নারীদের বাড়ির কাজের বার্ষিক মূল্য ৫৩০ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১০:৫২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৯, ২০২৩
ঘরের কাজে নারী। ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রান্নাবান্না ও পরিবারের সদস্যদের সেবাযত্নসহ নিজ বাড়িতে দেশের নারীরা যেসব কাজ করে থাকে তার বার্ষিক মূল্য ৫৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের ১৪.৮ শতাংশ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

বাড়িতে নারীর কাজের মূল্য ৫৩০ কোটি টাকা

সম্মেলনে ‘নারীর অবৈতনিক ও অ-বিপণন কাজ’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। মূলত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোর ‘টাইম ইউজ সার্ভের’ প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতিবেদনটি করা হয়।

গবেষণা সম্মেলনে বলা হয়, করোনার কারণে নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়ে ২.৮ মিলিয়ন বা ২৮ লাখ মানুষ। ২০২২ সালের হিসাবে দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে করোনা। একই বছর মন্দার কারণে বাড়তি ৫০ হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে। আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কাও করেন গবেষকরা।

এমন যেকোনো নিষেধাজ্ঞা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এদিন ছয়টি অধিবেশনে প্রায় ৯টি পেপার ও দুটি পাবলিক লেকচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনব্যাপী বিভিন্ন অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।

বিনায়ক সেন বলেন, শ্রীলঙ্কার নারীদের অবৈতনিক গৃহকর্মের বার্ষিক মূল্য তাদের জিডিপির ১৫ শতাংশ আর ২০১৯ সালের হিসাবে ভারতে তা ১৪ শতাংশ।

বাংলাদেশে নারীরাই যে শুধু ঘরের কাজ করে তা নয়, এর পাশাপাশি পুরুষরাও কাজ করে। পুরুষদের এই কাজের অবদান জিডিপির প্রায় ২.৮ শতাংশ। 

বিআইডিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গৃহস্থালির কাজের বিনিময়ে ৭৫ শতাংশ পারিশ্রমিক ধরা হলেও জিডিপিতে আরো ১৩ শতাংশ অবদান যুক্ত হতে পারে, যেখানে নারীদের অবদান থাকছে ১১ শতাংশ ও পুরুষের অবদান ২ শতাংশ। এমনকি ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক দিলেও জিডিপিতে আরো ৮.৮ শতাংশ অবদান বাড়ত।

যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে 

করোনা মহামারি বিশ্বব্যাপী নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য হারকে উসকে দিয়েছে।

কভিডের প্রভাবে ২০২২ সালে বাংলাদেশে নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে পতিত ২৮ লাখ মানুষ। বৈশ্বিক নিম্ন প্রবৃদ্ধি আরো ৫০ হাজার মানুষকে এ বছর দারিদ্র্যসীমায় ঠেলে দিতে পারে। এ বছর একই সঙ্গে বাড়বে অপুষ্টির হার। তবে বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তা সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। 

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশের সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক খাদ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএফপিআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড্যানিয়েল রেস্নিক।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বৈশ্বিক নিম্ন প্রবৃদ্ধির হার এ বছর বাংলাদেশে আরো ৫০ হাজার মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিতে পারে। নতুন করে অপুষ্টির শিকার হতে পারে আরো দুই লাখ মানুষ। কভিড ও যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক খাদ্যবাজারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। এর প্রভাবে ২০২২ সালে বাংলাদেশের নতুন করে ২৮ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে। একই সময়ে নতুন করে অপুষ্টির শিকার হয়েছে ৩১ লাখ মানুষ, যা এ বছর ৩৩ লাখে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।

আইএফপিআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড্যানিয়েল রেস্নিক বলেন, আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন যেকোনো নিষেধাজ্ঞা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ শতাংশ স্নাতক বেকার

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা দেশের বিভিন্ন কলেজ থেকে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীদের ৪২ থেকে ৪৮ শতাংশ বেকার অবস্থায় আছেন। ২০২১ সালে এ হার ছিল ৬৬ শতাংশ। বিআইডিএসের করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের কর্মসংস্থানের ফলাফল শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৪২ থেকে ৪৮ শতাংশই বেকার অবস্থায় রয়েছেন। বেকার অবস্থায় থাকাদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি বিএ পাস করেছিলেন। ২৩ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে স্নাতক অর্জন করেছেন। লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্টে পাস করেছেন প্রায় ২১ শতাংশ। বেকারদের ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ পাস করেছেন ইসলামের ইতিহাস ও বাংলায়।

তবে তাঁদের মধ্যে ইংরেজিতে স্নাতক করা শিক্ষার্থীরা কম বেকার হয়েছেন। অর্থনীতি ও হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরাও বেকারত্বের শিকার হয়েছেন কম। তবে সামাজিক বিজ্ঞান এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ের শিক্ষার্থীদের প্রায় ১ শতাংশ বেকার।

দেশের ৬১টি কলেজের এক হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী এবং ৬১ জন অধ্যক্ষের সাক্ষাৎকার নিয়ে এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।