রূপগঞ্জসহ দেশের ৮ স্থানে হামলা-সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ১১:৪৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২২, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জসহ দেশের আট স্থানে নির্বাচনী হামলা-সংঘর্ষ হয়েছে। গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবারের এসব ঘটনায় ২৮ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে রূপগঞ্জে নৌকার প্রার্থী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর কর্মী-সমর্থকদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ১০ জন আহত হয়েছে।

অন্যদিকে মাদারীপুরের কালকিনিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিছিলে বোমা হামলা চালানো হয়েছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ও পোস্টার ছেঁড়ারও ঘটনা ঘটেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— 

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়গঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর কর্মী-সমর্থকদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলি ও কাঞ্চন পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুর রহিম লিটুর পক্ষের লোকজনের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।

 

এ সময় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটজনকে আটক করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কাঞ্চন বাজারে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে ১০ জনকে। তারা হলো জহিরুল হক, রিফাত, আবুল কালাম, শরিফ, আলামিন, শাকিল হোসেন, আমিনুদ্দিন, কাজী অনিক, আফজাল ও মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলির সঙ্গে কাঞ্চন পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুর রহিম লিটুর বিরোধ চলছে। প্রায়ই দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় দুই পক্ষই মাঠে রয়েছে।

 

দুই পক্ষই পেশিশক্তি দেখাতে এবং অপর পক্ষের লোকজনকে নিজের পক্ষে আনতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। এসব বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। দুই পক্ষই সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে আব্দুর রহিম লিটুর লোকজন রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে গোলাম রসুল কলির ভাই নূর হোসেনের মুসলিম সুইটস অ্যান্ড হোটেলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

এ সময় বাজারে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে চলে যান। এক পর্যায়ে গোলাম রসুল কলির লোকজন গিয়ে প্রতিবাদ করলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে আহতদের স্থানীয় ও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভোলাবো তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ভুক্তভোগী নুর হোসেন বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই অহেতুক আব্দুর রহিম লিটুর সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং নগদ টাকা ও মালপত্র লুট করে নিয়ে যায়।’

অন্যদিকে লিটুর পক্ষের লোকজনের দাবি, তাদের ওপর প্রথমে হামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপঙ্কর সাহা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। মূল ঘটনা উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছে।

কালকিনি (মাদারীপুর) : গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের মৃধাবাড়ি মোড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিছিলে বোমা হামলা চালানো হয়। এ সময় দুই পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও আহত ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের পক্ষে (ইগল) মিছিল বের করেন তাঁর কর্মী-সমর্থকরা। মিছিলে বাধা দেন নৌকার কর্মী-সমর্থকরা। এ সময় হঠাৎ হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হলে ১০ জন আহত হন।

লক্ষ্মীপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন গেন্দু কাজী বলেন, ‘আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার করছিলাম। এ সময় হঠাৎ হামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও নৌকার সমর্থক ফজলুল হক বেপারী ও তাঁর লোকজন। এ সময় তাঁরা ককটেল বোমা ফাটান।’

তবে ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন বোমা মেরে নিজেরাই আহত হয়েছে।’

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফের সমর্থক ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রউফের সমর্থকদের মাইক্রোবাস ও নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর এবং পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করা হয়েছে।

গত বুধবার সন্ধ্যায় কুমারখালীর সোন্দাহ নন্দলালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গাড়ি, রাত ৯টার দিকে কয়া বাজারে নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও রাত ১১টার দিকে বহলবাড়িয়া মোড়ে সমর্থকদের ওপর হামলা ও পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনা ঘটে।

এদিকে রাত ৮টার দিকে নন্দলালপুরে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় নৌকার সমর্থক এক ইউপি সদস্যকে এক দিনের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাঁর নাম শরিফুল ইসলাম।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলের নির্বাচনী কার্যালয়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় ছয়জন আহত হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের গোয়ালপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে আকিজ লস্কর (৩৭), আকাশ মণ্ডল (২২) ও আব্বাস আলীকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শাহীন উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সালাম। অন্যদিকে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন। গত বুধবার রাতে সুন্দাইল এলাকায় তুহিনের পক্ষে প্রচারপত্র বিলি করার সময় নৌকার সমর্থকদের হামলার শিকার হন তাঁর কর্মী গাঙাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাদেক হোসেন ভুইয়া (৩৫)। তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ মোবারক হোসেন (৩৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

দুর্গাপুর (রাজশাহী) : রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচনী অনুসন্ধান টিমের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্গাপুরের কাঁঠালবাড়িয়া বাজারে ইগল প্রতীকের প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ দারার সমর্থকরা। ওই সময় আব্দুল ওয়াদুদ দারা কাঁঠালবাড়িয়া বাজারে গণসংযোগ করছিলেন।

দুর্গাপুর থানার ওসি খাইরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। সাময়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লেও পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক রয়েছে।

জামালপুর : জামালপুর-৫ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. রেজাউল করিমের (ইগল) নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্রে হামলা, চেয়ার ভাঙচুর ও লুটের ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার রাতে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম ফুলবাড়িয়া বউবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ইগল প্রতীকের ওই নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক কাউন্সিলর মো. সুরুজ্জামান গত বুধবার সন্ধ্যায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তাঁরা চলে যাওয়ার পর রাত ১০টার দিকে কয়েকজন যুবক হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে বিপুল মিয়া নামের একজনকে আটক করে।

আদমদীঘি (বগুড়া) : বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অজয় কুমার সরকারের কর্মীকে মারধর করে হ্যান্ড পোস্টার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে আদমদীঘি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রশিদুল ইসলামের ওই কর্মী। এর আগে দুপুরে উপজেলার জনতা ব্যাংকের সামনে ঘটনাটি ঘটে।