চিঠি লিখে ভেলায় ভাসিয়ে দিলেন বাবার লাশ

প্রকাশিত: ৭:৫৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রিয় মানুষ মারা যাওয়ার পর আত্মীয়স্বজনদের প্রথম চাওয়া থাকে মৃত মানুষটির কবরের যেন চিহ্ন থাকে। ভবিষ্যতে যেন প্রিয় মানুষটির কবরে অন্তত জিয়ারত করা যায়। কিন্তু মাটির অভাবে সেই মানুষকে কবর দিতে না পেরে কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়ার যে কষ্ট তা কি ভোলার মতো। এমনি এক ঘটনা ঘটেছে ফেনী সদর উপজেলা মোটবী ইউনিয়নে সাতসতী গ্রামের বাসিন্দা আলিম উল্লাহের পরিবারের সঙ্গে।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ভোরে মারা যান বৃদ্ধ আলিম উল্লাহ (৭৩)। পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। মৃতদেহটি দাফন করার জন্য সাড়ে তিন হাত শুকনো জায়গাও পাওয়া যায়নি। আলিম উল্লাকে অন্তত দূরে কোথাও কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না তার জন্য জরুরি পরিস্থিতিতে যোগাযোগও করেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। কেউ হয়ত আসবে সেই আশায় দু-দিন মরদেহ নিয়ে অপেক্ষাও করেছিলেন।

কিন্তু কেউ আর আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে শনিবার (২৪ আগস্ট) কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয় আলিম উল্লাহর মরদেহ। সঙ্গে লিখে দেওয়া হয় একটি চিঠি। সেই চিঠিতে যা লিখা ছিল তা হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘এই মৃতদেহটি অতিরিক্ত বন্যার কারণে আমরা দাফন করতে পারিনি। দুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে আমরা পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছি। সঙ্গে আমাদের এলাকার নাম-ঠিকানাসহ ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ শুকনো জায়গা পান, তাকে কবর দিয়ে দেবেন এবং আমাদের এই ঠিকানায় যোগাযোগ করবেন। আপনাদের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকব’।

পরিবারের সদস্যরা জানান, আলিম উল্লাহ চার দিন অসুস্থ থাকার পর শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ভোরে মারা যান। তখন পুরো ইউনিয়নের চারপাশেই অথৈ পানি। একটু শুকনো জায়গা পাননি কবর দেওয়ার জন্য। দুদিন ধরে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ফেনীতে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। তাই বাধ্য হয়ে কলাগাছের ভেলায় মরদেহটি ভাসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

এ ছাড়াও বাবার মরদেহ কবর দেওয়ার বিষয়ে সাহায্য চেয়েও ফেসবুকে পোস্ট করেন মৃতের ছেলে মাসুদ। সেখানে তিনি লিখেন, ‘হে আল্লাহ আমার বাবা যেন একটু মাটি পায়। আল্লাহ তুমি সব কিছুর মালিক। অন্তত তার কবর জিয়ারত করতে পারি ওই সুযোগ করে দাও।’

প্রসঙ্গত গত কয়েকদিন ধরে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে ফেনী জেলা। এতে পানিবন্দি হয়ে আছে সাড়ে আট লাখ মানুষ। তাদের উদ্ধারে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে যাচ্ছেন।