মহান বিজয় দিবস: শোষণ, বৈষম্য ও অন্যায় অবসানের অন্তিম রূপ রেখা

প্রকাশিত: ১:০৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৬, ২০২২

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির জীবনের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই বিজয় দিবস জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এই বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পৃথিবীর বুকে। এ দেশের মানুষের বীরত্ব দেখেছে বিশ্বের মানুষ। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব মানচিত্রে। এ দেশের মানুষের প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা, ত্যাগ, সাহস ও আত্মবিশ্বাসের চূড়ান্ত বিজয়ের দিন এবং আমাদের অপরিসীম আনন্দের মাহেন্দ্রক্ষণ। আমাদের অজস্র ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণ ও বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ এই দিন।

 

পৃথিবীর সব স্বাধীন দেশেরই স্বাধীনতা দিবস আছে। কিন্তু বিজয় দিবস নেই। আমরা একই সঙ্গে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের উত্তরাধিকারী। যে অগণিত শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই বিজয় সম্ভব হয়েছিল, আমরা তাঁদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। একই সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী নেতাদের।

তেইশ বছর ধরে চলে আসা অন্যায়, বঞ্চনা, শোষণ ও বৈষম্যের অবসান হয়েছিল এ মহান বিজয় দিবসের মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসকল অন্যায়, বঞ্চনা, শোষণ ও বৈষম্যের অবসান এক দিনের আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে অবসান হয়নি। এই মহান বিজয় দিবসের পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পরপরই বুঝতে পেরেছিলেন, যে বৈষম্যের শুরু হয়েছে অচিরেই তা চিরতরে অবসান হওয়া দরকার।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয় এবং আওয়ামী লীগের জয়লাভ করার সম্ভাবনা বুঝে পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থবাদীরা সামরিক শাসন জারি করে বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করার ব্যবস্থা করে এবং বঙ্গবন্ধুসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করে জেলে আটকে রাখে।

১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধু জেল হতে বের হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ পুনরায় পুনর্গঠন শুরু করেন। ছাত্রলীগের মাধ্যমে স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠন করে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন এবং একই লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালে বাঙালির বাঁচার দাবি ৬ দফা দিয়ে বাঙালিকে প্রকারান্তরে স্বাধীনতায় উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে গ্রেফতারের প্রায় ৩ বৎসর পর চিরতরে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ স্তব্ধ করার জন্য তথাকথিত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দায়ের করে ফাঁসিরকাষ্ঠে ঝুলাতে পাকিস্তানিরা চূড়ান্ত ব্যবস্থা করে। অবশেষে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠি সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে সফল হয়নি।

৪৭ বছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অর্জন আছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগ, শিল্প, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য আছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকেও আমাদের অগ্রগতি অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে বেশি।

সর্বোপরি যে ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক, সহিষ্ণু ও সমতাভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন শহীদেরা দেখেছিলেন, সেই লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় নীতি পরিচালিত হবে, এটাই প্রত্যাশিত। রাজনীতিতে পথ ও মতের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু সেটি কখনোই সংঘাত সৃষ্টির কারণ হতে পারে না। প্রতিটি মানুষ নির্ভয়ে মতপ্রকাশ করতে পারবে; দেশের উন্নয়ন ও জনকল্যাণে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখবে, এটাই হোক এবারের বিজয় দিবসে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।

লেখকঃ মোঃ মিজানুর রহমান (এম এ, এলএল বি), সম্পাদক, ক্রাইম পেট্রোল ডট নিউজ।