ফোর্বসের প্রতিবেদন

জিডিপিতে জাপানকে পেছনে ফেলল জার্মানি

প্রকাশিত: ১১:৪৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

সমৃদ্ধ অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাপকাঠিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এরপর দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্থানে থাকা চার দেশ হলো—যথাক্রমে চীন, জার্মানি, জাপান ও ভারত। ভারতের ফোর্বসের প্রতিবেদন গত শুক্রবার পৃথিবীর শীর্ষ ১০ অর্থনীতির দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে।

তালিকার ষষ্ঠ থেকে দশম স্থানে থাকা দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, ব্রাজিল ও কানাডা। 

জিডিপি একটি দেশের অর্থনীতির পরিধি মূল্যায়নের জন্য মূল হাতিয়ার। একটি দেশের জিডিপি পরিমাপ করার জন্য প্রচলিত পদ্ধতির মধ্যে সে দেশের ব্যয় জড়িত; যা তাজা ভোগ্যপণ্য, নতুন বিনিয়োগ, সরকারি ব্যয় এবং রপ্তানির নিট মূল্যের ওপর মোট ব্যয়ের সমষ্টির মাধ্যমে হিসাব করা হয়। এখন এসবের ওপর ভিত্তি করে ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর জিডিপি, আয়-ব্যয়সহ অন্য হিসাবগুলো দেখে নেওয়া যাক।

ফোর্বস বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬০ সাল থেকে চলতি ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জিডিপির আকারের দিক থেকে টানা শীর্ষস্থানে রয়েছে। সেই থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিষেবা, উৎপাদন, আর্থিক, প্রযুক্তি ইত্যাদি। দেশটির ভোক্তাবাজারের আকার খুবই বড়।

যুক্তরাষ্ট্র উদ্ভাবন, উদ্যোক্তার বাজারে অবস্থান ধরে রাখা ছাড়াও স্থিতিস্থাপক অবকাঠামোসহ বাণিজ্যিক অবস্থান ধরে রেখেছে। দেশটির মোট জিডিপি ২৬ হাজার ৯৫৪ বিলিয়ন ডলার। আর জনগণের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৮০ হাজার ৪১০ ডলার। বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ১.৬ শতাংশ।চীন

অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশাল উত্থান ঘটেছে চীনের।দেশটি ১৯৬০ সালে চতুর্থ স্থান থেকে ২০২৩ সালে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। চীনা অর্থনীতির প্রধান উপাদান উৎপাদন, রপ্তানি এবং বিনিয়োগ। দেশটির রয়েছে বিশাল জনশক্তি, জোরালো সরকারি সমর্থন, অবকাঠামোগত অগ্রগতি এবং দ্রুত বর্ধনশীল ভোক্তাবাজার। চীনের জিডিপির আকার ১৭ হাজার ৭৮৬ বিলিয়ন ডলার। বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫৪০ ডলার। এ ছাড়া বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫.২ শতাংশ।

 

জার্মানি

জার্মান অর্থনীতি বেশির ভাগই রপ্তানিনির্ভর। চলতি বছরের শুরুর দিকে ৪ নম্বর অবস্থানে থাকলেও নভেম্বরে এসে দেশটি তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। প্রকৌশল, গাড়ি, রাসায়নিক এবং ওষুধ রপ্তানির জন্য বিখ্যাত। সেই সঙ্গে দেশটিতে রয়েছে দক্ষ শ্রমশক্তি, শক্তিশালী গবেষণা ও উন্নয়ন উদ্যোগ এবং উদ্ভাবনের প্রতিশ্রুতি। জার্মানির মোট জিডিপির আকার চার হাজার ৪৩০ বিলিয়ন ডলার। জনগণের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৫২ হাজার ৮২০ ডলার। এতে বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার মাইনাস ০.১ শতাংশ।

জাপান

প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, উৎপাদন দক্ষতা, পরিষেবা শিল্প ইত্যাদি জাপানের অর্থনীতির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ছাড়া গাড়িশিল্প, ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি ও আর্থিক খাত জাপানের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। জাপানের বর্তমান জিডিপির আকার চার হাজার ২৩১ বিলিয়ন ডলার। জনগণের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৩৩ হাজার ৯৫০ ডলার। এতে  বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ১.৩ শতাংশ।

ভারত

২০২৩ সালে বিশ্বের জিডিপি র‌্যাংকিংয়ে ভারত পঞ্চম স্থানে রয়েছে। ভারতের অর্থনীতি বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। দেশটির অর্থনীতি মূলত তথ্য-প্রযুক্তি, পরিষেবা, কৃষি ও উৎপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে ঘিরেই পরিচালিত হয়। এ ছাড়া এই দেশের রয়েছে বিশাল এক অভ্যন্তরীণ বাজার, বৃহৎ তরুণ সম্প্রদায় এবং প্রযুক্তিগতভাবে পারদর্শী শ্রমশক্তি। মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ভারতের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। ভারতের বর্তমান মোট জিডিপির আকার তিন হাজার ৭৩০ বিলিয়ন ডলার। জনগণের বার্ষিক মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৬১০ ডলার।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি পরিষেবা, উৎপাদন, অর্থ এবং সৃজনশীল খাতের মিশ্রণ নিয়ে গঠিত। বিশ্বব্যাপী আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে লন্ডন। যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ তাদের বাণিজ্যের মাধ্যমে ঘটে থাকে। দেশটির মোট জিডিপি তিন হাজার ৩৩২ বিলিয়ন ডলার। জনগণের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৪৮ হাজার ৯১০ ডলার। এতে বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার মাইনাস ০.৩ শতাংশ।

ফ্রান্স

ফ্রান্সের বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি মহাকাশ, পর্যটন, প্রসাধনী এবং কৃষির মতো শিল্পের ওপর নির্ভর করে। ফ্রান্স তার শক্তিশালী সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থা, উন্নত অবকাঠামো এবং গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য বিখ্যাত। আশা করা হয়েছিল, ২০২৩ সালে ফ্রান্সের জিডিপি আনুমানিক দুই হাজার ৯২০ বিলিয়ন ডলার হবে। দেশটির বর্তমান মোট জিডিপি তিন হাজার ৫২ বিলিয়ন ডলার। জনগণের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৪৬ হাজার ৩২০ ডলার। এতে বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ০.৭ শতাংশ।

ইতালি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে উন্নত বাজার নিয়ে গড়ে উঠেছে ইতালি। দেশটি প্রভাবশালী ও অগ্রগামী ব্যাবসায়িক খাত এবং পরিশ্রমী ও প্রতিযোগিতামূলক কৃষিশিল্পের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠছে। দেশটির মোট জিডিপি দুই হাজার ১৯০ বিলিয়ন ডলার। জনগণের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৩৭ হাজার ১৫০ ডলার। এতে বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ০.৭ শতাংশ।

ব্রাজিল

ব্রাজিলের অর্থনীতি কৃষি, খনি, উৎপাদন এবং পরিষেবা নিয়ে বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে দেশটি কৃষি উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক কেন্দ্র। দ্রব্যমূল্য, অভ্যন্তরীণ ব্যবহার, অবকাঠামোর অগ্রগতিসহ বেশ কয়েকটি কারণ ব্রাজিলের অর্থনীতির বৃদ্ধিকে ধরে রেখেছে। দেশটির মোট জিডিপি দুই হাজার ১৩২ বিলিয়ন ডলার। জনগণের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১০ হাজার ৫১০ ডলার। এতে বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ০.৯ শতাংশ।

কানাডা

কানাডিয়ান অর্থনীতি তেল, গ্যাস, খনিজ পদার্থ এবং কাঠের প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভর করে গঠিত। তদুপরি দেশটি একটি সমৃদ্ধিশালী পরিষেবা খাত, একটি সুপ্রতিষ্ঠিত উৎপাদন শিল্প, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। দেশটির মোট জিডিপি দুই হাজার ১২২ বিলিয়ন ডলার। জনগণের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৫৩ হাজার ২৫০ ডলার। এতে বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ১.৫ শতাংশ।

মাথাপিছু জিডিপি অনুসারে বিশ্বের শীর্ষ দরিদ্রতম ১০টি দেশ হলো—দক্ষিণ সুদান, বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, সোমালিয়া, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, মোজাম্বিক, নাইজার, মালাউই, চাদ এবং লাইবেরিয়া।