রাজনীতির মাঠে চলে গেছে কোটা বিরোধী আন্দোলন

প্রকাশিত: ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২৪

ক্রাইম পেট্রোল ডেস্ক রিপোর্ট:
চলমান শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ‘প্রত্যয়’ ঠেকাও কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয় পার্টিসহ দেশের বিরোধী দলগুলো। এতে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী এখন এক রকম রাজনৈতিক বলয়ে চলে গেছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। কোনও কোনও দলের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ‘আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের’।
৬ জুলাই শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল ও নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, শ্রেণিগত আন্দোলনে সব সময়ই রাজনৈতিক দলগুলো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় পেশাজীবীদের আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত থাকলেও পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক রূপ নেয়।
বিএনপির ক্ষমতাকালে সচিবালয়ে ‘জনতার মঞ্চ’ তৎকালীন বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। এর আগে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ফারাক্কার আন্দোলনে সহযোগিতা ছিল জিয়াউর রহমান সরকারের।
আলাপে তারা উল্লেখ করেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ‘হেফাজতে ইসলাম’, ‘গণজাগরণ মঞ্চ’সহ একাধিক আন্দোলন মোকাবিলা করেছে। এরমধ্যে ‘সড়ক আন্দোলন’, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলন’ উল্লেখযোগ্য।
তাদের দাবি, ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ হোক বা ‘হেফাজত’–কোনও ক্ষেত্রেই বিরোধী দল সুযোগ নিতে পারেনি। এমনকি ২০১৩ সালের ৫মে হেফাজতের পাশে দাঁড়াতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আহ্বানও সাড়া পায়নি। সবই ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে গেছে।
তবে একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীলের মতে, ‘সাম্প্রতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা ছাত্রদের আন্দোলনে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো সমর্থন দিয়ে আসছে। যে কারণে এ আন্দোলন নিয়ে বিএনপি-আওয়ামীলীগের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন শিক্ষকদের আন্দোলনের ওপর ভর করবে। আবার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোঠা আন্দোলনের ওপর ভর করবে।
এদিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে তাতে সমর্থন জানান। একইসঙ্গে জাতীয় পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনেও সমর্থন জানিয়ে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির পক্ষ থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলন ফেসবুকে লাইভে প্রচার করা হচ্ছে দলের অফিসিয়াল পেজে। বিএনপির যুগপৎসঙ্গীরা আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছে। এর আগে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি উভয় আন্দোলনে সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি সেখানে বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনে বিরোধী দল কোনও ষড়যন্ত্র করছে না। আমরা পরিষ্কারভাবে ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাই, শিক্ষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাই।’
কোটা পদ্ধতি সংবিধানবিরোধী বলে মনে করেন বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের। গাজীপুরে দলের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে। আমাদের দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কোটা পদ্ধতি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোটা পদ্ধতি বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ এর ১,২,৩ এর সম্পূর্ণ পরিপন্থি। সংবিধান সংশোধন করে এটাকে বৈধ করতে পারবে না। মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত ২৯ এর ১,২,৩ ধারা পরিবর্তন করার ক্ষমতা সংবিধানে দেওয়া হয়নি।’
বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে আন্দোলনে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। ‘বৈষম্যমূলক কোটা পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে ৭১ পূর্ব পাকিস্তানি বৈষম্য বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে যাবে’ বলে রীতিমতো হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা বলেন, ‘নৈতিক ও নীতিগত প্রতিশ্রুতি না থাকলে এসব সমর্থনে কিছু আসে যায় না, প্রকৃত অর্থে রাজনীতিও নষ্ট হয়।’ তাদের মতে, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি, ভারতের সঙ্গে সমঝোতা-স্মারক সইয়ের বিষয়ে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন গড়ে তোলার যে প্রক্রিয়াটি ছিল, হতে পারে এই দুটি শ্রেণিগত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা পিছিয়ে যেতে পারে।’
এক প্রতিবাদ বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, ‘কোটা ব্যবস্থা বহাল রেখে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করে মেধাহীনদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন কীভাবে?’
রাজনৈতিক দলগুলোর ‘সমর্থনের রাজনীতি’ বিষয়ে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ন্যায্য। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের এবং গণতন্ত্র মঞ্চের ঐকান্তিক সমর্থন আছে। এটাই আমাদের দায়িত্ব।’ ‘শিক্ষকদের আন্দোলনেও আমাদের নৈতিক সমর্থন আছে। তাদের ওপর জবরদস্তি করে একটি স্কিম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে নৈতিক সমর্থনের জায়গা আছে’, তিনি বলেন, ‘সাধারণভাবে মানুষ এই দুটি শ্রেণিগত আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে। এটা স্বাধীনভাবে চলাই ভালো। রাজনৈতিক রঙ লাগলে বরং সমর্থনে প্রভাব ফেলতে পারে।’ বিরোধী দলের কর্মসূচির বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ইস্যুগুলো অন আছে। সরকারের পদত্যাগ, ডামি সরকার বাতিল করে নতুন নির্বাচনের বিষয়ে আমরা সবাই অটল আছি। নিশ্চিতভাবেই আমরা সাপ রেখে দড়ি নিয়ে টানাটানি করবো না।’