করমুক্ত হলো সর্বজনীন পেনশনের অর্থ

প্রকাশিত: ১১:৫০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় পেনশনের অর্থ করমুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি এই স্কিমে দেওয়া চাঁদা
বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে কর রেয়াত সুবিধা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআর গত বুধবার এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এই প্রজ্ঞাপনে সই করেন।

এর ফলে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে গ্রহীতাকে আয় থেকে কোনো আয়কর দিতে হবে না। পাশাপাশি এই স্কিমের চাঁদা কোনো খাতে বিনিয়োগ হলেও তা আয়কর মুক্ত হবে।দেশের সব নাগরিকদের জন্য গত ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই পেনশনের চারটি স্কিম এর মধ্যে রয়েছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা স্কিম।

এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, একজন পেনশন ভোগকারী প্রতি মাসে যখন পেনশনের টাকা পাবেন, তখন তা করমুক্ত থাকবে। একই সঙ্গে একজন করদাতা তার আয়ের একটি অংশ সরকার নির্ধারিত কিছু খাতে বিনিয়োগ করলে বছর শেষে কর রেয়াত পাওয়া যাবে। যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে, তার ১৫ শতাংশ বা ১০ লাখ টাকার কম যে অর্থ হবে, সেই পরিমাণ অর্থ করছাড় পাওয়া যাবে। তবে নতুন আয়কর আইনের ষষ্ঠ তফসিলে সরকার নির্ধারিত খাতগুলোর মধ্যে পেনশন স্কিমের চাঁদার কথা উল্লেখ নেই।

এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এখন সেখানে পেনশন স্কিমের চাঁদা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, নতুন আয়কর আইন-২০২৩-এর ষষ্ঠ তফসিলে (অংশ-৩) বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্র, জীবন বিমার প্রিমিয়াম, প্রভিডেন্ট ফান্ডের চাঁদা, স্বীকৃত ভবিষ্যত্ তহবিলের চাঁদা, সরকারি সিকিউরিটিজ বা মিউচুয়াল ফান্ডে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ, বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা (মাসিক ১০ হাজার) ডিপিএসে বিনিয়োগ ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে সেই অর্থের ওপর কর রেয়াত বা করছাড় পাওয়া যাবে।

অন্যদিকে, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩-এর ১৪ (১) (ঢ) ধারায় বলা আছে, পেনশনের চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ পাওয়া অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।

তবে আয়কর আইনের ৭৬ (২) ধারায় বলা আছে, আয়কর আইন ছাড়া অন্য কোনো আইন বা আইন হিসেবে পরিগণিত দলিলের মাধ্যমে যদি কোনো ব্যক্তিকে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে ওই আইন বা আইন হিসেবে পরিগণিত দলিলে যাই থাকুক না কেন, এনবিআর প্রজ্ঞাপন দ্বারা ওই ব্যক্তিকে কর অব্যাহতি না দিলে সেই বিধান কার্যকর হবে না। তাই বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে উদ্যোগ নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে, গত মাসে আয়কর আইনে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের চাঁদা করছাড় দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় করছাড় দিয়ে এসআরও জারি করতে এনবিআরকে তাগাদা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাব্বির আহমেদ স্বাক্ষরিত এনবিআরকে দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করেছেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, এই অবস্থায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের অধীনে দেওয়া চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত এবং মাসিক পেনশন বাবদ পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত করার জন্য এসআরও জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী অনুরোধ করেন।

এদিকে গত ২২ অক্টোবর সর্বজনীন পেনশন তহবিলে জমা হওয়া অর্থ থেকে ১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা দিয়ে ট্রেজারি বন্ড কেনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, সর্বজনীন পেনশন তহবিল নামের ব্যাংক হিসাবে পেনশন স্কিমে অংশ নেওয়া সবার জমা দেওয়া অর্থ জমা থাকবে। এই অর্থ জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নিরাপদ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ উেস বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের ট্রেজারি বন্ডকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্য লভ্যাংশের ভিত্তিতে পেনশনারের মাসিক অ্যানুয়াটি হিসাব করে একজন পেনশনারের মাসিক পেনশন দেওয়া হবে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন তহবিলে ১৪,৯২৮ জন অংশগ্রহণকারীর চাঁদায় ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার টাকা জমা হয়েছে। ওই জমা অর্থ থেকে ১০ বছর মেয়াদী ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।