সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয়েছে ছয় হাজার ৭৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র

জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের চেয়ে বিক্রির চাপ বেশি

প্রকাশিত: ৮:৪৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের ব্যয় বেড়েছে। সংসারে বাড়তি ব্যয়ের চাপ সামাল দিতে সঞ্চয় ভাঙছে মানুষ। এখন মেয়াদপূর্তির পর যে হারে সঞ্চয়পত্র ভাঙছে, সে হারে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ কমে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে নেমেছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ছয় হাজার ৭৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ছয় হাজার ৮৯৩ কোটি ৬৪ টাকা। সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর সেপ্টেম্বর মাসে এ খাতে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্মক) দাঁড়িয়েছে ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার চেয়ে আগের সুদ-আসল পরিশোধ করেছে বেশি।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২১ হাজার ৬৫৬ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ২২ হাজার ৯২১ কোটি দুই লাখ টাকা। মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর তিন মাসে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্মক) দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৬৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণের চেয়ে পরিশোধের পরিমাণ বেশি।

গত অর্থবছরের একই সময়ে (তিন মাসে) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তার আগের অর্থবছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল আট হাজার ৫৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ধারাবাহিক কমছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ঠিক করছে সরকার, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ৪৮.৫৭ শতাংশ বা ১৭ হাজার কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

 

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সাত হাজার ১৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র জমা বা বিক্রি করেছিল সরকার। এর মধ্যে মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ছয় হাজার ৬২৫ কোটি ৩২ টাকা। সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট ঋণ ছিল ৩৯৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।

আর ২০২২-২৩ পুরো অর্থবছরের (জুলাই-জুন) ১২ মাসে ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ সরকার পরিশোধ করেছে ৮৪ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। উল্টো তিন হাজার ২৯৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা সরকার তার কোষাগার ও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে।

গত পাঁচ অর্থবছরে তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার ঋণ নেয় সরকার। পরের অর্থবছর (২০১৮-১৯) নিট ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয় ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারি নিট ঋণ ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে নেওয়া ঋণ বেড়ে হয় ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। অবশ্য ২০২১-২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ১৯ হাজার ৯১৬ কোটি টাকার ঋণ নেয় সরকার।

এখন পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১.৫২ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১.৭৬ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১.২৮ শতাংশ, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১.৪ শতাংশ। কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলেও এখনো তা ব্যাংকের তুলনায় বেশি।