হওয়া উচিত ছিল ৬৫ থেকে ৭০ লাখ। অর্থাৎ করযোগ্য প্রায় অর্ধেক মানুষ কর দেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস উপলক্ষে আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। ‘নতুন আয়কর আইন এবং কর পরিপালন : পরিবর্তিত প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সভার মূল প্রবন্ধে এনবিআরের করনীতি বিভাগের সদস্য ড. সামস উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। ড. সামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০১৬ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১২.৫ শতাংশ পরিবারের খরচ হচ্ছে ২৫ হাজার টাকার কিছু বেশি। আমাদের করমুক্ত আয় এখন সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত, যা আগে ছিল তিন লাখ টাকা। অর্থাৎ এই সীমা পার হতে মাসে ২৫ হাজার টাকা খরচ করা একটি পরিবারের সংখ্যা ছিল ১২.৫ শতাংশ।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যদি ১২ শতাংশ লেবার ফোর্স ধরি তাহলে করদাতার সংখ্যা আছে ৬৫ লাখের মতো। তাহলে সরকারের বা বিবিএসের হিসাব যদি ধরি তাহলে প্রকৃতপক্ষে যাঁরা কর দেবেন তাঁদের সংখ্যা হওয়া উচিত ৬৫ থেকে ৭০ লাখ। এই হিসাবটা যদি ধরি তাহলে আমরা কর পাচ্ছি ৪৯ শতাংশ, যা ৩৫ লাখ। ফলে আমরা আয়কর আদায়ে অর্ধেক পিছিয়ে আছি। আরো যদি বেশি ধরি বা পরবর্তী প্রেক্ষাপট বিবেচনা করি, তাহলে হয়তো এক কোটি লোকের কাছ থেকে কর পেতাম।’ করদাতারা যাতে সহজে কর দিতে পারেন এ জন্য আমরা এই প্রথম বাংলায় আয়কর আইন করেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট আয়ের করদাতাদের জন্য অনলাইনে এক পাতার রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা করেছি। রিটার্ন দাখিলসহ পুরো সিস্টেম যত সহজ হবে করদাতা তত বাড়বে। এর পাশাপাশি আমাদের কর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’ একই অনুষ্ঠানে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা নতুন আয়কর আইন নির্ভুল করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছু ভুলত্রুটি আছে, সেগুলো সমাধানেরও সুযোগ আছে। এ জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে যাঁরা আইন কর্মকর্তা রয়েছেন, যখনই আপনাদের মনে হবে আইনের এই জায়গায় সংশোধন বা পরিমার্জন করা দরকার, আপনারা আমাদের জানাবেন। শুধু বাজেট বা অর্থ আইনের সময় নয়, এর বাইরেও আমাদের জানালে আমরা সংশোধনের চেষ্টা করব।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের করদাতা কর দেওয়াকে একটা বোঝা মনে করেন। কর দেওয়ার বিষয়টি যেন রাষ্ট্রের অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া একটি বোঝা। আর যাঁরা কর নেয়, তারা আমার (করদাতার) শত্রু। এটা মনে করা স্বাভাবিক, এটা থাকবেই। সে জন্য আমরা কর আদায় নয়, এই শব্দকে পরিবর্তন করেছি। করদাতার সঙ্গে যদি সুসম্পর্ক তৈরি করতে হয়, তাহলে কর আদায় শব্দটি আমরা ব্যবহার করব না। আমরা কর আহরণ শব্দটি ব্যবহার করব। আসলে সেলফ কমপ্লায়েন্স ছাড়া কর আহরণ খুবই কঠিন।’ সেলফ কমপ্লায়েন্স কিভাবে আসবে? এ জন্য প্রতিটি বিষয় নজরে আনতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট বিষয় আছে সেলফ কমপ্লায়েন্সকে উৎসাহিত করার জন্য। সেগুলোকে আমাদের নজরে আনতে হবে। যেমন—ফরম পূরণ করা থেকে শুরু করে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া, অডিটকে সহজ করা। করভীতি দূর করা। রিটার্ন জমা দিলে না জানি আমি জালে আটকা পড়ে গেলাম! এরপর না জানি আমাকে নিয়ে কোন খেলা শুরু হয়! এ ধরনের একটি ভীতি আছে। এই জায়গাটাকেও নজরে আনতে হবে। আমরা করদাতাদের অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে চাই, কিন্তু তাঁদেরও সেই মূল্য দিতে হবে।’ এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘এই মুহূর্তে এক কোটি রিটার্ন দাখিলকারী হওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে আমরা হয়তো ৩০ থেকে ৩৫ লাখে আছি। এর থেকে দ্রুত আমাদের এক কোটিতে যেতে হবে। কিভাবে সেটা? আমরা টিআরপি প্রগ্রাম নিয়েছি। যেখানে ইনডিভিজুয়াল তরুণ গ্রুপকে আমরা নিয়োগ দেব, যারা ইনকাম ট্যাক্স সম্পর্কে একটু বোঝে, জ্ঞান আছে। আমরা তাদের কিছু ইনসেনটিভ দেব। এটা ছাড়া দ্রুত করজাল বৃদ্ধি ও রিটার্ন জমা দেওয়া বৃদ্ধি করা যাবে না।’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন বলেন, ‘একটি সেনসিটিভ মামলায় উনারা (করদাতা) একটা দরখাস্ত করলেন ওয়েভার চাওয়ার জন্য। উনারা রেফারেন্স ফাইল করবেন, দরখাস্ত করলেন। তখন এনবিআরের উত্তর ছিল- আপনি এত টাকা জমা দিয়ে রেফারেন্স ফাইল করেন।’ SHARES অর্থনৈতিক বিষয়: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)
দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৩৫ লাখ সরকারকে সরাসরি কর দেন। কিন্তু এই সংখ্যা হওয়া উচিত ছিল ৬৫ থেকে ৭০ লাখ। অর্থাৎ করযোগ্য প্রায় অর্ধেক মানুষ কর দেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস উপলক্ষে আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।
‘নতুন আয়কর আইন এবং কর পরিপালন : পরিবর্তিত প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সভার মূল প্রবন্ধে এনবিআরের করনীতি বিভাগের সদস্য ড. সামস উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। ড. সামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০১৬ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১২.৫ শতাংশ পরিবারের খরচ হচ্ছে ২৫ হাজার টাকার কিছু বেশি। আমাদের করমুক্ত আয় এখন সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত, যা আগে ছিল তিন লাখ টাকা। অর্থাৎ এই সীমা পার হতে মাসে ২৫ হাজার টাকা খরচ করা একটি পরিবারের সংখ্যা ছিল ১২.৫ শতাংশ।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যদি ১২ শতাংশ লেবার ফোর্স ধরি তাহলে করদাতার সংখ্যা আছে ৬৫ লাখের মতো। তাহলে সরকারের বা বিবিএসের হিসাব যদি ধরি তাহলে প্রকৃতপক্ষে যাঁরা কর দেবেন তাঁদের সংখ্যা হওয়া উচিত ৬৫ থেকে ৭০ লাখ। এই হিসাবটা যদি ধরি তাহলে আমরা কর পাচ্ছি ৪৯ শতাংশ, যা ৩৫ লাখ। ফলে আমরা আয়কর আদায়ে অর্ধেক পিছিয়ে আছি।
আরো যদি বেশি ধরি বা পরবর্তী প্রেক্ষাপট বিবেচনা করি, তাহলে হয়তো এক কোটি লোকের কাছ থেকে কর পেতাম।’ করদাতারা যাতে সহজে কর দিতে পারেন এ জন্য আমরা এই প্রথম বাংলায় আয়কর আইন করেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট আয়ের করদাতাদের জন্য অনলাইনে এক পাতার রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা করেছি। রিটার্ন দাখিলসহ পুরো সিস্টেম যত সহজ হবে করদাতা তত বাড়বে। এর পাশাপাশি আমাদের কর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’ একই অনুষ্ঠানে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা নতুন আয়কর আইন নির্ভুল করার চেষ্টা করেছি।
কিন্তু কিছু ভুলত্রুটি আছে, সেগুলো সমাধানেরও সুযোগ আছে। এ জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে যাঁরা আইন কর্মকর্তা রয়েছেন, যখনই আপনাদের মনে হবে আইনের এই জায়গায় সংশোধন বা পরিমার্জন করা দরকার, আপনারা আমাদের জানাবেন। শুধু বাজেট বা অর্থ আইনের সময় নয়, এর বাইরেও আমাদের জানালে আমরা সংশোধনের চেষ্টা করব।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের করদাতা কর দেওয়াকে একটা বোঝা মনে করেন। কর দেওয়ার বিষয়টি যেন রাষ্ট্রের অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া একটি বোঝা। আর যাঁরা কর নেয়, তারা আমার (করদাতার) শত্রু। এটা মনে করা স্বাভাবিক, এটা থাকবেই। সে জন্য আমরা কর আদায় নয়, এই শব্দকে পরিবর্তন করেছি। করদাতার সঙ্গে যদি সুসম্পর্ক তৈরি করতে হয়, তাহলে কর আদায় শব্দটি আমরা ব্যবহার করব না। আমরা কর আহরণ শব্দটি ব্যবহার করব। আসলে সেলফ কমপ্লায়েন্স ছাড়া কর আহরণ খুবই কঠিন।’ সেলফ কমপ্লায়েন্স কিভাবে আসবে? এ জন্য প্রতিটি বিষয় নজরে আনতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট বিষয় আছে সেলফ কমপ্লায়েন্সকে উৎসাহিত করার জন্য। সেগুলোকে আমাদের নজরে আনতে হবে। যেমন—ফরম পূরণ করা থেকে শুরু করে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া, অডিটকে সহজ করা। করভীতি দূর করা। রিটার্ন জমা দিলে না জানি আমি জালে আটকা পড়ে গেলাম! এরপর না জানি আমাকে নিয়ে কোন খেলা শুরু হয়! এ ধরনের একটি ভীতি আছে। এই জায়গাটাকেও নজরে আনতে হবে। আমরা করদাতাদের অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে চাই, কিন্তু তাঁদেরও সেই মূল্য দিতে হবে।’ এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘এই মুহূর্তে এক কোটি রিটার্ন দাখিলকারী হওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে আমরা হয়তো ৩০ থেকে ৩৫ লাখে আছি। এর থেকে দ্রুত আমাদের এক কোটিতে যেতে হবে। কিভাবে সেটা? আমরা টিআরপি প্রগ্রাম নিয়েছি। যেখানে ইনডিভিজুয়াল তরুণ গ্রুপকে আমরা নিয়োগ দেব, যারা ইনকাম ট্যাক্স সম্পর্কে একটু বোঝে, জ্ঞান আছে। আমরা তাদের কিছু ইনসেনটিভ দেব। এটা ছাড়া দ্রুত করজাল বৃদ্ধি ও রিটার্ন জমা দেওয়া বৃদ্ধি করা যাবে না।’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন বলেন, ‘একটি সেনসিটিভ মামলায় উনারা (করদাতা) একটা দরখাস্ত করলেন ওয়েভার চাওয়ার জন্য। উনারা রেফারেন্স ফাইল করবেন, দরখাস্ত করলেন। তখন এনবিআরের উত্তর ছিল- আপনি এত টাকা জমা দিয়ে রেফারেন্স ফাইল করেন।’