ধর্মের নামে কেউ যাতে বিভ্রান্ত করতে না পারে ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ৯:০৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ নিজস্ব প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে কেউ যেন মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে। প্রকৃত ইসলামের মূল্যবোধ সম্পর্কে মানুষের মাঝে যেন সচেতনতার সৃষ্টি হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রেখেই এই মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প আমরা নিই এবং নির্বাচনি ইশতেহারেও সেটার ঘোষণা দিই। প্রধানমন্ত্রী সোমবার সকালে গণভবন থেকে সারা দেশে ভার্চুয়ালি আরও ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মডেল মসজিদে ইসলামি মূল্যবোধের চর্চা হবে, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান আরও বাড়বে, ইসলামি সংস্কৃতি লালন ও বিকাশের আরও সুযোগ থাকবে এবং ইসলাম ধর্মকে আরও উন্নতভাবে পালনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সরকার চলে বলেই ইসলাম ধর্ম এবং শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয় এবং দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মর্যাদা দিয়েছে। ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। তাছাড়া প্রতিটি উপজেলা ও জেলা সদরে একটি করে মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, এই প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ হচ্ছে মুসল্লিদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা, ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, দ্বীনি দাওয়াতি কার্যক্রমের সুবিধা সৃষ্টি করা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, সরকারের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার নীতিনির্ধারণের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাধীনভাবে ইসলামি জ্ঞান ও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে ইসলামি মূল্যবোধের প্রসার ঘটানো। এছাড়া এখানে একটি লাইব্রেরিও থাকবে। কেননা ইসলাম ধর্মের ভ্রাতৃত্ব এবং সাম্যের প্রচার এবং প্রসারও এর একটি অন্যতম লক্ষ্য। তিনি বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদগুলোতে অজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। এছাড়া হাজিদের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগে আচার, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্মেলন কক্ষও থাকবে। ইসলামিক দাওয়াত, ইসলামি বই বিক্রয় কেন্দ্র, দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধাও এখানে থাকছে। প্রধানমন্ত্রী মডেল মসজিদ উদ্বোধন করতে পারায় মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সুরা তওবার ১৮ নম্বর আয়াতের বাংলা তরজমা উচ্চারণ করে বলেন, আমি এটুকুই বলব আমাদের এই ধর্ম নিয়ে কেউ যেন আর কোনোরকম বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে না পারে। আমাদের আলেম-ওলামারা হচ্ছে ‘ওরাসাতুল আম্বিয়া’। মানুষ মসজিদের ইমাম, খাদিম এবং আলেম-ওলামাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখে। আমাদের সমাজে যেসব অসঙ্গতি রয়েছে-বাল্যবিবাহ, মাদকাসক্তি, নারীর প্রতি সহিংসতা, গৃহকর্মী ও অধীনস্থদের নির্যাতন, খাদ্যে ভেজাল এবং দুর্নীতি ইত্যাদি দূরীকরণে ইমাম ও খতিব সাহেবদের আমার অনুরোধ থাকবে, আপনারা যখন মসজিদে কোনো বয়ান দেন বা জুমার নামাজে খুতবা পড়েন সে সময় এই বিষয়গুলো থেকে মানুষ যাতে বিরত থাকে সে বিষয়গুলো আপনারা মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। সঠিক মানবিক গুণগুলো যাতে উঠে আসে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আসুন আমরা সবাই আমাদের পরমতসহিষ্ণুতা এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতাও যেন দেখাই। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম, সৌহার্দ্যরে ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। দলমত নির্বিশেষে ধর্মপ্রাণ সব মুসলমানই অন্যান্য ধর্মের প্রতি সমানভাবে সম্মান দেখিয়ে আমাদের দেশটা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসাবে যাতে গড়ে ওঠে সেই প্রচেষ্টাই আমরা চালাব। এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী প্রথম ধাপে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেছিলেন। আশা করা হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে তৃতীয় ধাপে আরও ৫০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু করা হবে। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান বক্তব্য দেন। কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম, রাজশাহী ও শরীয়তপুর থেকেও কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ। উদ্বোধন হওয়া ৫০টি মসজিদ হলো : ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও নগরকান্দা, গাজীপুরের কাপাসিয়া, গোপালগঞ্জের সদর উপজেলা, কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলা ও কটিয়াদী, মানিকগঞ্জের ঘিওর ও সাটুরিয়া, নরসিংদী সদর ও মনোহরদী, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, শরীয়তপুর জেলা সদর ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা, বগুড়ার ধুনট ও নন্দীগ্রাম, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলা, পাবনার ভাঙ্গুড়া ও সুজানগর উপজেলা, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রংপুরের কাউনিয়া ও গঙ্গাচরা ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলা, শেরপুরের সদর উপজেলা, পিরোজপুরের সদর উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলা ও কসবা, খাগড়াছড়ির সদর উপজেলা ও মানিকছড়ি, কুমিল্লার চান্দিনা ও চৌদ্দগ্রাম, খুলনার রূপসা, কুষ্টিয়ার খোকসা ও ভেড়ামারা, মেহেরপুর জেলা সদর ও গাংনী, সাতক্ষীরার দেবহাটা, সিলেটের গোয়াইনঘাট, সুনামগঞ্জ জেলা সদর ও জগন্নাথপুর এবং হবিগঞ্জের চুনারুঘাট মডেল মসজিদ। SHARES জাতীয় বিষয়: