তিন কিলোমিটার দৃশ্যমান হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ৭:১৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২৪ নিজস্ব প্রতিনিধি যমুনা নদীর ওপর দিয়ে দ্রুতগামী ট্রেন চলাচলে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর কাজ শেষ হয়ে আসছে। মোট ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুর প্রায় তিন কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬.৫০ শতাংশ। ঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সূত্র জানায়, সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের অধীন রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদ আগামী বছরের শেষ দিন পর্যন্ত। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। বর্তমানে একই সঙ্গে সেতু নির্মাণে একদিকে চলছে খুঁটি স্থাপন, অন্যদিকে খুঁটিতে স্প্যান বসানোর কাজও চলমান। এর মধ্যে ৫০টি খুঁটির মধ্যে ৪১টি স্থাপন করা হয়েছে। ৪৯টি স্প্যানের ৩১টি বসেছে। আগামী বছর বাণিজ্যিক ট্রেন চললেও পুরোটা সময় ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড’ হিসেবে রাখা হয়েছে। এ সময় ট্রেন চলাচলে ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করা হবে। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল সংযোগ চালু হয়। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে সর্্বোচ্চ ৪৩.৭০ কিলো-নিউটন/মিটার ওজন বহনের অনুমতি রয়েছে। একটি ট্রেন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পাড়ি দিতে পারে। আবার ট্রেনে বেশি বগি যুক্ত করার সুযোগ নেই। আছে এক লাইনের সীমাবদ্ধতা। ফলে অধিকসংখ্যক ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুতে চলাচল শুরু হলে ঘণ্টায় সর্্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতেও ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। যমুনা নদীতে বিভক্ত রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে আধুনিক ট্রেন যাত্রার সূচনা হবে। একই সঙ্গে এই সেতুটি সার্ক, বিমসটেক, সাসেক ও অন্যান্য আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক রেলওয়ে রুট এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি অংশে পরিণত হতে যাচ্ছে। নানা জটিলতায় কাটিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনের সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে। জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব প্রকল্পের কাজ শেষ করা। ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটা শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। করোনার জন্য কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। এখন কাজের গতি খুবই ভালো। নির্মাণের অগ্রগতি ৭৬.৫০% ২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও মূল কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১০ আগস্ট। দুইভাগে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান আছে। নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ৫০টি খুঁটি স্থাপন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৪১টি খুঁটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণের কাজও পুরোদমে চলছে। সেতুর ৫০টি খুঁটির জন্য ৪৯টি স্প্যান বসানো হবে। এর মধ্যে ৪৫টি স্প্যান সাইটে এসে পৌঁছেছে। ৪৫টি স্প্যানের মধ্যে বর্তমানে ২৯টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এতে ২.৮৫ কিলোমিটার মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আরো দুটি স্প্যান বসানোর কাজ চলমান আছে। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৬.৫০ শতাংশ। প্রকল্পের তথ্য বলছে, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। নতুন সেতু চালু হলে দিনে চলবে ৮৮টি ট্রেন। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করে, সেখানে নতুন এই রেল সেতুতে ব্রড গেজ ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজ ট্রেন ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে। এতে সময়ও বাঁচবে। আসছে ৩০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে নির্মিত হচ্ছে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের মূল সেতুটি। এর সঙ্গে সেতুর দুই প্রান্তে থাকছে .০৫ কিলোমিটার সংযোগ সেতু, ৭.৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে সংযোগ বাঁধ এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০.৭৩ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রেল সেতুটি নির্মাণে প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। প্রথম সংশোধনীর পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭.৬০ শতাংশ (চার হাজার ৬৩১ কোটি টাকা)। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা, যা প্রকল্পের ৭২.৪০ শতাংশ। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৭.৯৮ শতাংশ। এক প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, যমুনা নদী দেশের রেলব্যবস্থাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। ডুয়েল গেজের লাইন নির্মাণ হওয়ায় ব্রড গেজ ও মিটার গেজ দুই ধরনের ট্রেনই এই সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারবে। এটা দীর্ঘ মেয়াদে রেলে বড় পরিবর্তন আনবে। একই সঙ্গে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে গতি বাড়বে। SHARES জাতীয় বিষয়: #বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু
যমুনা নদীর ওপর দিয়ে দ্রুতগামী ট্রেন চলাচলে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর কাজ শেষ হয়ে আসছে। মোট ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুর প্রায় তিন কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬.৫০ শতাংশ। ঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
যমুনা নদীর ওপর দিয়ে দ্রুতগামী ট্রেন চলাচলে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর কাজ শেষ হয়ে আসছে। মোট ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুর প্রায় তিন কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬.৫০ শতাংশ। ঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের অধীন রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদ আগামী বছরের শেষ দিন পর্যন্ত। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। বর্তমানে একই সঙ্গে সেতু নির্মাণে একদিকে চলছে খুঁটি স্থাপন, অন্যদিকে খুঁটিতে স্প্যান বসানোর কাজও চলমান।
এর মধ্যে ৫০টি খুঁটির মধ্যে ৪১টি স্থাপন করা হয়েছে। ৪৯টি স্প্যানের ৩১টি বসেছে। আগামী বছর বাণিজ্যিক ট্রেন চললেও পুরোটা সময় ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড’ হিসেবে রাখা হয়েছে। এ সময় ট্রেন চলাচলে ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করা হবে।
আগামী বছর বাণিজ্যিক ট্রেন চললেও পুরোটা সময় ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড’ হিসেবে রাখা হয়েছে। এ সময় ট্রেন চলাচলে ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করা হবে।
১৯৯৮ সালের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল সংযোগ চালু হয়। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে সর্্বোচ্চ ৪৩.৭০ কিলো-নিউটন/মিটার ওজন বহনের অনুমতি রয়েছে। একটি ট্রেন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পাড়ি দিতে পারে। আবার ট্রেনে বেশি বগি যুক্ত করার সুযোগ নেই। আছে এক লাইনের সীমাবদ্ধতা।
ফলে অধিকসংখ্যক ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুতে চলাচল শুরু হলে ঘণ্টায় সর্্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতেও ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। যমুনা নদীতে বিভক্ত রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে আধুনিক ট্রেন যাত্রার সূচনা হবে। একই সঙ্গে এই সেতুটি সার্ক, বিমসটেক, সাসেক ও অন্যান্য আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক রেলওয়ে রুট এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি অংশে পরিণত হতে যাচ্ছে। নানা জটিলতায় কাটিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনের সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে। জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব প্রকল্পের কাজ শেষ করা। ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটা শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। করোনার জন্য কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। এখন কাজের গতি খুবই ভালো। নির্মাণের অগ্রগতি ৭৬.৫০% ২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও মূল কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১০ আগস্ট। দুইভাগে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান আছে। নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ৫০টি খুঁটি স্থাপন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৪১টি খুঁটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণের কাজও পুরোদমে চলছে। সেতুর ৫০টি খুঁটির জন্য ৪৯টি স্প্যান বসানো হবে। এর মধ্যে ৪৫টি স্প্যান সাইটে এসে পৌঁছেছে। ৪৫টি স্প্যানের মধ্যে বর্তমানে ২৯টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এতে ২.৮৫ কিলোমিটার মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আরো দুটি স্প্যান বসানোর কাজ চলমান আছে। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৬.৫০ শতাংশ। প্রকল্পের তথ্য বলছে, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। নতুন সেতু চালু হলে দিনে চলবে ৮৮টি ট্রেন। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করে, সেখানে নতুন এই রেল সেতুতে ব্রড গেজ ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজ ট্রেন ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে। এতে সময়ও বাঁচবে। আসছে ৩০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে নির্মিত হচ্ছে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের মূল সেতুটি। এর সঙ্গে সেতুর দুই প্রান্তে থাকছে .০৫ কিলোমিটার সংযোগ সেতু, ৭.৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে সংযোগ বাঁধ এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০.৭৩ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রেল সেতুটি নির্মাণে প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। প্রথম সংশোধনীর পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭.৬০ শতাংশ (চার হাজার ৬৩১ কোটি টাকা)। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা, যা প্রকল্পের ৭২.৪০ শতাংশ। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৭.৯৮ শতাংশ। এক প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, যমুনা নদী দেশের রেলব্যবস্থাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। ডুয়েল গেজের লাইন নির্মাণ হওয়ায় ব্রড গেজ ও মিটার গেজ দুই ধরনের ট্রেনই এই সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারবে। এটা দীর্ঘ মেয়াদে রেলে বড় পরিবর্তন আনবে। একই সঙ্গে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে গতি বাড়বে।
নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুতে চলাচল শুরু হলে ঘণ্টায় সর্্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতেও ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। যমুনা নদীতে বিভক্ত রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে আধুনিক ট্রেন যাত্রার সূচনা হবে। একই সঙ্গে এই সেতুটি সার্ক, বিমসটেক, সাসেক ও অন্যান্য আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক রেলওয়ে রুট এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি অংশে পরিণত হতে যাচ্ছে। নানা জটিলতায় কাটিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনের সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে। জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব প্রকল্পের কাজ শেষ করা। ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটা শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। করোনার জন্য কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। এখন কাজের গতি খুবই ভালো। নির্মাণের অগ্রগতি ৭৬.৫০% ২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও মূল কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১০ আগস্ট। দুইভাগে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান আছে। নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ৫০টি খুঁটি স্থাপন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৪১টি খুঁটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণের কাজও পুরোদমে চলছে। সেতুর ৫০টি খুঁটির জন্য ৪৯টি স্প্যান বসানো হবে। এর মধ্যে ৪৫টি স্প্যান সাইটে এসে পৌঁছেছে। ৪৫টি স্প্যানের মধ্যে বর্তমানে ২৯টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এতে ২.৮৫ কিলোমিটার মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আরো দুটি স্প্যান বসানোর কাজ চলমান আছে। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৬.৫০ শতাংশ। প্রকল্পের তথ্য বলছে, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। নতুন সেতু চালু হলে দিনে চলবে ৮৮টি ট্রেন। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করে, সেখানে নতুন এই রেল সেতুতে ব্রড গেজ ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজ ট্রেন ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে। এতে সময়ও বাঁচবে। আসছে ৩০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে নির্মিত হচ্ছে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের মূল সেতুটি। এর সঙ্গে সেতুর দুই প্রান্তে থাকছে .০৫ কিলোমিটার সংযোগ সেতু, ৭.৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে সংযোগ বাঁধ এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০.৭৩ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রেল সেতুটি নির্মাণে প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। প্রথম সংশোধনীর পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭.৬০ শতাংশ (চার হাজার ৬৩১ কোটি টাকা)। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা, যা প্রকল্পের ৭২.৪০ শতাংশ। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৭.৯৮ শতাংশ। এক প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, যমুনা নদী দেশের রেলব্যবস্থাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। ডুয়েল গেজের লাইন নির্মাণ হওয়ায় ব্রড গেজ ও মিটার গেজ দুই ধরনের ট্রেনই এই সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারবে। এটা দীর্ঘ মেয়াদে রেলে বড় পরিবর্তন আনবে। একই সঙ্গে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে গতি বাড়বে।