দ্বিতীয় দফায় ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়া হবে আগামী সপ্তাহে

প্রকাশিত: ৬:৪৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

জাপান আগামী সপ্তাহ থেকে ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় দফা তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলা শুরু করবে। চলতি বছরের গত ২৪ আগস্ট জাপান তেজস্ক্রিয় পানি (পরিশোধিত) সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া শুরু করে। এই সিদ্ধান্তে চীনসহ জাপানের প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা বলেছে, এই পদক্ষেপ এ অঞ্চলের সামুদ্রিক পরিবেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়েও দেখা দিতে পারে।

২৪ আগস্ট জাপান প্রশান্ত মহাসাগরে ১.৩৪ মিলিয়ন টন র্জ্য পানি নিঃসরণ শুরু করে। ২০১১ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে সুনামি আঘাত হানে জাপানে। এতে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি চুল্লি প্লাবিত হয়। চেরনোবিলের পর এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ পারমাণবিক বিপর্যয় হিসেবে গণ্য করা হয়।

এই ঘটনার পর কেন্দ্রের আশপাশের অঞ্চল থেকে এক লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ওই অঞ্চল এখনো ফাঁকা রাখা হয়েছে। ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য পানির জন্য সংরক্ষণের জায়গা ফুরিয়ে যাচ্ছে, যা পারমাণবিক চুল্লি ঠাণ্ডা করতে ব্যবহৃত হতো। এর পরেই জাপান সরকার সাগরে তেজস্ক্রিয় পানি (পরিশোধিত) ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
 

এর আগে জাতিসংঘ বর্জ্য পানি সাগরে ফেলার অনুমোদন দেয়। তাদের একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছিল, জাপানের সুনামিতে বিধ্বস্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বর্জ্য পানি সমুদ্রে ছাড়ার পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বলেছে, এই বর্জ্য পানি সমুদ্রে ফেললে পরিবেশের ওপর ‘নগণ্য’ প্রভাব পড়বে।

তবে গত ২৪ আগস্ট তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়ার কারণে চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলো জাপান থেকে সব ধরনের সামুদ্রিক খাবার আমদানি বন্ধ করে দেয়। টোকিও ও জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি কর্তৃপক্ষ বলে আসছে, শোধন করে সাগরে ছাড়া এ পানি থেকে বিপদের ভয় নেই।

এতে যে তেজস্ক্রিয়তা রয়েছে তা সহনীয় মাত্রার মধ্যে। বিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় অধিকাংশ তেজস্ক্রিয় উপাদান সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হলেও ক্ষতিকর ট্রিটিয়াম কিছু পরিমাণে হলেও পানিতে থেকে যায়। পানিতে থেকে যাওয়া ট্রিটিয়াম ঠিক কতটা ক্ষতি করতে পারে, তা নিয়ে অবশ্য বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। 

জাপান বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পানিতে যে পরিমাণ ট্রিটিয়ামের উপস্থিতি অনুমোদনযোগ্য বলে সুপারিশ করেছে, তার চেয়ে কম ট্রিটিয়াম আছে এই পরিশোধিত পানিতে। তবে প্রতিবেশী দেশগুলো জাপানের এই যুক্তি মেনে নিতে রাজি হয়নি।

ফুকুশিমা অপারেটর টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার (টেপকো) বৃহস্পতিবার বলেছে, ‘প্রথম দফা বর্জ্য পানি নিষ্কাশন সম্পন্ন হয়েছে… (দ্বিতীয়) নিষ্কাশন ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হবে।’

প্রথম পর্যায়ে পরিকল্পিত মোট ১.৩৪ মিলিয়ন টন পানির মধ্যে প্রায় সাত হাজার ৮০০ টন পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যা ৫০০টিরও বেশি অলিম্পিক সুইমিংপুলের সমতুল্য। টেপকো বলেছিল, বর্জ্য পানিতে ট্রিটিয়াম ছাড়া সব তেজস্ক্রিয় উপাদান ফিল্টার করে বের করা হয়েছে। যা নিরাপদ জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থাও তাদের সমর্থন দিয়েছে। চীন জাপানকে ‘নর্দমা’র মতো সাগরকে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছে।

পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে কয়েক দশক সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টেপকো কর্মকর্তা আকিরা ওনো বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রথম নিষ্কাশনের মতো আমরা ট্রিটিয়ামের মাত্রার দিকে খেয়াল রাখব। জনসাধারণ যাতে সহজে বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো বুঝতে পারে তার জন্য চেষ্টা করে যাব এবং সব ধরনের তথ্য দিয়ে যাব।’

সূত্র : এএফপি