অজ্ঞাতদের নামে মামলা, ফুটেজ যাচাই চলছে

প্রকাশিত: ৭:২১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় কমলাপুর রেলওয়ে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রেলওয়ের ট্রেন পরিচালক খালেদ মোশাররফ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কমকত (ওসি) ফেরদাউস আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নাশকতা ও হত্যার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলায় অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে। 

রেলওয়ে পুলিশ জানায়, রেলওয়ে পুলিশ, র‍্যাব, থানা-পুলিশ, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমসহ (সিটিটিসি) বিভিন্ন ইউনিট ঘটনা তদন্তে মাঠে কাজ শুরু করেছে।

এর আগে রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘তেজগাঁওয়ে ট্রেনে অগুনের ঘটনায় রেলের” ডিস্ট্রিক্ট ট্রান্সপোর্ট অফিসার”কে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

 

গতকাল মঙ্গলবার ভোরের দিকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তরা অগুন দেয়। এ ঘটনায় মা ও শিশুসন্তানসহ চার যাত্রীর মৃত্যু হয়।

ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্য মতে, মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটি বগিতে আগুন দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

সকাল পৌনে ৭টার দিকে আগুন নির্বাপণ হয়। পরে একটি বগি থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আগুনের ঘটনায় জড়িতদের সম্পকে গুরুত্বপুন তথ্য পেয়ে যাচাই বাছাই করছেন তারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সৈনিক ক্লাব পর্যন্ত দুই শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের কাজ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর সৈনিক ক্লাবের আগে ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।’

 

রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা জেলার এসপি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যায়নি। রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।’

জানতে চাইলে তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার গোলাম সবুর বলেন, ‘উত্তরা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা এখনও পর্যন্ত সন্দেহভাজন কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি, চেষ্টা চলছে। সম্ভাব্য সব সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ শুরু করেছি। আমরা এর প্রমাণও পেয়েছি। অর্থাৎ আগুন কোন এলাকায় লাগানো হয়েছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে সিসিটিভি ফুটেজে।’

সংগ্রহ করা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত আমরা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে কোনো আগুন বা ধোঁয়ার আলামত পাইনি। তবে, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর সৈনিক ক্লাব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে আগুনের আলামত স্পষ্ট দেখা গেছে।’

উপ-কমিশনার আরো বলেন, ‘সৈনিক ক্লাব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের পর এটি স্পষ্ট মনে হয়েছে যে, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে উঠে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর আগুন দেওয়া হয় ট্রেনটিতে।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সৈনিক ক্লাবের আগের কোনো সিসিটিভিতে আমরা ট্রেনটিতে আগুন কিংবা ধোঁয়ার আলামত দেখতে পাইনি। এ ছাড়া, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই ট্রেনটি স্টেশন ত্যাগ করে।’

ডিবি সূত্র জানায়, ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের আগে ট্রেনটির যাত্রাবিরতির স্টেশন ছিল গফরগাঁও ও ময়মনসিংহ জংশনে। টঙ্গীতেও ট্রেনটি থামেনি। আর বাইরে থেকে দেখার সুযোগও নেই যে কেও আগুন লাগাচ্ছে কি না। এতে ধারণা স্পষ্ট যে, আগুন বিমানবন্দর স্টেশনে দেওয়া হয়নি। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের পর আগুন দেওয়া হয়।

ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর আগুন দৃশ্যমান হয় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন স্টেশনটির মাস্টার, লাইনম্যান ও সিগন্যালম্যান।