ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের ৭৮তম দিনের উল্লেখযোগ্য খবর

প্রকাশিত: ১২:২১ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩
অনুদান পয়েন্টে ফিলিস্তিনিরা খাদ্য সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছে। ২৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাহতে একটি শরণার্থীশিবির থেকে ছবিটি তোলা। ছবি : এএফপি

নিজস্ব প্রতিনিধি

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা উপত্যকায় শনিবার ইসরায়েল নতুন করে হামলা চালিয়েছে। হামাস একটি শরণার্থীশিবিরে ১৮ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে আরো সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে।

হামাস ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি নজিরবিহীন হামলা চালায়।

ইসরায়েলি সরকারের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ১৪০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। 

এ ছাড়া হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর যোদ্ধারা প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করেছে, যাদের মধ্যে ১০৫ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে।

হামলার জবাবে হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইসরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। গাজায় নিরলসভাবে বোমাবর্ষণ করছে এবং স্থল সেনা মোতায়েন করেছে।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের হামাস সরকারের মতে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ২০ হাজার ৫৭ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। 

যুদ্ধের ৭৮তম দিনের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য খবর :

জাতিসংঘের রেজল্যুশনে আরো সাহায্যের আহ্বান
কয়েক দিনের ঝগড়ার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা গাজায় ‘তাৎক্ষণিক, নিরাপদ ও বাধাবিহীন’ জীবন রক্ষাকারী সাহায্যের সরবরাহের দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। তবে ওয়াশিংটনের পীড়াপীড়িতে জাতিসংঘের প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইসরায়েলের আক্রমণ ছিল গাজায় ত্রাণের চালান পৌঁছনোর ‘প্রকৃত সমস্যা’।

 

হামাস এই রেজল্যুশনটিকে ‘অপ্রতুল’ বলে অভিহিত করে বলেছে, এটি ইসরায়েলের সৃষ্ট বিপর্যয়কর পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া হতে পারে না।

ইসরায়েল আবারও হামাসকে ‘নির্মূল’ না করা এবং জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন বলেছেন, ইসরায়েল ‘নিরাপত্তার কারণে গাজায় সব মানবিক সহায়তার পরীক্ষা অব্যাহত রাখবে’।

শরণার্থীশিবিরে মারাত্মক হামলা
হামাস পরিচালিত ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মধ্য গাজার নুসিরাত শরণার্থীশিবিরের একটি বাড়িতে গত রাতের হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছে।

উপকূলীয় গাজা উপত্যকায় অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে বলেও মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

 

গাজায় কোথাও নিরাপদ নয় : জাতিসংঘ 
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মধ্য গাজা উপত্যকার বেসামরিক নাগরিকদের সরে যাওয়ার আদেশ দেওয়ায় চলমান বিমান হামলার কারণে তারা স্থানান্তর হতে বাধ্য হবে।

সংস্থাটি বলেছে, ‘মানুষের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। কোনো জায়গা নিরাপদ নয়।’

‘ইসরায়েল-অধিভুক্ত’ জাহাজে ড্রোন হামলা
একটি ড্রোন হামলায় ভারতের ভেরাভালের জলসীমায় একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দুটি মেরিটাইম এজেন্সি জানিয়েছে। দুটি এজেন্সির একটি বলছে, ট্যাংকারটি ‘ইসরায়েল-অধিভুক্ত’ ছিল।

তাৎক্ষণিকভাবে কেউ হামলার দায় দায় স্বীকার করেনি। কিন্তু হামলাটি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ থেকে আঞ্চলিক উত্তেজনার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।

গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা হামাসের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে লোহিত সাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিপিং লেনে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে।

দুর্ভিক্ষ এবং রোগ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, ‘গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে’, অনেক লোক ‘সারা দিন ও রাত না খেয়ে থাকছে’।

টেড্রোস আরো বলেছেন, কঠোর শীতের কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে ভিড় করা মানুষের মাঝে ‘অনিবার্যভাবে রোগের বিস্তারকে বাড়িয়ে তুলবে’।

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ বলেছে, ‘আগামী সপ্তাহগুলোতে পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত ১০ হাজার শিশু সবচেয়ে প্রাণঘাতী অপুষ্টিতে ভুগবে’।

সূত্র : এএফপি