সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে মাল্টি বিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ১১:১৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০২৪ শিল্পবিষয়ক তথ্যে বলা হচ্ছে, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বছরে প্রায় ২৫ হাজার স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তৈরি হচ্ছেন। দ্রুত বর্ধনশীল বিশ্ব অর্থনীতির সম্ভাবনাটা আঁকড়ে ধরতে এরাই সম্পদ হিসেবে কাজ করবে। নতুন নতুন স্টার্টআপ গড়ে ওঠার কারণে মাল্টিবিলিয়ন-ডলারের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ঝাপটা এসে পড়েছে বাংলাদেশেও। এ খাতের বোদ্ধাদের মতে, দেশের প্রায় ৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে অগণিত প্রকৌশলী তৈরি হচ্ছে, তাতে চিপস নির্মাতারাও আউটসোর্সিংয়ের সুযোগ খুঁজে পেতে কোমর বেঁধে নেমেছেন। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে সারা বিশ্বের ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তি খাতে সেমিকন্ডাক্টর বা মাইক্রোচিপ ম্যানুফ্যাকচারিং খাত দ্রুত ক্রমবর্ধমান শিল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তারা বলছেন, সরকারি খরচে দেশের প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তারা চিপের নকশা ও কিছু অ্যাসেম্বলিংয়ের কাজ করতে পারবেন। এমনটা করে সরকার বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্রের দেশ এমনটা করছে। এশিয়ার অনেক দেশ এই বাজার ধরতে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করছে। ভারত, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সেমিকন্ডাক্টর খাত থেকে বিপুল অঙ্কের আয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানে দেশে সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন থেকে আয় মাত্র ১০০ মিলিয়ন ডলার। এই আয় ৫০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তবে তা কয়েক বিলিয়ন ডলার করার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য বেসরকারি খাতের উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কৌশল এবং ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থা ‘ম্যাকিনসি অ্যান্ড কম্পানি’ জানিয়েছে, বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে এক ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সাবেক সভাপতিও এবং টেকনোহেভেন কম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেছেন, ‘দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে বিশ্বব্যাপী এক ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ৩.০ শতাংশ থেকে ৪.০ শতাংশ দখল করার সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে।’ বর্তমানে বাংলাদেশে তিনটি কম্পানি চিপ ডিজাইনে নিয়োজিত রয়েছে। এদের মধ্যে দুটি বড় কম্পানি ‘উল্কাসেমি’ ও ‘নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর লিমিটেড’। এ ছাড়া ‘প্রাইম সিলিকন’ সর্বশেষ টেকনো শিল্পের আরেকটি কম্পানি, যেটি গত ১২-১৩ বছর ধরে প্রিফেব্রিকেশনের কাজ করে আসছে। ২০০৭ সালে স্টার্টআপ শুরু করার পর থেকে, উল্কাসেমি কম্পানির বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৫টি ক্লায়েন্ট রয়েছে। এদের তালিকায় অ্যাপল ও তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি লিমিটেড (টিএসএমসি)-এর মতো বড় কম্পানির নামও রয়েছে। চিপ ডিজাইনিংয়ে বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা তাদের সহায়তা করছেন। এদিকে ডিবিএল গ্রুপের নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর কম্পানিটি, ‘ভিএলএসআই’ ডিজাইনে বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া এই শিল্পের জন্য রিসোর্স তৈরিতে সহায়তা করার জন্য ২৭-২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছে। উল্কাসেমি কম্পানিটি কালিয়াকৈরের হাই-টেক পার্কে জমি পেয়েছে। যেখানে ভবিষ্যতে পরীক্ষা এবং প্যাকেজিংয়ের জন্য একটি সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট স্থাপন করবে তারা। উল্কাসেমির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনায়েতুর রহমানকে দেশে এই শিল্প প্রতিষ্ঠার একজন অগ্রদূত বলা যায়। তিনি এমন একটি বাজার ধরার উদ্যোগ নেন, যা তার কম্পানিটি শুরুর দেড় দশকের মধ্যেই ৬০ হাজার কোটি ডলারে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত একটি বাজার তৈরিতে উল্কাসেমি, নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর, প্রাইম সিলিকন ও টোটোন ইলেকট্রনিকসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প এগিয়ে নিচ্ছে। দেশের দুটি বড় কম্পানি ওয়ালটন ও এসিআই এই শিল্পে প্রবেশের উদ্যোগ নিচ্ছে। ওয়ালটন এরই মধ্যে কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে জায়গা করে নিয়েছে। উল্কাসেমির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমান সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাপল, গুগল এবং ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের কাছ থেকে উল্লেখ্যযোগ্য হারে কাজ পাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বব্যাপী ক্লায়েন্টদের মধ্যে প্রিফেব্রিকেশন পর্যায়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘বাংলাদেশে উল্কাসেমির ৩০০ জনের বেশি প্রকৌশলী রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে রয়েছেন ৩৫, কানাডায় রয়েছেন ৩০ জন এবং ভারতে ১০০ জন প্রকৌশলী রয়েছেন বলে আমার ধারণা।’ নিউরাল সেমিকন্ডাক্টরের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) মো সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, তাদের কম্পানি বুয়েটের ২০ জন প্রকৌশলী নিয়ে ২০১৭ সালে ব্যবসা শুরু করেছিল। বর্তমানে ১০০ জনের বেশি প্রকৌশলী এখানে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্লায়েন্টদের প্রয়োজন মেটাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মালয়েশিয়াতে অফিস নিচ্ছি।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং মালয়েশিয়ার চার থেকে পাঁচজন নিয়মিত গ্রাহক রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, রিসোর্স বিল্ড আপের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগের প্রয়োজন। কারণ প্রশিক্ষণ সফ্টওয়্যারের লাইসেন্স পাওয়া বেশ ব্যয়বহুল। চিপ ডিজাইন রপ্তানি করে ভারত ৪০ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। যা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সমতুল্য বলে তিনি জানান। এটাকে তিনি সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের সম্ভাবনার একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা এখন এ শিল্পে ‘টেক-অফ’ পর্যায়ে রয়েছি, যেখানে বিশাল স্কেলে সম্পদ তৈরির জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কারণ শুধুমাত্র সদ্য পাস করা নতুন প্রকৌশলীরা এ কাজ করতে পারবেন না।” কম্পানিটি ২৭/২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছে এবং শিক্ষাগত পাঠ্যক্রমের উন্নতির মাধ্যমে দক্ষ প্রকৌশলী তৈরিতে সহায়তা করছে। টেকনোহেভেন কম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, দেশের আইটি কম্পানিগুলো সাধারণত অল্প পুঁজি নিয়ে কাজ করে কিন্তু সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, ‘স্টার্টআপ কম্পানিগুলোর সরকারের অনুদান পেলে তারা মানবসম্পদ বিকাশে সহায়তা করতে পারবেন।’ তিনি আরো বলেন, বেসরকারি খাত, একাডেমিয়া এবং সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা বিশেষজ্ঞদের একটি উচ্চ পর্যায়ের পুল তৈরি করে প্রতিভাবান প্রকৌশলীদের এ শিল্পে যোগ দিতে উৎসাহিত করতে সহায়তা করতে পারে। মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও, বেসিস এবং বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিএমসিসিআই) প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেছেন, “প্রতিবেশী ভারত সেমিকন্ডাক্টর তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি আর্থিক সহায়তা, ট্যাক্স বিরতি প্রসারিত করে, তবে সংস্থাগুলো আরো উৎসাহ পেত।” ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক তাপস কুমার মজুমদার বলেছেন, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিনিয়োগের পরিকল্পনা ছিল কিন্তু কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের প্রয়োজন একটি দেশের বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে। এ ছাড়া প্রয়োজন পড়ে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের।’ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পরিচালক (কারিগরি) গোলাম সারোয়ার ভূইয়া বলেছেন, তারা সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী একটি পরীক্ষাগার স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন। বিশ্বব্যাংকের (ডব্লিউবি) প্রকল্পের অধীনে দক্ষতা-উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে তিনি বলেছেন। বিএমসিসিআই-এর সভাপতি শাব্বির এ খান বলেছেন, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ইন্টেলের ৭০ বিলিয়ন ডলারসহ মালয়েশিয়ায় প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিনিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এর অধীনে প্রশিক্ষণের জন্য মালয়েশিয়ার একটি প্রতিনিধি দল আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে বাংলাদশ সফর করতে পারে।’ SHARES অর্থনৈতিক বিষয়: সেমিকন্ডাক্টর
শিল্পবিষয়ক তথ্যে বলা হচ্ছে, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বছরে প্রায় ২৫ হাজার স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তৈরি হচ্ছেন। দ্রুত বর্ধনশীল বিশ্ব অর্থনীতির সম্ভাবনাটা আঁকড়ে ধরতে এরাই সম্পদ হিসেবে কাজ করবে। নতুন নতুন স্টার্টআপ গড়ে ওঠার কারণে মাল্টিবিলিয়ন-ডলারের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ঝাপটা এসে পড়েছে বাংলাদেশেও। এ খাতের বোদ্ধাদের মতে, দেশের প্রায় ৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে অগণিত প্রকৌশলী তৈরি হচ্ছে, তাতে চিপস নির্মাতারাও আউটসোর্সিংয়ের সুযোগ খুঁজে পেতে কোমর বেঁধে নেমেছেন।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে সারা বিশ্বের ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তি খাতে সেমিকন্ডাক্টর বা মাইক্রোচিপ ম্যানুফ্যাকচারিং খাত দ্রুত ক্রমবর্ধমান শিল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তারা বলছেন, সরকারি খরচে দেশের প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তারা চিপের নকশা ও কিছু অ্যাসেম্বলিংয়ের কাজ করতে পারবেন। এমনটা করে সরকার বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্রের দেশ এমনটা করছে।
এশিয়ার অনেক দেশ এই বাজার ধরতে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করছে। ভারত, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সেমিকন্ডাক্টর খাত থেকে বিপুল অঙ্কের আয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানে দেশে সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন থেকে আয় মাত্র ১০০ মিলিয়ন ডলার। এই আয় ৫০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তবে তা কয়েক বিলিয়ন ডলার করার সুযোগ রয়েছে।
এ জন্য বেসরকারি খাতের উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কৌশল এবং ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থা ‘ম্যাকিনসি অ্যান্ড কম্পানি’ জানিয়েছে, বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে এক ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সাবেক সভাপতিও এবং টেকনোহেভেন কম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেছেন, ‘দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে বিশ্বব্যাপী এক ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ৩.০ শতাংশ থেকে ৪.০ শতাংশ দখল করার সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে।’ বর্তমানে বাংলাদেশে তিনটি কম্পানি চিপ ডিজাইনে নিয়োজিত রয়েছে। এদের মধ্যে দুটি বড় কম্পানি ‘উল্কাসেমি’ ও ‘নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর লিমিটেড’।
এ ছাড়া ‘প্রাইম সিলিকন’ সর্বশেষ টেকনো শিল্পের আরেকটি কম্পানি, যেটি গত ১২-১৩ বছর ধরে প্রিফেব্রিকেশনের কাজ করে আসছে। ২০০৭ সালে স্টার্টআপ শুরু করার পর থেকে, উল্কাসেমি কম্পানির বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৫টি ক্লায়েন্ট রয়েছে। এদের তালিকায় অ্যাপল ও তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি লিমিটেড (টিএসএমসি)-এর মতো বড় কম্পানির নামও রয়েছে। চিপ ডিজাইনিংয়ে বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা তাদের সহায়তা করছেন। এদিকে ডিবিএল গ্রুপের নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর কম্পানিটি, ‘ভিএলএসআই’ ডিজাইনে বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া এই শিল্পের জন্য রিসোর্স তৈরিতে সহায়তা করার জন্য ২৭-২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছে। উল্কাসেমি কম্পানিটি কালিয়াকৈরের হাই-টেক পার্কে জমি পেয়েছে। যেখানে ভবিষ্যতে পরীক্ষা এবং প্যাকেজিংয়ের জন্য একটি সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট স্থাপন করবে তারা। উল্কাসেমির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনায়েতুর রহমানকে দেশে এই শিল্প প্রতিষ্ঠার একজন অগ্রদূত বলা যায়। তিনি এমন একটি বাজার ধরার উদ্যোগ নেন, যা তার কম্পানিটি শুরুর দেড় দশকের মধ্যেই ৬০ হাজার কোটি ডলারে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত একটি বাজার তৈরিতে উল্কাসেমি, নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর, প্রাইম সিলিকন ও টোটোন ইলেকট্রনিকসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প এগিয়ে নিচ্ছে। দেশের দুটি বড় কম্পানি ওয়ালটন ও এসিআই এই শিল্পে প্রবেশের উদ্যোগ নিচ্ছে। ওয়ালটন এরই মধ্যে কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে জায়গা করে নিয়েছে। উল্কাসেমির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমান সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাপল, গুগল এবং ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের কাছ থেকে উল্লেখ্যযোগ্য হারে কাজ পাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বব্যাপী ক্লায়েন্টদের মধ্যে প্রিফেব্রিকেশন পর্যায়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘বাংলাদেশে উল্কাসেমির ৩০০ জনের বেশি প্রকৌশলী রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে রয়েছেন ৩৫, কানাডায় রয়েছেন ৩০ জন এবং ভারতে ১০০ জন প্রকৌশলী রয়েছেন বলে আমার ধারণা।’ নিউরাল সেমিকন্ডাক্টরের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) মো সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, তাদের কম্পানি বুয়েটের ২০ জন প্রকৌশলী নিয়ে ২০১৭ সালে ব্যবসা শুরু করেছিল। বর্তমানে ১০০ জনের বেশি প্রকৌশলী এখানে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্লায়েন্টদের প্রয়োজন মেটাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মালয়েশিয়াতে অফিস নিচ্ছি।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং মালয়েশিয়ার চার থেকে পাঁচজন নিয়মিত গ্রাহক রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, রিসোর্স বিল্ড আপের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগের প্রয়োজন। কারণ প্রশিক্ষণ সফ্টওয়্যারের লাইসেন্স পাওয়া বেশ ব্যয়বহুল। চিপ ডিজাইন রপ্তানি করে ভারত ৪০ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। যা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সমতুল্য বলে তিনি জানান। এটাকে তিনি সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের সম্ভাবনার একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা এখন এ শিল্পে ‘টেক-অফ’ পর্যায়ে রয়েছি, যেখানে বিশাল স্কেলে সম্পদ তৈরির জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কারণ শুধুমাত্র সদ্য পাস করা নতুন প্রকৌশলীরা এ কাজ করতে পারবেন না।” কম্পানিটি ২৭/২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছে এবং শিক্ষাগত পাঠ্যক্রমের উন্নতির মাধ্যমে দক্ষ প্রকৌশলী তৈরিতে সহায়তা করছে। টেকনোহেভেন কম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, দেশের আইটি কম্পানিগুলো সাধারণত অল্প পুঁজি নিয়ে কাজ করে কিন্তু সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, ‘স্টার্টআপ কম্পানিগুলোর সরকারের অনুদান পেলে তারা মানবসম্পদ বিকাশে সহায়তা করতে পারবেন।’ তিনি আরো বলেন, বেসরকারি খাত, একাডেমিয়া এবং সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা বিশেষজ্ঞদের একটি উচ্চ পর্যায়ের পুল তৈরি করে প্রতিভাবান প্রকৌশলীদের এ শিল্পে যোগ দিতে উৎসাহিত করতে সহায়তা করতে পারে। মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও, বেসিস এবং বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিএমসিসিআই) প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেছেন, “প্রতিবেশী ভারত সেমিকন্ডাক্টর তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি আর্থিক সহায়তা, ট্যাক্স বিরতি প্রসারিত করে, তবে সংস্থাগুলো আরো উৎসাহ পেত।” ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক তাপস কুমার মজুমদার বলেছেন, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিনিয়োগের পরিকল্পনা ছিল কিন্তু কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের প্রয়োজন একটি দেশের বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে। এ ছাড়া প্রয়োজন পড়ে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের।’ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পরিচালক (কারিগরি) গোলাম সারোয়ার ভূইয়া বলেছেন, তারা সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী একটি পরীক্ষাগার স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন। বিশ্বব্যাংকের (ডব্লিউবি) প্রকল্পের অধীনে দক্ষতা-উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে তিনি বলেছেন। বিএমসিসিআই-এর সভাপতি শাব্বির এ খান বলেছেন, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ইন্টেলের ৭০ বিলিয়ন ডলারসহ মালয়েশিয়ায় প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিনিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এর অধীনে প্রশিক্ষণের জন্য মালয়েশিয়ার একটি প্রতিনিধি দল আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে বাংলাদশ সফর করতে পারে।’