ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের ৮০তম দিনের উল্লেখযোগ্য খবর

প্রকাশিত: ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩
২৫ ডিসেম্বর গাজার আল-আকসা হাসপাতালে একটি গণশেষকৃত্য চলাকালীন ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি হামলায় নিহত আত্মীয়দের জন্য শোক প্রকাশ করছে। ছবি : এএফপি

নিজস্ব প্রতিনিধি

ইসরায়েলি হামলা সোমবারও গাজাকে বিপর্যস্ত করেছে। যুদ্ধ বড়দিনের উৎসবকেও বাধাগ্রস্ত করেছে। হামাস শাসিত ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ অঞ্চলজুড়ে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

হামাস ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি নজিরবিহীন হামলা চালায়।

ইসরায়েলি সরকারের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ১৪০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। পাশাপাশি হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে ১০৫ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে। 

অন্যদিকে হামলার জবাবে হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। তখন থেকে গাজায় নিরলস বিমান ও স্থল হামলা চলছে।

এতে বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ হাজার ৬৭৪ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশ নারী এবং শিশু। আহত হয়েছে সাড়ে ৫৪ হাজারের মতো। 

যুদ্ধের ৮০তম দিনের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য খবর :

প্রাণঘাতী হামলায় নিহত ৭০
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রবিবার গভীর রাতে ইসরায়েলি হামলায় ভূখণ্ডের কেন্দ্রে আল-মাগাজি শরণার্থীশিবিরে অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছে।

 

ক্যাম্পের বাসিন্দা জেয়াদ আওয়াদ বলেছেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ‘আমার সন্তানদের হৃদয়ে আতঙ্কের বীজ বপন করেছে’। তিনি সেনাদের বিরুদ্ধে ‘নির্বিচারে, করুণা ছাড়াই’ বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ করেছেন।

সেনাবাহিনী বলেছ, তারা ঘটনাটি পর্যালোচনা করছে এবং ‘আন্তর্জাতিক আইনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় আল-জাওয়াইদা এলাকায় ‘একটি বাড়ি লক্ষ্য করে’ ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়েছে। সেখানে নারী, শিশুসহ কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছে।

এ ছাড়া উত্তর গাজায় জাবালিয়া ক্যাম্পে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় এক পরিবারের ১০ জন সদস্য নিহত হয়েছে। দক্ষিণে খান ইউনিসে রাতে হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছে। 

অবশ্য স্বাধীনভাবে এ পরিসংখ্যান যাচাই করা যায়নি।

গাজায় নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি সেনাবাহিনীর আক্রমণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর দল এ তথ্য জানিয়েছে।

নেতানিয়াহু তাঁর লিকুদ পার্টির সদস্যদের এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি এইমাত্র গাজা থেকে ফিরে এসেছি…আমরা থামছি না, আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা আগামী দিনে লড়াই আরো তীব্র করছি।’

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটি একটি দীর্ঘ যুদ্ধ হতে চলেছে, যা শেষ হওয়ার কাছাকাছি নয়।’

আরো খাবার ও পানির আহ্বান ডাব্লিউএইচওর
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) বলেছে, তারা উত্তর গাজার কোনোমতে কাজ করা হাসপাতালগুলোতে মিশন পরিচালনা করছে। সংস্থাটি ক্ষুধার্ত মানুষদের ত্রাণ সরবরাহের একটি ট্রাক কেড়ে নেওয়ার বর্ণনা দিয়েছে।

জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেছেন, মিশনে অংশগ্রহণকারীরা ‘তীব্র ক্ষুধার কারণে হতাশা বৃদ্ধি’ দেখেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডাব্লিউএইচও প্রধান বলেছেন, ‘জনগণের স্বাস্থ্য ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে অংশীদারদের অবিলম্বে খাদ্য ও পানির পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য দাবি করা হচ্ছে।’

জাতিসংঘের নিন্দা করেছে ইসরায়েল
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন জাতিসংঘকে ‘ভণ্ড’ বলে অভিযুক্ত করেছেন এবং যুদ্ধের প্রতি এর প্রতিক্রিয়াকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।

কোহেন বলেছেন, তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, জাতিসংঘের একজন কর্মীর ভিসার মেয়াদ না বাড়াতে এবং অন্য একজনের প্রবেশ প্রত্যাখ্যান করতে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসরায়েলি মন্ত্রী বলেছেন, ‘যারা হামাস সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রোপাগান্ডায় সহযোগিতা করে, আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করা বন্ধ করব।’

যুদ্ধবিরতির আহ্বান পোপের
পোপ ফ্রান্সিস গাজায় ফিলিস্তিনিদের ‘মরিয়া মানবিক পরিস্থিতির’ নিন্দা জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান হিসেবে সম্মানিত অধিকৃত পশ্চিম তীরের শহর বেথলেহেমে বড়দিনের উৎসব এই সংঘর্ষের মধ্যে কার্যকরভাবে বাতিল করা হয়েছিল। এদিন রাস্তায় অল্পসংখ্যক উপাসক বা পর্যটক দেখা গেছে।

সূত্র : এএফপি