দক্ষিণ চট্টগ্রামে অনেক সপ্ন ও সম্ভাবনার বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত। ক্রাইম পেট্রোল ক্রাইম পেট্রোল News প্রকাশিত: ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ বিশেষ প্রতিনিধি : যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’। পরীক্ষামূলক চালানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। উদ্বোধনের পরদিন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে এটি। আগামী ২৮ অক্টোবর দেশের প্রথম এই টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশা করা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু টানেলের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পূর্বমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। কর্ণফুলীর দুই পাড়ে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতীক্ষিত ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকার উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। এবার টানেল উন্মুক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।’ বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের প্রথম এই টানেল যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরদিন এটি খুলে দেওয়া হবে। দেশ প্রবেশ করবে টানেলের যুগে।’ তিনি জানান, টানেল দিয়ে এখন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের যানবাহন পরীক্ষামূলক চালানো হচ্ছে, তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। প্রকল্পের ৯৮ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে, এখন চলছে ফিনিশিং। ডিসেম্বরের মধ্যে সব কাজ হয়ে যাবে। সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন জানান, টানেলে আপাতত মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যান (থ্রি-হুইলার) চলবে না। নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। টানেল ঘিরে চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। প্রতিদিন পতেঙ্গা এলাকায় ভিড় করছে বহু মানুষ। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে টানেলের ভেতর বা সীমানায় কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের প্রথম টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু করোনার কারণে মাঝে কিছুদিন প্রকল্পের কাজ গতি হারালেও পরে সেই গতি ফিরিয়ে আনা হয়। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। টানেলের স্বপ্নদুয়ার কখন খুলবে– এ নিয়েই ছিল অপেক্ষা। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে শিগগির। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে। শুরুতে যানবাহনের সংখ্যা কম হলেও ধীরে ধীরে বাড়বে। বেশি চলাচল করবে কনটেইনারবাহী ট্রেলার, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। শুরুতে দৈনিক গড়ে সাড়ে ১৭ হাজার গাড়ি চলবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কর্ণফুলীর তলদেশে তৈরি করা হয়েছে দুটি সুড়ঙ্গ। ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেই সুড়ঙ্গ ধরে হয়েছে ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুটি টিউব। এ দুই টিউবের বুক চিরে তৈরি করা হয়েছে চার লেনের সড়ক। দক্ষিণ টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে শহরমুখী যানবাহন আসবে এবং উত্তর টিউব দিয়ে শহর থেকে আনোয়ারার দিকে যানবাহন যাবে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। তবে সংযোগ সড়ক মিলে টানেলের দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলে টিউব দুটি থাকলেও সংযোগ পথ আছে তিনটি। একটি বিকল্প পথ হিসেবে প্রথম দুটি সুড়ঙ্গের সঙ্গে যুক্ত। কোনো কারণে মূল দুটি পথে বাধা তৈরি হলে তৃতীয় পথ ব্যবহার হবে। দুই সুড়ঙ্গের মধ্যে প্রথম সংযোগ পথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ১৪ মিটার। দ্বিতীয় বা মধ্যবর্তী সংযোগ পথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৩৪ মিটার এবং শেষটির দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৭৪ মিটার। প্রতিটির ব্যাস গড়ে সাড়ে ৪ মিটার। শুরুতে টানেল প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। কিন্তু পরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার অর্থ সহায়তা দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা সহায়তা দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী এলাকায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে গভীর সমুদ্রবন্দর, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি স্টেশনসহ জ্বালানিভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। বঙ্গবন্ধু টানেল সেগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করবে। সময় ও দূরত্ব কমে আসবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার চলাচলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সিটি আউটার রিং রোড দিয়ে কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা প্রান্ত দিয়ে টানেলে প্রবেশ করে আনোয়ারা প্রান্ত হয়ে পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়কের চাতরী চৌমুহনী পয়েন্টে ওঠা যাবে। স্থানীয়রা বলছে, বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামে তৈরি হয়েছে অনেক সম্ভাবনা। SHARES জাতীয় বিষয়: