‘রাতে ৫-৬ লাখ টাকার মাল তুলছি, কয়েক ঘণ্টার আগুনে সব ছাই’

প্রকাশিত: ৩:৫৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

বুধবার রাতে নগদ টাকায় আগাম পণ্য কিনে রেখেছিলেন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। লক্ষ্য ছিল শুক্রবারের জমজমাট বাজারে ব্যবসা করে লাভ তোলা। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতের শুরু হওয়া কয়েক ঘণ্টার আগুনে সবকিছু হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব।

ভোট রাতের ৩টা ৪৩ মিনিটে কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শী এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।

সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই মার্কেটের অধিকাংশ দোকান আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। 

এমনই একটি ধ্বংসস্তপের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাজারের আলু ও পেঁয়াজের পাইকারী ব্যবসায়ী মিরাজ। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ’ আগুনে পুড়ে ছাই। পায়ের নিচে স্তুপ হয়ে আছে পোড়া আলু আর পেয়াজ।

 কান্না জড়িত কণ্ঠে মিরাজ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমাদের মার্কেট বন্ধ। শুক্রবার বেচমু দেইখা বুধবার রাত দশটায় ৫/৬ লাখ টাকার মাল তুলছি। কয়েক ঘণ্টার আগুনে সব ছাই হইয়া আছে। আমার বাবায় এডি দেখলে মইরা যাইব।
’মিরাজ জানান, প্রায় পাঁচ দশক ধরে কৃষি মার্কেটে আলু, পেয়াজসহ বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি বিপণন করতেন তার পিতা আব্দুস সাত্তার। কয়েক বছর আগে বাবার ব্যবসার হাল ধরেন তিনি। আগুনে পুড়ে দীর্ঘ দিন ধরে গড়ে তোলা ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ‘দোকানের খাতায় লাখ লাখ টাকার হিসাব ছিল। সব কিছু ছাই হইয়া গেছে। কোনো হিসাব আমার কাছে নাই। আমি ফকির হইয়া গেছি।’

মিরাজের মতই বুধবার রাত ১১টায় নগদ সাত লাখ টাকার চাল তুলেছিলেন মা রাইস এজেন্সির মালিক আব্দুল মোতালেব। মার্কেটে তার খ-৫৬ নম্বর দোকানটি এখন শুধুই ছাই। সে ছাই থেকেই পোড়া চাল তুলছিলেন তিনি। মোতালেব বলেন, ‘বোনের থেকে ধার কইরা চাইল তুলছিলাম। এখন সব পোড়া চাইল হাতাইতেছি। এক রাইতে ফকির হইয়া গেলাম।’

বাজারের অনান্য পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, কৃষি মার্কেটের সাপ্তাহিক বন্ধ বৃহস্পতিবার। শুক্রবারের জমজমাট ব্যবসা ধরতে প্রতি বুধবার রাতেই তারা আগাম পন্য কিনে রাখতেন। এজন্য প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে কিছুটা হলেও নগদ টাকা পরিশোধ করতে হয়। সব সময়ের মতোই গত বুধবার রাতেই অধিকাংশ ব্যবসায়ী আগাম পণ্য কিনে রেখেছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের কয়েক ঘন্টার মধ্যে এসব ব্যবসায়ীর পণ্যসহ প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ‘আমাদের বরাদ্দ দেওয়া দোকান ছিল ৩১৭টি। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত আমরা যেই তথ্য পেয়েছি তা অনুসারে ২১৭টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ফায়ার সার্ভিস বলেছে, ভেতরে পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।’