ফেনীর পরশুরামে জমজমাট মাদকের ব্যবসা প্রশাসন নীরব ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ২:১৭ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২৪ শিবব্রত (বিশেষ প্রতিনিধি) *********************************** ফেনীর পরশুরামে অবাধে চলছে রম রমা মাদক ব্যবসা ও পুলিশের গ্রেফতার বানিজ্য। প্রায় প্রতিদিনই পরশুরামে কোথাও না কোথাও ঘঠছে এই অপরাধ । এই অপরাধ ঠেকাতে বিভিন্ন পয়েন্টে টহলের ব্যবস্থা করলেও কোন কাজ হচ্ছেনা বলে স্থানীদের অভিমত । মাদকের ছড়া ছড়িতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরশুরামের বিশিষ্ট জনরা । নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামীলীগের কয়েকজন পদাধিকারী নেতা জানান, পরশুরাম একটি সীমান্তবর্তী এলাকা । এই এলাকাতে নিবিঘ্নে প্রবেশ করে ভারতীয় মদ ও গাঁজা । এই ভারতীয় মদ ও গাঁজা মিলে পরশুরামে মাদকের পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে । একই সাথে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ মাদক সেবকদের আটক করলেও মাদক ব্যবসায়ীরা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে । আবার অনেক সময় মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করলেও সুকৌশলে বিনিময় পদ্ধতিতে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় । সুত্র মতে পরশুরামের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কুহুয়া নদী যার দক্ষিনপাড় পরশুরাম উত্তর অংশে ভারতের আমজাদ নগর ও ২ কিমি দূরে জেলা শহর বিলোনিয়া, এই সীমান্ত দিয়ে নদী থাকার জন্য এলাকাটা খোলা পড়ে আছে কাঁটা তারের বেড়া নির্মান করা হয়েছে একটু দূরে । পাচারকারীরা সময় বুঝে কৌশলে কাঁটাতারের উপর বা নিচ দিয়ে চুক্তি অনুযায়ী মাদক ও ভারতীয় দ্রব্য বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট পৌঁছে দেয় । ওই সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় মাদক দ্রব্য পরশুরামের চাহিদা মিটিয়ে পাচারকারীরা বাস, ট্রাক, মোটর সাইকেল, বিভিন্ন বাহারি রংয়ের প্রাইভেট কার ও সি,এন,জি সহ যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বাহনে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে । চোরাই পথে আনিত এসব মাদকের কিছু অংশ ধরা পড়লেও রহস্য জনক কারনে অধিকাংশ মাদকই রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে । মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মাদকের সিংহভাগই মাদক থানা সোর্সদের মাধ্যমে পুনরায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে । এদিকে মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে সম্ভ্রান্ত পরিবারের যুবক ও শিক্ষার্থীরা । মাদকের অর্থ যোগান দিতে না পারায় মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে লাঞ্চিত হতে হচ্ছে অভিভাবকদের । এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ প্রশাসনের অনেকেই মাদক নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু এখনও সেই মাদক ব্যবসা বন্ধ হয়নি । এলাকার উঠতি বয়সের প্রায় ছেলেরা নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে । পরশুরাম পৌরসভার পূর্ব কোলাপাড়ার রাশেদা আক্তারের প্রতিক্রিয়া এমন । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক , এক গৃহবধু বলেন সন্ধ্যা নামলেই রাস্তায় দেখা যায় তরুনদের লাল চোখ আর ফিস ফাস, এসবই মাদকের কারনে । নির্বাচনে যারা এলাকার স্হানীয় প্রাথী হন তারাই প্রতিশ্রুতি দেন মাদক বন্ধের । কিন্তু নির্বাচন শেষে তারা আর একথা মনেই রাখেননা । এনিয়ে পরে তারা কথা বলতেও চাননা । এনিয়ে ক্ষোভঝরে নাগরিকদের কন্ঠে । একটি বিশেষ সুত্রের বরাতে জানা যায়, পরশুরামে উপজেলার বিলোনীয়ায় তালুক পাড়া খোন্দকিয়া গ্রাম ও দোকানে, থানার উত্তর ও পূর্বপাশের গ্রামে, কাউতলী রোড, পূর্ব কোলাপাড়া, সি,এন,জি ষ্টেশান, বাস টার্মিনালের শেটঘর, রেলক্রসিংয়ের বস্তি, হাসপাতাল মোড়, সুবার বাজার চৌমুড়ী, অনন্তপুর মডেল হাইস্কল সংলগ্ন বস্তি ও তার উত্তর পাশের এলাকা, বাবুলের কলোনী, বৈদ্যের দীঘির পাড়ের দোকান, মুহুরী স্টীল ব্রীজ, কলেজ রোড, উপজেলা গেজেটেড কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার সংলগ্ন পরিত্যক্ত বিল্ডিং, সমাজ সেবা কার্য্যালয়ের বারান্দায়, ছয়ঘরিয়ার বাগান, টি এন টি অফিসের পিছনে, তহসিল অফিসের পুকুর পাড়ে, ও অনন্তপুর রাস্তায় প্রকাশ্যে মাদকের বেচা কেনা চলে । সন্ধ্যা হলেই বসে মাদক ও গাজা সেবনের আড্ডা । আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন এখানে ও অসহায় । তাই যারা জনপ্রতিনিধি হন তাদের কাছে স্থানীয়দের দাবী থাকে মাদক ব্যবসা যেন না হয় । এ দাবী চলে আসছে বহুকাল থেকে । কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না । অনুসন্ধানে এবং নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিলোনীয়া তালুক বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী সহ স্হানীয়দের তথ্য মতে জানা যায়, তালুক পাড়ায় দীর্ঘ দিন থেকেই একটি মাদক ব্যবসায়ী চক্র নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের নামে একাধিক মাদক মামলাসহ বিশেষ মামলা ও রয়েছে। তারা হলেন সুমি ,শাহেনা,আমিননেসা, সাইফুল,তাজুল,আজু, সোহেল,ইউছুপ,শিল্পি,রাসেল,হাসেম,মিজান,স্বপন,মালেক ও হানু। তারা আরো জানান মাদক এই এলাকার দীর্ঘ দিনের সমস্যা । এবার তারা কারও প্রতিশ্রুতি নয় বাস্তব পদক্ষেপ দেখতে চান । তাহলেই কেবল ভোট দিতে যাবেন । উপস্থিত এলাকাবাসী জানায়,গত চৌদ্দ বছরে পরশুরাম পৌরসভার পক্ষ থেকে রাস্তাও ড্রেনের উন্নতি হয়েছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। দরিদ্র লোকের জীবন মানের উন্নয়ন হয়েছে । পৌর মেয়রের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে। তবে মাদক তেমন ভাবে নির্মূল হয়নি । এক প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত জনতা বলেন বর্তমান পৌর মেয়র মাদকের ব্যাপারে আপোষহীন। জনতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট তার নির্দেশনা রয়েছে মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকসেবী যে দলেরই হোক আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।তবে কতিপয় লোক পৌর মেয়রের যশ ও সুনাম নষ্ট করার জন্য এজাতীয় কাজ করে যাচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাউরখুমা গ্রামের কয়েকজন জানান, তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেও পুলিশের সহায়তা না পাওয়ায় তারা তা করতে পারেননি । এলাকায় উন্নয়ন হলেও মাদকের কারনে কর্মকান্ড অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে বলেও জানান অনেকেই। স্থানীয় অধিবাসীরা সমন্বিত অভিমতে জানায়, মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষার দায়িত্ব শুধু পুলিশ বা বিজিবির নয় । রাজনৈতিক নেতাদের এবং সকলকে এই প্রশ্নে এক হতে হবে । কারন যারা মাদক ব্যবসা করে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে থাকে । এব্যাপারে ফেনী জেলা পুলিশ সুত্র জানায় মাদক নিয়ন্ত্রনে প্রতিদিনই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে কিন্তু সামাজিক ভাবে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে কোন অবস্থায় মাদকের করাল গ্রাসকে রুখে দেয়া সম্ভব নয় । মজুমদার হাট(বিলোনীয়া) বিজিবি সুত্র জানায়,একসময় বিলোনীয়াতে মাদকের ভয়াবহ অবস্থা ছিল এখন তা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। মাদক নির্মূলে বিশেষ টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরশুরাম মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহাদাত হোসেন খান জানান, মাদকের ব্যপারে আমরা আপোষ হীন। পুলিশের বিশেষ নজরদারির কারনে আগের অবস্থা থেকে মাদক সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। এদিকে প্রতি মাসে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাদক প্রতিরোধে ব্যাপারে অনেক পরিকল্পনা এবং জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করলে ও কাজের কাজ কিছুই হয়না বলে ও জানায় এলাকাবাসী। SHARES অপরাধ/দূর্নীতি বিষয়: