কুমিল্লায় কম দামে নিত্যপণ্য বিক্রি করছেন শিক্ষার্থীরা, ক্রেতাদের মুখে হাসি

প্রকাশিত: ৮:৫৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২৪

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা, কুমিল্লা নগরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বর ঘিরে মানুষের জটলা। কাছে যেতেই দেখা গেল, সেখানে জনতার জন্য নিত্যপণ্যের বাজার বসিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মুহূর্তের মধ্যেই সেখানে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। সবাই এসেছেন ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে। ১১ টাকা ৮০ পয়সায় ডিম, ৩০ টাকায় লাউ, ৩০ টাকা কেজিতে পেঁপে—এভাবে বাজারের চেয়ে অনেক কম দামে এখানে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। যাঁরা এসেছেন, সবাই শিক্ষার্থীদের সহায়তায় কম দামে সবজিসহ নিত্যপণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন। জনতার বাজার থেকে হাসিমুখে বের হচ্ছিলেন ক্রেতারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ‘কৃষক-জনতা জিন্দাবাদ, সিন্ডিকেট মুর্দাবাদ’ স্লোগানে ওই ন্যায্যমূল্যের বাজার বসিয়েছেন কুমিল্লার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এই বাজারের উদ্যোগ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সিন্ডিকেট ভেঙে বাজার সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত তাঁদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।

কম দামে সবজি কিনতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেছেন নগরের হাউজিং এলাকার বাসিন্দা সোহাগ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি ছোট্ট একটা চাকরি করি। শাকসবজিও এখন বড়লোকের খাবার। অনেক দিন পর আজ ৩০ টাকা দিয়ে লাউ কিনেছি, ৬০ টাকা দিয়ে ১ কেজি বরবটি কিনেছি। এতে আমি খুবই আনন্দিত। বাজারে একটি লাউ এখন ১০০ টাকা, বরবটির কেজিও ১০০ টাকার ওপরে। আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের এই বাজার চলমান থাকুক। এই বাজারের পরিধি আরও বাড়লে সিন্ডিকেট ধীরে ধীরে ভেঙে যাবে।’

নগরের কান্দিরপাড় এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব কামাল হোসেন বলেন, ‘সবজিগুলা টাটকা। বর্তমান বাজারে এত কম দামে সবজি কিনতে পাইরাম, জানতামই না। ৩৫ টাকা দিয়া কইডা (চিচিঙ্গা) কিনছি। কচুর ছড়া কিনছি ৫০ টাকা দিয়া। পোলাপাইনডির লাইগ্যা দোয়া করি। আল্লাহ তারার ভালা করুক।’

অনেক দিন পর ১০০ টাকা দিয়ে তিন ধরনের তরিতরকারি কিনেছেন জানিয়ে নামজুল আলম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এখানে বাজার দামের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দরে সবজি বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপণ্যেরও দাম কিছুটা কম। কার্যক্রম চলমান থাকলে সাধারণ মানুষের উপকৃত হবেন। তবে ডিমটা শুরুতেই শেষ হয়ে গেছে।

ওই বাজারে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১১ টাকা ৮০ পয়সায়, আলু প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ১০০, রসুন ২১০, লাউ প্রতি পিস ৩০ টাকা, কচুর ছড়া প্রতি কেজি ৫০, পেঁপে ৩০, বেগুন ৬০, চিচিঙ্গা ৩৫, বরবটি ৬০, করলা ৬০, পটোল ৪৫ টাকাসহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি হয়েছে বাজারের প্রায় অর্ধেক দামে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুমিল্লার সমন্বয়ক মো. দোলোয়ার হোসেন বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত সিন্ডিকেট না ভাঙবে এবং সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে না আসবে, তত দিন আমাদের এই কার্যক্রম চলবে। আমরা সব সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে চাই।’

মো. দোলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজ আমরা প্রায় এক হাজার মানুষ ক্রয় করতে পারবেন, এমন পরিমাণে বিভিন্ন সবজিসহ নিত্যপণ্য বিক্রি করছি। সামনে এই পরিধি আরও বাড়বে। আজ নগরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় এলাকায় কার্যক্রম শুরু হলেও সামনে বুথ আরও বাড়ানো হবে। আমরা যেই দামে ক্রয় করছি, সেই দামেই মানুষের হাতে নিত্যপণ্য তুলে দিচ্ছি। মানুষের মুখে হাসি ফুটছে, এতেই আমরা আনন্দিত। আজ আমরা নিমসার বাজার থেকে পাইকারি দরে সবজি কিনে এনে বিক্রি করেছি। সামনে চেষ্টা করব সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে এনে বিক্রি করার। এতে কৃষকেরাও লাভবান হবেন আর ভোক্তারাও উপকৃত হবেন।’