‘বাজুস ফেয়ার- ২০২৪’

‘আমাদের দেশে স্বর্ণকে দুঃসময়ের সম্পদ বলা হয়’

প্রকাশিত: ১১:৪৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪
‘সেলিব্রিটিদের লাইফ স্টাইলে গহনা’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থিত অতিথিবৃন্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গহনা আমার খুবই প্রিয় জিনিস। আমি সবসময় চলচ্চিত্রে নকল গহনা পরেছি। আমার অনেক সিনেমা আছে যেগুলোতে রাজকীয় পোশাকের সঙ্গে গহনা পরতে হতো। তবে সেসবই নকল ছিল।

কিন্তু আমি যখন ঘুরতে যেতাম বা বাসায় অবসর সময় কাটাতাম তখন গহনা পরে বসে থাকতাম।’ এভাবেই গহনা নিয়ে নিজের ভালো লাগার কথা জানাচ্ছিলেন আশির দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজিনা। 

আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ থেকে শুরু হয়েছে ‘বাজুস ফেয়ার-২০২৪।’ তৃতীয়বারের মতো এই ফেয়ার অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনের প্রথমদিন বিকেল ৩ টায় ‘সেলিব্রিটিদের লাইফ স্টাইলে গহনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই গহনা নিয়ে নিজের ভাবনা ও স্মৃতিচারণ করছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী রোজিনা। 

bvbnbhv
‘বাজুস ফেয়ার ২০২৪’-এ বক্তব্য রাখছেন অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ 

এ সময় রোজিনা বলেন,  ‘আমি যখন এই ফেয়ারে প্রবেশ করছিলাম গহনার এতো সুন্দর সাজানো স্টল দেখে মনে হলো আইসিসিবি’তে নয়, আমি দুবাই চলে এসেছি। আমাদের দেশে এই চমৎকার আয়োজন দেখে খুব ভালো লেগেছে।

গহনার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি আছে। আমি গহনা কেনা শুরু করেছি যখন গহনার দাম মাত্র চার হাজার-পাঁচ হাজার টাকা ছিলো। সেটাও ১৯৮১ বা ৮২ সালের কথা। তখন বায়তুল মোকাররমে ছিলো দেশি স্বর্ণের দোকান। তখনকার যুগে আমি সেখানে গেলেই ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার গহনা কিনে ফেলতাম।
আমি হাত ভর্তি চুরি পরা পছন্দ করতাম। আগেরকার গহনা যেমন কানপাশা, হাঁসলির মতো বড় চুরি, বাজুবন্ধ এগুলো খুব পছন্দের গহনা ছিলো আমার। আমি জীবনে অনেক গহনা কিনেছিলাম। সেগুলো এখন আর নেই। বাড়ি বানানোর সময় সব বিক্রি করে দিয়েছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘গহনা শুধু প্রসাধনই নয়, বিপদের সময় কাজে লাগে। আমাদের মা, নানীদের কাছ থেকেই শিখে এসেছি বিপদের সময় গহনা বিক্রি করতে হয়। এটা অনেক বড় সম্পদ। আমাদের বাংলার ঐতিহ্য সোনার গয়না। এটা আমরা লালন করি, পালন করি৷’

fcbghf
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ফেরদৌসের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়

‘সেলিব্রিটিদের লাইফ স্টাইলে গহনা’ শীর্ষক এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। বাজুসের সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর বাজুসের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। সেমিনারের মূল অংশের উপস্থাপনা করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। সেমিনারের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অভিনেত্রী জাহারা মিতু।

শোবিজ অঙ্গণের জনপ্রিয় তারকাদের মধ্যে এসময় উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী রোজিনা, অপু বিশ্বাস, আশনা হাবিব ভাবনা, বিদ্যা সিনহা মিম, সাবরিনা সুলতানা কেয়া,নিপুণ আক্তার, অভিনেত্রী সোহানা সাবা, অর্চিতা স্পর্শিয়া, অধরা খান, জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া, সংগীতশিল্পী কোনাল, নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা, তমা মির্জা প্রমুখ।

‘সেলিব্রিটিদের লাইফ স্টাইলে গহনা’ শীর্ষক এই আলোচনায় উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে স্বর্ণকে দুঃসময়ের সম্পদ বলা হয়। অনেক মানুষকেই দেখা যায় বড় বিপদ হলে, ছেলের চাকরি হচ্ছে না, এমন সব মুহুর্তে গহনা বিক্রি করে দিয়ে বলে এটা দিয়ে কিছু একটা করো।  নিজেদের শেষ সম্বল হিসেবে গহনাটুকু বিক্রি করে দেয়। এটা কিন্তু জীবন থেকে নেওয়া। এছাড়া স্বর্ণ বংশপরম্পরা হিসেবে খুব মমতায় থাকে। মানুষ যত্ন নিয়ে ব্যবহার করে। আমি গহনা বলতে বিয়ের পর থেকে শুধু আংটি পরি। আগে চেইন পরা হতো কিন্তু এখন সেটা পরা হয় না। জুয়েলারি একটা ফ্যাশন। অনেক ছেলেরাও ব্যবহার করে। আমরা চাই আমাদের দেশে এই ফেয়ার আরও উন্নতি করুক।’

আলোচনায় অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস বলেন, ‘গহনা আমাদের মেয়েদের জীবনের সম্পদ। আমি আমার ব্যক্তিজীবনে গহনা সংগ্রহ করতে দেখেছি আমার মাকে। কোনো একটা বড় বিপদে আমি সেই গহনা গুলো কাজে লাগাতে পেরেছি। গহনা মেয়েদের জীবনের একটা সংরক্ষিত সম্পদ। গ্রামে যারা এখনো ব্যাংকিং বুঝে না তারা কিন্তু একটা ডিপোজিট বুঝে, সেটা হলো গহনা। গহনার সঙ্গে অনেক স্মৃতি লুকানো থাকে। আমার মা নেই তিন বছর। আমি কিন্তু কোনো প্রোগ্রাম বা সিনেমা কেন্দ্রীক কোনো ওপেনিংয়ে গেলে আমার মায়ের গহনা পরে যাই। আমার মনে হয় আমার মায়ের আশীর্বাদ আছে আমার সঙ্গে।’

অভিনেত্রী সোহানা সাবা বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো বাজুসের এই মেলায় এসেছি। এটা এক অদ্ভুত মিলনমেলা হলো। চমৎকার এক আয়োজন। এখানে আসার পর আমার মনে হলো বাজুস ফেয়ার অনেকদূর যাবে। বাণিজ্য মেলার জন্য যেমন আমরা অপেক্ষা করি তেমনি এই মেলার জন্যও আমাদের অপেক্ষা বাড়বে। আমি সবসময় গহনা পরতে ও সংগ্রহ করতে পছন্দ করতাম। দেশীয় ঐতিহ্যবাহী সব ধরনের গহনা আমার খুব পছন্দের।’

সংগীতশিল্পী কোনাল বলেন, ‘আমি বড় হয়েছি কুয়েতে তাই মিডল ইস্ট, স্বর্ণ এসব শব্দের সঙ্গে আমার পরিচিতিও অনেক ছোট থেকে। তবে আমাকে গহনা সেভাবে টানে না। আমি মনে করি শিল্পীদের আসলে কোনো গহনার প্রয়োজন হয় না, তাদের কাজই তাদের গহনা। নিজের কাজটুকু যে যতটা ভালোভাবে করতে পারেন তিনি ততটাই অলংকৃত।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তাদের ভাষ্যমতে, ‘বাজুস ফেয়ার-২০২৪’ দেশীয় জুয়েলারি শিল্পকে সমৃদ্ধশালী করার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে একটি নতুন অবস্থান তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দেশের স্বর্ণ শিল্পীদের হাতে গড়া নিত্য-নতুন আধুনিক ডিজাইনের অলংকারের পরিচিতি বাড়বে।

এবার বাজুস ফেয়ারে ৯টি প্যাভিলিয়ন, ১৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ১৫টি স্টলে দেশের স্বনামধন্য ৪১টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে।