‘কিচ্ছু আনতাম পারছি না, ঘরডার বিতরে সব ভিইজ্জা গেছে’

প্রকাশিত: ৮:১৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২৪

‘শুক্কুরবার রাইতকা পানি আওন শুরু অইছে। পুতেরে লইয়া ইসকুলে আইছি। ঘরের কিচ্ছু আনতাম পারছি না। ঘরডার বিতরে সব ভিইজ্জা গেছে। আইজ চার থেকে পাঁচটা দিন শইলডা ছাড়া আর কিচ্ছু বালা নাই।’

কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ফাতেমা বেগম। বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া গ্রামে গোমতী নদীর বাঁধ গত বৃহস্পতিবার রাতে ভেঙে যায়। এতে বুড়িচং উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। আদর্শ সদর উপজেলার ৩০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি পানিতে নিমজ্জিত গ্রামের মধ্যে রসুলপুর একটি।

ফাতেমা বেগম জানান, তাঁর ৬০ বছর বয়সে কখনো রসুলপুর এলাকায় বন্যার পানি দেখেননি।

আজ বুধবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, রসুলপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটুসমান পানি। দুই শতাধিক পরিবার স্কুলটিতে আশ্রয় নিয়েছে। বিদ্যালয়টির দক্ষিণ পাশের সড়কটির কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি। সড়কটির পশ্চিমে ফাতেমা বেগমের বাড়ি। টিনের বেড়া দেওয়া বাড়িটির পাকা মেঝে বন্যার পানিতে ফাটল ধরেছে। যেকোনো মুহূর্তে টিনের বেড়াটি খুলে পানিতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘরটিতে দুটি কক্ষ। ভাঙা জানালা। খাটে একটি লেপ ও একটি তোশক ভাঁজ করে রাখা। কিছু অংশ বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। ঘরে উল্লেখযোগ্য আসবাব নেই। শেষ সম্বল বাড়িটি নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই ফাতেমার।

ফাতেমা জানান, ২০ বছর আগে তাঁর স্বামী মোসলেম মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলে রিকশাচালক, আরেক ছেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। তাঁদের আলাদা সংসার। আনোয়ার হোসেন নামের এক ছেলে ও ছেলের স্ত্রী-সন্তান ফাতেমা বেগমের সঙ্গে থাকেন।

ফাতেমা বেগমের ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন গাড়িচালক। যখন যেখান থেকে ডাক আসে, তখন সেখানে চলে যান। ভাড়ায় প্রাইভেট কার চালান। এতে কখনো ৫০০, কখনো–বা ১ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। অনেক দিন কোনো আয় হয় না। এভাবেই মা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনো রকম খেয়ে না–খেয়ে দিন পার করছেন।
ফাতেমা বলেন, ‘তিন–চাইর বছর আগে সরকার থাইক্কা ঘরডা পাইছি। এহন কেমনে ঘরডা ঠিক কইরাম, এই চিন্তায় ঘুম আইয়ে না।’

প্রতিবেশী রুমা আক্তার ইপিজেডে চাকরি করেন। বন্যায় তাঁরও ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পানি নেমে গেলে কীভাবে ঘরবাড়ি ঠিক করবেন, তা জানেন না। নিজের এমন দুঃখ মনের ভেতর চেপে রেখে রুমা বলেন, ‘ফাতেমা খালার জন্য মনডা খারাপ লাগতাছে। আমার ঘরও শেষ। ফাতেমা খালার ঘরডাও শেষ। কেমনে কী করমু, বুঝতেছি না।’

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, আদর্শ সদর উপজেলার ৩৮ গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তাঁর মধ্যে রসুলপুর গ্রামও রয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলোতে নিয়মিত ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে। যাঁদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে, তাঁদের জন্য সরকারিভাবে যে সহায়তা আসবে, সে সময় ফাতেমা বেগমের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে।