গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়ার আশায় ডিজিএফআই কার্যালয়ে স্বজনেরা

প্রকাশিত: ৮:৫২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২৪

গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়ার আশায় ডিজিএফআইয়ের (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর) কার্যালয়ে গিয়েছেন স্বজনেরা। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের কচুক্ষেত এলাকায় ডিজিএফআইয়ের সদর দপ্তরে যান তাঁরা।

গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’–এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলামসহ কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী প্রতিনিধি হিসেবে সদর দপ্তরের ভেতরে যান। সেখানে ডিজিএফআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। এ সময় গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন।

কার্যালয়ের ভেতরে যাওয়া অন্য প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন মানবাধিকারকর্মী শিরীন হক, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সি আর আবরার।

মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের স্বজনদের নিতে এখানে এসেছিলাম। ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য একটা সময় চাচ্ছি, সেটার জন্যই অপেক্ষা করছি।’

সানজিদা ইসলাম আরও বলেন, ‘আয়নাঘরের যে ঘটনাগুলো এবং যাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এই ঘটনাগুলো সত্যি। পূর্ববর্তী সময়ে যে টিম বা যে সংস্থা করুক না কেন, তাদের সেই দায়গুলো নিতে হবে। সে জন্য আমরা মায়ের ডাক থেকে এখানে ১০০ ব্যক্তির পরিবার একসঙ্গে এসেছি।’

সানজিদার দাবি, ডিজিএফআই ছাড়াও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও পুলিশ অনেককে তুলে নিয়েছিল। যে যেখানে আটকে আছেন, সেখান থেকে তাঁদের মুক্তির জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্বজনদের মুক্তি চাই।’

মানবাধিকারকর্মী শিরীন হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিজিএফআই থেকে আমাদের সহযোগিতা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শ সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করার। আমরা সেই চেষ্টা করছি।’

ডিজিএফআইয়ের কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় রোদের মধ্যে বাবা ফারুক হোসেনের ছবি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন মেয়ে রোজা আক্তার। সঙ্গে ছিলেন রোজার মা ও ছোট চাচা মোহাম্মদ রাসেল।

রোজা বলে, ‘আমি আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই। বাবাকে ফিরিয়ে নিতেই এখানে এসেছি। আমি আর কিছু চাই না। তারা আমার বাবাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিক।’

ফারুক হোসেনের ভাই মোহাম্মদ রাসেল জানান, তাঁদের বাসা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গী পূর্ব এলাকায়। সে এলাকায় যুবদলের রাজনীতি করতেন ফারুক। তবে তিনি কোনো কমিটিতে ছিলেন না। ২০১২ সালে তাঁকে ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে ডেকে নতুনবাজার রেলগেট এলাকার কাছ থেকে সাদাপোশাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এখনো তিনি নিখোঁজ।

ডিজিএফআইয়ের কার্যালয়ের ফটকের সামনে এবং সামনের রাস্তায় গুম হওয়া ব্যক্তিদের শতাধিক স্বজনদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখামাত্র তাঁরা গুম হওয়া স্বজনের ছবি দেখিয়ে কে গুম হয়েছেন, কবে কোথা থেকে গুম করা হয়েছে, সেগুলো জানাচ্ছেন। কার্যালয়ের ভেতর থেকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ফিরে আসার পরে স্বজনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিছুটা সময় মানববন্ধন করেন।

পরে সানজিদা ইসলাম তাঁর নিজ বাসায়ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ডিজিএফআই তাঁদের বলেছে দেশে অন্য কোনো সংস্থার বন্দীশালা আছে কি না কিংবা কাউকে আটক করে রাখা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে জানতে ডিজিএফআই সহযোগিতা করবে।