৮৫ বছর ধরে পরিত্যক্ত ফেনী বিমান বন্দর চালু হলে খুলতে পারে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দ্বার।

প্রকাশিত: ৮:২১ অপরাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০২৩

শিবব্রত(বিশেষ প্রতিনিধি)
—————————————————-

ফেনী বিমান বন্দরটি সাত যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এটি সংস্কার করে চালু করলে পাল্টে যাবে ফেনীর দৃশ্যপট। দাবী ফেনীবাসীর।
এতে যেমন ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে এ অঞ্চলের মানুষ। একইসঙ্গে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়ও।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে তৎকালীন বৃটিশ সরকার এই বিমান ঘাঁটিটি নির্মাণ করে।
১৯৩৮ সালে জাপান ব্রিটিশ যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠী জাপানকে কাবু করতে তিনটি বিমান বন্দর প্রতিষ্ঠা করে। এর মধ্যে একটি হল ফেনীতে ।
ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে রেলযোগে বড় বড় পাথর, বোল্ডার ও অন্যান্য সামগ্রী এনে দ্রুতগতিতে চলতে থাকে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রানওয়ে ও অবকাঠামোনির্মাণকাজ।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এ বিমান ঘাঁটিই ছিল মিত্র বাহিনীর একমাত্র ভরসাস্থল।
১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নতুন করে আর ব্যবহার না হওয়ায় জৌলুস হারিয়ে যেতে থাকে এ বিমান বন্দরটির।
তৎকালীন ফেনী সদর ইউনিয়ন পরিষদ বর্তমানে ফেনী পৌরসভার সুলতান পুরে প্রায় ৩০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে বিমান বন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিমান বন্দরের জন্য প্রশাসনিক ভবন, সিগন্যাল ওয়ার ও বিমান ওঠা নামার জন্য রানওয়ে সড়ক ও নির্মাণ করা হয়েছিল।
১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ চলাকালীন বিমান বন্দরটির কার্যক্রম সচল ছিল।
সে সময় এ এলাকায় তেমন জনবসতি ছিল না। প্রতিষ্ঠার পর শুধু একটি সড়কই বিমানবন্দরে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা ছিল। ১৯৪৩ সালে জাপান ব্রিটিশ যুদ্ধ শুরু হলে মানুষের মধ্যে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। লোকমুখে শোনা যায় সেসময় ফেনী নোয়াখালী, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য লোক বিমান বন্দরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হলে বিমান বন্দরের জন্য নির্মিত স্থাপনা সমূহ অযত্নে অবহেলার শিকারে পরিণত হতে থাকে। সেই সঙ্গে বিমান বন্দরের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিগুলোও ক্রমে বেহাত হতে থাকে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত সে সময়ে নির্মিত স্হাপনাগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে রানওয়ের জন্য নির্মিত কিছু সড়ক দৃশ্যমান থাকলেও প্রশাসনিক ভবন ও সিগ্যানাল ওয়ারের ঘরগুলোর অস্তিত্ব বিলিন হয়ে গেছে । অনেক ভবনের ইটগুলো রোদ ও বৃষ্টিতে ভিজে দেয়াল থেকে খসে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বুঝার কোন উপায় নেই যে এখানে একসময় কোন স্হাপনা ছিল। চল্লিশের দশকের বিমান বন্দর এলাকায় জনবসতি না থাকলেও বর্তমানে সেখানে জনবসতি স্থাপিত হয়েছে। বিমান বন্দরের অধিকাংশ জায়গা চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের কবলে। তারা ওইসব জায়গায় বাড়িঘর ও দোকান নির্মাণ করেছে। আবার অনেকে চাষাবাদ ও করছে।
সরেজমিনে বিমানবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অনেক জমিতে আবাদ হচ্ছে ফসল। আর রানওয়েটি স্থানীয়রা ব্যবহার করছে গোচারণ, ফসল মাড়াই ও শুকানোর চাতাল হিসেবে।
সুখের বিষয় হলো এখানে ১৯৯৫ সালে সরকারি ভাবে গার্লস ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আশপাশের জনগোষ্ঠীর জন্য এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা ও মসজিদ। সনাতনী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য বিমান বন্দরের সন্নিহিত এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কালীবাড়ি।
ফেনী সদর হাসপাতাল মোড় থেকে ফেনী পৌরসভার অর্থায়নে সংস্কার ও উন্নয়ন করায় বিমান বন্দরে যাতায়াত একেবারে সহজ হয়ে গেছে।
উপস্থিত নব্বই বয়শোর্ধ কলিমুল্লাহ বলেন, বৃটিশ ও জাপান যুদ্ধের সময় বৃটিশদের সুবিধার জন্য এখানে বিমানবন্দর টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। যুদ্ধের সময় সৈন্য ও খাদ্য নিয়ে এখানে নানাধরনের বিমান সারাদিন রাত ধরে উঠানামা করতো। তিনি বলেন,যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এখানে আর কোন বিমান আসেনি।
মাওলানা আফাজ উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন,একসময় এই বিমানবন্দর অনেক সুন্দর ছিল। অনেক গুলো স্হাপনা ছিল।আরো বিশাল জায়গা ছিল। যুগের পর যুগ কার্যক্রম এবং তদারকি না থাকায় স্হাপনাগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং অনেক জায়গা অবৈধ দখল হয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্হানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, অনেকে প্রভাব খাটিয়ে
অবৈধ ভাবে বিমানবন্দরের জায়গা দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে চাষাবাদ করছে। প্রশাসনিকভাবে কোন তদারকি না থাকায় এরা বছরের পর বছর নির্বিঘ্নে পার করে দিচ্ছে।
কলেজ ছাত্র রহিম এবং লিটন বলেন, বয়োজ্যেষ্ঠরা এই এলাকাকে এখনও জাপান ব্রিটিশের লড়াইয়ের বিমান বন্দর বলে আখ্যায়িত করেন। আমরা নতুন প্রজন্ম বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে এ এলাকায় বিমান বন্দর প্রতিষ্ঠার গল্প শুনে থাকি। তারা বলেন আমরা দাবী জানাই এই বিমানবন্দর আবার চালু করা হোক।
ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার মজুমদার বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন,ব্যবসা বাণিজ্যে প্রসারসহ বিবিধ উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে অনেক মেগা প্রজেক্টের কাজ সম্পন্ন করছে।এই ধারাবাহিকতায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ফেনীর এই বিমান বন্দর টি ও চালু হতে পারে।
ফেনী জেলা প্রশাসক অফিস সুত্র জানায়, অবৈধ দখলের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।ওই সুত্র জানায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এই ফেনী বিমান বন্দরটি একসময় আবার চালূ হতে পারে।এইব্যাপারে সরকারী নির্দেশনা আসলে ফেনী বাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী পুরণে সহযোগীতা করা হবে।
এর মাঝে ৮৫ বছর গড়িয়েছে, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বন্দরটি চালু হওয়া এখন সময়ের দাবি বলে জানিয়েছেন জেলার বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের দাবি, আগামীর ফেনীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম সারথি হতে পারে বিমানবন্দরটি। জেলায় শিল্প-কারখানা নির্মাণ থেকে শুরু করে ব্যাবসায়িক কর্মচাঞ্চল্য বাড়াতে বিমানবন্দরটি রাখতে পারে বড় ভূমিকা।
————————