নারায়ণগঞ্জে ৩ মাসে যক্ষ্মায় আক্রান্ত ১৯০৪ জন || মৃত্যু ১৯

প্রকাশিত: ২:২৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২৩

মোঃআবু কাওছার মিঠু

স্টাফ রিপোর্টারঃ

নারায়ণগঞ্জে গত তিন মাসে ১৯০৪ জন যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে চিকিৎসাধীন ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৫ জুন) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের পলি ক্লিনিকের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সাংবাদিক সমাজের সাথে মতবিনিময় সভাটির আয়োজন করে জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির (নাটাব) নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা।
সভায় জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় এই জেলায় সংক্রমন ছড়ানোর ঝুঁকিও বেশি। অতিরিক্ত ঝুঁকিতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার মানুষ।
এছাড়া মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জে মোট জনসংখ্যা ৪৬ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। নারায়ণগঞ্জে বছরে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় ৫ হাজার রোগী। গত গত ৩ মাসে ১৯০৪ জন যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আড়াইহাজারে আক্রান্ত রয়েছে ২৫১ জন, বন্দরে ১২৪ জন, সদর উপজেলায় ৬৭৭ জন, রূপগঞ্জে ৩৩৯ জন ও সোনারগাঁয়ে ৩১৯ জন আক্রান্ত।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বিজিএমইএ‘র সদস্য ভুক্ত কারখানা গুলোতে ৫৯ ও বিকেএমইএ‘র সদস্য ভুক্ত কারখানা গুলোতে ১৩৫ জন আক্রান্ত রয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ১৯ জন। ৯৭ শতাংশ সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরছে আর মারা যাচ্ছে ২ শতাংশের বেশি।
নাটাবের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সেক্রেটারী মো. শাহ নেওয়াজ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহাম্মদ মুশিউর রহমান।
আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির (নাটাব) নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, ডা. সামিয়া মোশারফ হোসেন, ব্যাকের নারায়ণগঞ্জ জেলার এরিয়া সুপারভাইজার মাসুমা আখতার প্রমুখ।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান জানান, যক্ষ্মা বা টিবি একটি বায়ুবাহিত ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগ সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়ায় এবং দেহে প্রবেশ করে প্রথমে ফুসফুসে আশ্রয় নেয়। যক্ষ্মায় আক্রান্ত সব রোগীর কাছ থেকেই কিন্তু যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায় না। যাদের থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তাদের হাঁচি-কাশি, এমনকি কথা বলার সময়ও বাতাসে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায়। এ জীবাণু বেশ কয়েক ঘণ্টা বাতাসে ভেসে থাকে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় সুস্থ ব্যক্তির ফুসফুসে ঢুকে যেতে পারে বাতাসে ভেসে থাকা এ জীবাণু।

এভাবেই অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। প্রতি এক জন রোগী পরিবার, স্বজন ও আশপাশের অন্তত ১০ জনের মধ্যে সংক্রমন ছড়াতে পারে। সারাদেশে গড়ে ১ বর্গ কিলোমিটারে ১ হাজার ২৮০ জন মানুষ বসবাস করলেও নারায়ণগঞ্জে বসবাস করে ৫ হাজার ৭৮০ জন। এ জেলায় মানুষের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় সংক্রমন ছড়ানোর ঝুঁকিও বেশি।

তাই নারায়ণগঞ্জের মানুষের মাঝে যক্ষ্মা বিষয়ে সচেতন হওয়া বেশি জরুরী।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ভারতে। তাই বাংলাদেশকে শতভাগ যক্ষ্মা রোগ থেকে মুক্ত করতে কাজ করছে সরকার। যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা ও চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সমূহ, বিকেএমইএ‘র কারখানা গুলোতে বিনামূল্যে যক্ষ্মার পরীক্ষা ও যক্ষ্মারোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসাপাতালে আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়।

কারখানা গুলোতে বিনামূল্যে যক্ষ্মার পরীক্ষা ও যক্ষ্মারোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। সভায় নারায়ণগঞ্জে কর্মরত প্রায় ৩৫ জন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।