মিতু হত্যা মামলায় এই চার জনসহ মোট ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন।

প্রকাশিত: ২:০৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে, সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় আরো চার জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

এই চার জনের মধ্যে, জব্দ তালিকার দু’জন এবং সিআইডি’র ব্যালাস্টিক এক্সপার্টও রয়েছে। এর আগে, এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৪ জন। মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুর রশিদ জানান, মিতু হত্যা মামলায় এই চার জনসহ মোট ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

সোমবার কোনো সাক্ষীর জেরা হয়নি। এর মধ্যে সেসময় সিআইডি চট্টগ্রামে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক (ব্যালাস্টিক এক্সপার্ট), ফলের দোকানদার, পুলিশ কনস্টেবল ও মিতু যে ভবনের বাস করতেন, সেই ভবনের বাসিন্দা আছেন। আগামী ১৬ অক্টোবর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

সাক্ষ্যে জিইসি মোড়ের ফল দোকানের কর্মচারি আবদুর রহিম জানান, “ঘটনার দিন সকালে দোকান খুলতে গেলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও লোকজনের ভিড় দেখতে পাই। তারা জানায়, এখানে একজনকে সন্ত্রাসীরা মেরে চলে গেছে। সেখান থেকে পুলিশ তিনটি গুলি, একটি গুলির খোসা ও এক জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করে জব্দ তালিকা করে। আমাকে স্বাক্ষর করতে বলায় আমি স্বাক্ষর করি।”

একই ভবনের বাসিন্দা উম্মে ফরহাদ আহমেদ সুরমা আদালতে জানান, “আমার দুই ছেলেও ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে পড়ে। ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে আমার স্বামী ফোন করে আমাকে জানায়, মিতু ভাবি মারা গেছে। আমি লিফট থেকে নেমে দেখি মাহির। ও আমাকে বলে, আমার আম্মু মারা গেছে। সে তখন কান্না করছিলোৈ। তাকে ভবনের ভিতরে পাঠিয়ে আমি ওয়েল ফুডের সামনে যাই। দেখি মিতু ভাবি রাস্তায় পড়ে ছিলেন রক্তাক্ত অবস্থায়। গুলির চিহ্ন দেখি। এরপর পুলিশ সুরতহাল করে। আমি স্বাক্ষর করি।”

পাঁচলাইশ থানার তৎকালীন কনস্টেবল রনিতা বড়ুয়া সাক্ষ্যে জানান, “ঘটনার দিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে এসআই ত্রিরতন বড়ুয়া ফোন করে বলে যে জিইসি মোড়ে একটা লাশ আছে। ওখানে যেতে বলে আমাকে। আরো দুজন পুলিশ সদস্যসহ সেখানে যাই আমি। ওখানে গিয়ে দেখি ওয়েল ফুডের সামনে কালো বোরকা পরা একটি লাশ পড়ে আছে। এসআই ত্রিরতন বড়ুয়া সুরতহাল করেন। তাকে সহযোগিতা করি। তিনি জব্দ তালিকা করেন।”

সে সময় সিআইডি চট্টগ্রামে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক ব্যালাস্টিক এক্সপার্ট আবদুর রহিম জানান, “২০১৬ সালের ৩০ জুন সিএমপি ডিবি’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের কাছ থেকে পাওয়া স্মারক মূলে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটি কাগজের বাক্সের ভিতর সিলগালা অবস্থায় আলামত পাই। আলামত হিসেবে ৭ পয়েন্ট ৬৫ এমএম পিস্তলের দুটি অব্যবহৃত, একটি ব্যবহৃত ও একটি মিস ফায়ার হওয়া কাতুর্জ, স্থানীয়ভাবে তৈরি একটি পয়েন্ট ৩২ ক্যালিবারের রিভলবার,স্থানীয়ভাবে তৈরি একটি রিভলবার পাওয়া যায়। ব্যালাস্টিক রিপোর্ট ও রাসায়নিক প্রতিবেদন পরীক্ষা শেষে এসব আলামতের বিষয়ে মতামত জমা করি আদালতে।”

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে, ছুরিকাঘাতে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

পরে, পিবিআই’র তদন্তে বেরিয়ে আসে, মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল যুক্ত রয়েছেন। এ অভিযোগে ২০১২ সালের ১২ মে বাবুলের দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান অভিযুক্ত উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। সেদিনই এ মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।