সমঝোতার আসনে ৮৮ স্বতন্ত্র, ৫৬ জনই আ. লীগের ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ১:২৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩ নিজস্ব প্রতিনিধি আওয়ামী লীগ থেকে ছাড় পাওয়া জাতীয় পার্টির ২৬ আসনে ৮৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। তাঁদের ৫৬ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ মোট স্বতন্ত্রের ৬৬ শতাংশই আওয়ামী লীগের ঘরের ছেলে। তাঁরা দলের বিভিন্ন পদে আছেন। ফলে ভোটে তাঁরা দলের কর্মী-সমর্থকদের একটা অংশের সমর্থন পাবেন। বাকি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অন্যান্য দলের। একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি যে ২৩টি আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল তার ১৬টিতে এবারও তারা নৌকা প্রতীক পেয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি। এর বাইরে নতুন করে আরো ৯টি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে স্বতন্ত্র, আওয়ামী লীগ এবং জোটের শরিকদেরও কোনো প্রার্থী নেই। পটুয়াখালী-১ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। তবে আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী আছে সেখানে। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা মনোনয়নপত্রের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছাড় পাওয়া আসনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম ঠাকুরগাঁও-৩ ও কুড়িগ্রাম-১ আসনে একজন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। বেশি স্বতন্ত্র বগুড়া-৩ আসনে, আটজন। আর মোট প্রার্থীর বিবেচনায় বেশি প্রার্থী রয়েছেন বগুড়া-৩, গাইবান্ধা-১ আসনে, ১৬ জন করে। কিছু আসনে এক পরিবার থেকে একজনকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আবার একই আসনে ওই পরিবারের অন্য কোনো সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে তাঁরা মূল প্রার্থীর ডামি হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন। একাধিক আসন আছে যেখানে এবার নৌকা না পাওয়া বর্তমান সংসদ সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচন থেকে সরে আসা জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ গত বৃহস্পরিবার কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করবে। নৌকার প্রার্থীদের মাঝেও স্বতন্ত্র নিয়ে অস্বস্তি আছে। কাজী ফিরোজ রশীদ ঢাকা-৬ আসন থেকে একাদশ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন। এবার এই আসন আওয়ামী লীগ জাপাকে ছাড় দেয়নি। ফলে তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসেন। জাতীয় পার্টির আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, এটা নির্বাচনী কৌশলের অংশ। শেষ মুহূর্তে কোন দল কোন দিকে মোড় নেবে তা অনুমান করা কঠিন। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার লক্ষ্যেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গত রবিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কোনো জোট হয়নি। আসন সমঝোতা হয়নি। তবে কিছু আসনের ক্ষেত্রে কিছু কৌশল রয়েছে। সমঝোতায় নতুন আসন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় জাতীয় পার্টিকে নতুন ৯টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আসনগুলো হলো কুড়িগ্রাম-১, গাইবান্ধা-২, সাতক্ষীরা-২, পটুয়াখালী-১, ময়মনসিংহ-৪, মানিকগঞ্জ-১, ঢাকা-১৮, হবিগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও চট্টগ্রাম-৮ আসন। আগে ছিল কিন্তু এবার ছাড় পাওয়া যায়নি এমন আসনগুলো হলো লালমনিরহাট-৩, বরিশাল-৬, ময়মনসিংহ-৫, ঢাকা-৪, ঢাকা-৮, নারায়ণগঞ্জ-৩ ও সুনামগঞ্জ-৪। ব্যতিক্রম নারায়ণগঞ্জ-৫ ও পটুয়াখালী-১ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৬৩ আসনে সরাসরি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা ভোটের মাঠে লড়বেন। বাকি আসনগুলোর মধ্যে ছয়টি আসন জোটের শরিকদের মধ্যে নৌকা বণ্টন করা হয়েছে। ২৬ আসনে নৌকা দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীতরা যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন। বাকি একটি আসন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-৫। এই আসনে শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। এ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান প্রার্থী। এই আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও নেই। পটুয়াখালী-১ আসনে আটজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এই আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ে তিনি জাতীয় পার্টি মহাসচিব ছিলেন। বাকি আসনের অবস্থা একাদশ জাতীয় সংসদ ও দ্বাদশ নির্বাচনে কমিশনের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ এবারও জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এই আসনে জাতীয় পার্টি ছাড়া প্রার্থী আছেন পাঁচজন। তার মধ্যে স্বতন্ত্র একজন। আছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী। নীলফামারী-৩ আসনে এবার প্রার্থী হয়েছেন ১২ জন। বর্তমান সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল জাপার প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ছয়জন। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপি, জাসদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও গণতন্ত্রী পার্টি নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। এখানেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের জোটের প্রার্থী তিনটি। নীলফামারী-৪ আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন দাখিল করেছেন ১০ জন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান। স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন তিনজন। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, জাসদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা এবার মনোনয়ন পাননি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন হোসেন মকবুল শাহরিয়ার। এই আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ১২ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন পাঁচজন। এখানেও আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী তুলে নিয়েছে। এই আসনে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মো. আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। এই আসনেও আওয়ামী লীগের জোটের প্রার্থী রয়েছে তিনজন। রংপুর-১ আসনে পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর তিনজনই আওয়ামী লীগ ঘরানার। আর রংপুর-৩ আসনে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের কেউ নেই। রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এইচ এম এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি এরশাদকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন এইচ এম এরশাদের ভাই জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের। আসনটিতে মোট ৯ প্রার্থীর দুজন স্বতন্ত্র। ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। এ ছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ও বাংলাদেশ কংগ্রেসেরও প্রার্থী রয়েছেন। কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ। এই আসনে মোট ১০ প্রার্থীর চারজন স্বতন্ত্র। গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী মনোনয়ন পেয়েছেন। এই আসনে মোট ১৬ প্রার্থীর চারজন স্বতন্ত্র। গাইবান্ধা-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ সারোয়ার কবীর। বগুড়া-২ আসনে ১০ প্রার্থীর তিনজন স্বতন্ত্র। দুজন আওয়ামী লীগের জোটের শরিকদের প্রার্থী। এই আসনে জাপার প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম। উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আকরাম হোসেনও এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী। বগুড়া-৩ আসনে মোট ১৬ প্রার্থীর আটজনই স্বতন্ত্র। বরিশাল-৩ আসনে ৯ প্রার্থীর দুজন স্বতন্ত্র। পিরোজপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী মনোনয়ন পাননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন মো. মশরেকুল আজম। এই আসনে মোট ১৪ প্রার্থীর চারজন স্বতন্ত্র। ময়মনসিংহ-৮ আসনে সাতজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই আসনে জাপার প্রার্থী ফখরুল ইমাম। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান সুমন ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি মো. বদরুল আলম। কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাঁচজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী। চট্টগ্রাম-৮ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলাইমান আলম শেঠ। স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের ট্রেজারার আবদুস সালাম। SHARES রাজনীতি বিষয়: #আওয়ামী লীগে
আওয়ামী লীগ থেকে ছাড় পাওয়া জাতীয় পার্টির ২৬ আসনে ৮৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। তাঁদের ৫৬ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ মোট স্বতন্ত্রের ৬৬ শতাংশই আওয়ামী লীগের ঘরের ছেলে। তাঁরা দলের বিভিন্ন পদে আছেন।
ফলে ভোটে তাঁরা দলের কর্মী-সমর্থকদের একটা অংশের সমর্থন পাবেন। বাকি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অন্যান্য দলের। একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি যে ২৩টি আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল তার ১৬টিতে এবারও তারা নৌকা প্রতীক পেয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি।
এর বাইরে নতুন করে আরো ৯টি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে স্বতন্ত্র, আওয়ামী লীগ এবং জোটের শরিকদেরও কোনো প্রার্থী নেই। পটুয়াখালী-১ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। তবে আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী আছে সেখানে।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা মনোনয়নপত্রের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছাড় পাওয়া আসনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম ঠাকুরগাঁও-৩ ও কুড়িগ্রাম-১ আসনে একজন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। বেশি স্বতন্ত্র বগুড়া-৩ আসনে, আটজন। আর মোট প্রার্থীর বিবেচনায় বেশি প্রার্থী রয়েছেন বগুড়া-৩, গাইবান্ধা-১ আসনে, ১৬ জন করে। কিছু আসনে এক পরিবার থেকে একজনকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আবার একই আসনে ওই পরিবারের অন্য কোনো সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
স্থানীয়ভাবে তাঁরা মূল প্রার্থীর ডামি হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন। একাধিক আসন আছে যেখানে এবার নৌকা না পাওয়া বর্তমান সংসদ সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচন থেকে সরে আসা জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ গত বৃহস্পরিবার কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করবে। নৌকার প্রার্থীদের মাঝেও স্বতন্ত্র নিয়ে অস্বস্তি আছে। কাজী ফিরোজ রশীদ ঢাকা-৬ আসন থেকে একাদশ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন। এবার এই আসন আওয়ামী লীগ জাপাকে ছাড় দেয়নি। ফলে তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসেন। জাতীয় পার্টির আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, এটা নির্বাচনী কৌশলের অংশ। শেষ মুহূর্তে কোন দল কোন দিকে মোড় নেবে তা অনুমান করা কঠিন। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার লক্ষ্যেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গত রবিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কোনো জোট হয়নি। আসন সমঝোতা হয়নি। তবে কিছু আসনের ক্ষেত্রে কিছু কৌশল রয়েছে। সমঝোতায় নতুন আসন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় জাতীয় পার্টিকে নতুন ৯টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আসনগুলো হলো কুড়িগ্রাম-১, গাইবান্ধা-২, সাতক্ষীরা-২, পটুয়াখালী-১, ময়মনসিংহ-৪, মানিকগঞ্জ-১, ঢাকা-১৮, হবিগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও চট্টগ্রাম-৮ আসন। আগে ছিল কিন্তু এবার ছাড় পাওয়া যায়নি এমন আসনগুলো হলো লালমনিরহাট-৩, বরিশাল-৬, ময়মনসিংহ-৫, ঢাকা-৪, ঢাকা-৮, নারায়ণগঞ্জ-৩ ও সুনামগঞ্জ-৪। ব্যতিক্রম নারায়ণগঞ্জ-৫ ও পটুয়াখালী-১ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৬৩ আসনে সরাসরি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা ভোটের মাঠে লড়বেন। বাকি আসনগুলোর মধ্যে ছয়টি আসন জোটের শরিকদের মধ্যে নৌকা বণ্টন করা হয়েছে। ২৬ আসনে নৌকা দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীতরা যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন। বাকি একটি আসন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-৫। এই আসনে শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। এ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান প্রার্থী। এই আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও নেই। পটুয়াখালী-১ আসনে আটজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এই আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ে তিনি জাতীয় পার্টি মহাসচিব ছিলেন। বাকি আসনের অবস্থা একাদশ জাতীয় সংসদ ও দ্বাদশ নির্বাচনে কমিশনের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ এবারও জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এই আসনে জাতীয় পার্টি ছাড়া প্রার্থী আছেন পাঁচজন। তার মধ্যে স্বতন্ত্র একজন। আছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী। নীলফামারী-৩ আসনে এবার প্রার্থী হয়েছেন ১২ জন। বর্তমান সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল জাপার প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ছয়জন। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপি, জাসদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও গণতন্ত্রী পার্টি নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। এখানেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের জোটের প্রার্থী তিনটি। নীলফামারী-৪ আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন দাখিল করেছেন ১০ জন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান। স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন তিনজন। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, জাসদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা এবার মনোনয়ন পাননি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন হোসেন মকবুল শাহরিয়ার। এই আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ১২ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন পাঁচজন। এখানেও আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী তুলে নিয়েছে। এই আসনে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মো. আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। এই আসনেও আওয়ামী লীগের জোটের প্রার্থী রয়েছে তিনজন। রংপুর-১ আসনে পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর তিনজনই আওয়ামী লীগ ঘরানার। আর রংপুর-৩ আসনে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের কেউ নেই। রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এইচ এম এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি এরশাদকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন এইচ এম এরশাদের ভাই জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের। আসনটিতে মোট ৯ প্রার্থীর দুজন স্বতন্ত্র। ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। এ ছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ও বাংলাদেশ কংগ্রেসেরও প্রার্থী রয়েছেন। কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ। এই আসনে মোট ১০ প্রার্থীর চারজন স্বতন্ত্র। গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী মনোনয়ন পেয়েছেন। এই আসনে মোট ১৬ প্রার্থীর চারজন স্বতন্ত্র। গাইবান্ধা-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ সারোয়ার কবীর। বগুড়া-২ আসনে ১০ প্রার্থীর তিনজন স্বতন্ত্র। দুজন আওয়ামী লীগের জোটের শরিকদের প্রার্থী। এই আসনে জাপার প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম। উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আকরাম হোসেনও এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী। বগুড়া-৩ আসনে মোট ১৬ প্রার্থীর আটজনই স্বতন্ত্র। বরিশাল-৩ আসনে ৯ প্রার্থীর দুজন স্বতন্ত্র। পিরোজপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী মনোনয়ন পাননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন মো. মশরেকুল আজম। এই আসনে মোট ১৪ প্রার্থীর চারজন স্বতন্ত্র। ময়মনসিংহ-৮ আসনে সাতজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই আসনে জাপার প্রার্থী ফখরুল ইমাম। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান সুমন ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি মো. বদরুল আলম। কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাঁচজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী। চট্টগ্রাম-৮ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলাইমান আলম শেঠ। স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের ট্রেজারার আবদুস সালাম।