ইট না থাকলে থমকে যাবে উন্নয়ন।

প্রকাশিত: ৭:৪৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩

শিবব্রত:বিশেষ প্রতিনিধি
*************************************

ইট ভাটা কর্তৃক টপ সয়েল কাটা নিয়ে হালে বেশ চেচামেচি হচ্ছে। এজন্য মিডিয়ার চেচামেচিটাই বেশি। এই মাটি কাটলে অদূর ভবিষ্যতে জমি ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এ কথা মোটেও কাল্পনিক কোনো গল্প নয়। কিন্তু ইট তৈরির জন্য মাটিতো লাগবে। ভাটার বিরুদ্ধে যত দোষ। কিন্তু যদি ভাটায় ইট তৈরি না হয় তাহলে উন্নয়নটা হবে কিভাবে? কিভাবে হবে রাস্তা পাকাকরন নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা অফিস আদালত তৈরি তথা উন্নয়নের অবকাঠামো নির্মাণ?
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, টপ সয়েল রক্ষার বিকল্প হিসেবে নদ-নদী বা খালের মাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা বলেছেন, নদ-নদীর ইট ভাটায় ব্যবহার করা হলে ইট তৈরির জন্য মাটির ঘাটতি দেখা দেবে না। আর এতে নদী খননে ৫০শতাংশ ব্যয় কমবে। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা হবে।
বর্তমানে জাতীয় প্রয়োজনে সরকার নদ-নদী খননের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নদী খননের মাটি একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। খননকৃত মাটি ফেলার জায়গা না থাকায় নদীর ভেতরই ওই মাটি ফেলা হয়। এতে বৃষ্টির পানিতে ওই মাটি ধুয়ে আবার নদীর মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ নদী খনন করে সরকারি টাকার অপব্যয় ছাড়া আর কিছু হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করে বলেছেন, নদ-নদীর মাটি ভাটায় ইট তৈরির কাজে ব্যবহারে করা হলে একদিকে ভরাট নদী খনন হয়ে যাবে অন্য দিকে টপ সয়েল রক্ষা পাবে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা! প্রশাসনের বা সরকারের একটি মাত্র আদেশে নদীর মাটি ঠিকই ভাটায় চলে যায়। কিন্তু আদেশ দেবারও যেমন লোক নেই, আদেশ হলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রয়েছে একবারেই অবহেলা। কাজটা করলে যে সব শ্রেণির মানুষের উপকার হবে এটা কেন যে কেউ বুঝতে পারছে না তা বোধগম্য নয়।
মূলত মাটির ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটারকে টপ সয়েল বলা হয়। ফসল উৎপাদনের জন্য গুরুত্ব রয়েছে এই মাটির অংশের। মৃত্তিকা বিজ্ঞানের সুত্র মতে, এক সেন্টিমিটার তৈরি হতে হাজার হাজার বছরও সময় লাগে। একবার এই টপ সয়েল নষ্ট হলে নিয়মিত পরিচর্যার পরও সময় লাগে অনেক দিন। ফসলের শেকড় মাটির উপরিভাগের স্তর থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। এই নষ্টের কারণে উর্বরতা বলতে আর কিছু থাকবে না। এতে উৎপাদন কমে গিয়ে খাদ্য সংকট দেখা দেবে।
টপ সয়েল কাটার ফলে ইতোমধ্যে অনেক এলাকয় ফসল উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক ফসলী জমির মাটি কাটায় গভীরতা সৃষ্টি হওয়ায় সেসব জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সেখানে আর ফসল হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে না। ভূমি সন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া আছে, ফসলী জমির মাটি কাটা যাবে না। যদি বিশেষ প্রয়োজনে কেউ মাটি কাটতে চায় তাহলে মাছ চাষ করা যায় এমন গভীর করে কাটতে হবে। শুধু তাই নয় কাটা জায়গার দু’পাড় বেধে দিতে হবে। আপন ভালো পাগলে বুঝলেও কৃষক বুঝতে চাচ্ছে না ফসলি জমির মাটি তার ভালো-মন্দের কথাটা। নদী খননের স্বার্থে, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য সংকট মোকাবেলায়,পরিবেশ রক্ষায় টপ সয়েল কাটা বন্ধ করে নদ-নদীর মাটি দিয়ে ইট তৈরির ব্যবস্থা জরুরীভাবে নেয়া দরকার।