ঢাকা মিটফোর্ডের সামনে অবৈধ গাড়ি ও ট্রাকস্ট্যান্ড এবং দোকান ভোগান্তিতে রোগীরা।

প্রকাশিত: ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩

শিবব্রত(বিশেষ প্রতিনিধি)
***************************************
পুরান ঢাকার ডিসি রায় রোড এবং মিটফোর্ড সংলগ্ন বটতলার দু’পাশে , আর্মেনিয়ান স্ট্রিটে সারি করে রাখা হয়েছে পিকআপ ভ্যান, কাভারড ভ্যান ও লড়ি। ফলে অপ্রশস্ত এ সড়কে যান চলাচলের জন্য কম জায়গাই অবশিষ্ট রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে দিন পার করছেন মিটফোর্ড হাসপাতালে আসা রোগী ও পথ যাত্রীরা।
এছাড়াও হাসপাতালের সামনে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিক, আরমানিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অনেকগুলো জরুরি ঔষধের দোকান থাকা সত্ত্বেও সেখানে সামনেই পার্কিং করা থাকে এসব ট্রাকগুলো। ঢাকা ট্রাফিক দক্ষিণের নিয়মানুসারে এসব ট্রাক পুরান ঢাকায় রাত ১০ টায় ঢুকে ভোর ৫ টার মধ্যে বের হয়ে যাবার কথা। কিন্তু এসব নিয়মের কিছুই মানছেন না এসব ট্রাক মালিক শ্রমিকরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুধু এই সড়ক নয়, আরমানিটোলা মাঠের চারপাশ তাঁতীবাজারসহ এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ এই স্ট্যান্ড এ। এতে যাতায়াতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে যানবাহনগুলো পার্কিং ও বের করার সময় দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে হয়।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় চলছে এই ‘পার্কিং ব্যবসা।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আর্মেনিয়ান স্ট্রিট ছাড়াও মিটফোর্ড বটতলা থেকে চকবাজার মোড়, শরৎচন্দ্র রোড, আরমানিটোলা মাঠের পাশ থেকে নয়াবাজার এবং তাঁতীবাজার থেকে জিন্দাবাহার সিরাজ-উদ-দৌলা পার্ক পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে পিকআপ ও ছোট ট্রাক রাখা হয়েছে, ফলে তৈরি হচ্ছে যানজট। এই এলাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল, আহমেদ বাওয়ানি একাডেমি, আর্মেনিয়ান চার্চ, আরমানিটোলা সরকারি বিদ্যালয়, হাম্মাদীয়া স্কুল, আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শ্রমজীবী হাসপাতাল, গণগ্রন্থাগার, সমাজসেবা অধিদপ্তরের শহর সমাজসেবা কার্যক্রমের অফিসসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাস্তা দখল করে পার্কিংয়ের ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতকারীদের নিত্য দুর্ভোগে পড়তে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা কুদ্দুস হোসেন বলেন, পুরান ঢাকার সড়কগুলো এমনিতেই যথেষ্ট প্রশস্ত নয়, তার মধ্যে কখনও রাস্তার দু’পাশে এক সারি, আবার কখনও দুই সারি করে পিকআপ রাখা হয়। ফলে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ সবার চলাচলে বেশ সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি দুটি রিকশা চলারও জায়গা থাকছে না। কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার মতো পরিস্থিতিও থাকে না। যানগুলো অনেক বাসা ও দোকানের সামনে পার্ক করে রাখার ফলে তাদেরও ঢুকা-বের হওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া বাবুবাজারে বুড়িগঙ্গা সেতুতে ওঠার মুখে অঘোষিত বাসস্ট্যান্ডের ফলে তৈরি হচ্ছে যানজট।
ফেনী থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালে আসা এক নারী রোগী ইসমা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত দূর থেকে ঢাকায় আসি চিকিৎসা করতে। এখানে যানজট ও চলাফেরার ব্যাপক অসুবিধার জন্য সুস্থ হবার চেয়ে মানসিকভাবে আরোও বেশি অসুস্থ হয়ে পরি। এসব দেখার কেউ নেই !
এছাড়া ও হাসপাতালের গেইটে রাস্তায় দুপাশে রয়েছে ছোট ছোট দোকান এবং রিকশা সিএনজির সারি।
কথা হয় হাসপাতালের মুল গেইটের সামনে বসা চা দোকানদার মাহতাবের সাথে।তিনি বলেন এখানে যারা দোকান করেন তারা সবাই এই হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের আত্মীয় অথবা পরিবারের লোকজন।তার স্ত্রী লাভলী আক্তার এই হাসপাতালে সুইপারের দায়িত্বে আছেন বলে জানান মাহতাব।অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মাহতাব বলেন,এখানে বসার কোন বৈধতা নেই। অনেক সময় উর্দ্ধতন কেউ আসলে তারা কেটে পড়েন।আপনারা এভাবে মুল গেইটের রাস্তায় দখল করে বসলে জরুরি রোগী নিয়ে এ্যাম্বুলেন্স গুলো চলাচলে তো সমস্যা হয় এই কথার জবাবে চা দোকানীর মাহতাব কোন কথা বলতে রাজি হননি।
হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ আসাদুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের আসা আম্বুলেন্সগুলো এই জ্যামে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকে। অনেক সময় রোগী হাসপাতালে আসার আগেই মারা যায় বা খারাপ অবস্থায় পৌঁছে যায়। তখন আমাদের আর কিছুই করার থাকে না। এছাড়া এখানে পাশেই স্কুল রয়েছে। স্কুলগামী ছাত্র ছাত্রীরা প্রায়ই ভোগান্তির শিকার হয়। গতকালও এক নারী রোগীর উপর চড়াও হয় ট্রাক শ্রমিকরা। পুলিশ বা থানায় টাকা দিয়ে তারা এসব যত্র তত্র পার্কিং করে আসছে।
দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মালবাহী এই যানগুলো আগে মূল সড়কে রাখা হতো। পুলিশের তৎপরতায় বন্ধ হয়েছে তা। তবে এখন ভেতরের সড়কগুলোয় পার্কিং শুরু করেছে তারা। সেখানেও প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চালানো হয়। রেকার ব্যবহার করে সরিয়ে দেয়া হয় যানগুলো।
ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ অবশ্য মালবাহী এসব যানের প্রয়োজনীয়তার দিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন। কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি দোকানের কর্মচারী রফিক উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়িক এলাকা হওয়ায় অনেকেরই এসব পিকআপ বা ট্রাকের দরকার পড়ে। সে কারণেই যানগুলো কাছাকাছি থাকলে সুবিধা হয়। তবে এতে জনগণের কিছুটা দুর্ভোগ হয় বলে স্বীকার করেন তিনিও।
এখানে ট্রাক রাখার কারণ জানতে চাইলে এক ট্রাক শ্রমিক আলিম মিয়া জানান, আমাদের সকল মালামাল নামে এই স্ট্যান্ডে। সারা রাতে মালামাল নামানো শেষ হলেও সারাদিন চলে যায় আবার ফিরতি মাল উঠাতে। আমাদের বাধ্য হয়েই এখানে ট্রাকগুলো পার্কিং করে রাখতে হয়। এ ছাড়া কাছে কোথাও ফাঁকা জায়গা বা ট্রাক স্ট্যান্ড ও নেই যে সেখানে ট্রাকগুলো রাখবো। আমরাও বুঝি রোগীদের সমস্যা হয়। কিন্তু আমাদের সমস্যাটাও তো বুজতে হবে।