উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পরশুরামে কমছে গুড়ের উৎপাদন ।

প্রকাশিত: ৫:৩৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৩

 

****************************************
শিবব্রত(বিশেষ প্রতিনিধি)
*****************************************

ফেনীর কৃষিনির্ভর পরশুরাম উপজেলায় কয়েক যুগ ধরে তৈরি হচ্ছে গুড়। আখের রস থেকে তৈরি এই গুড় স্থানীয়ভাবে ‘মিডা”নামে পরিচিত। সারা বছর জুড়ে গ্রামের লোকজন বিভিন্ন খাবার ,চা এবং মুড়ির সঙ্গে মেখেও স্বাদ নেন গুড়ের।

এবছর প্রায় ৫০ লাখ টাকারও বেশি মূল্যের বিক্রির আশা কৃষি বিভাগের। তবে বিগত বছরগুলোতে বিক্রি হয়েছিল আর ও বেশী। মূলত উৎপাদনে খরচ বাড়ায় গুড় উৎপাদন কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরশুরাম কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, খোন্দকিয়া,কাউতলী,সাহেব নগরের মুহুরী নদীর চরে বাণিজ্যিকভাবে আখ চাষ করা হয়। এসব আখের রস থেকে গুড় উৎপাদন করেন চাষীরা। চলতি বছর উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। তবে এবার বাণিজ্যিকভাবে শুধুমাত্র কাউতলীতেই গুড় উৎপাদন হচ্ছে। এ উপজেলার ২০ হেক্টর জমিতে চাষ করা আখ থেকে অন্তত ১০০ টন গুড় তৈরি হবে আশা করছে কৃষি বিভাগ। যার বাজারমূল্য ৫০ লক্ষ টাকারও বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরশুরাম উপজেলার খোন্দকিয়া, জেলেপাড়া,কাউতলী ও সাহেব নগর গ্রামের প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার বংশপরম্পরায় বাণিজ্যিকভাবে গুড় উৎপাদন করে আসছে। প্রতি বছর শীতের শুরুতে গুড় তৈরির কাজ শুরু করে পরিবারগুলো। মূলত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে গুড় তৈরি ও কেনাবেচা। প্রতি কেজি গুড় খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

গুড় নেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন আসছেন পরশুরামে। অনেকে গুড় নেওয়ার পাশাপাশি আখের রসও খেয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে গুড় তৈরির কর্মযজ্ঞ। প্রথমেই চলে আখ মাড়াই। গরুর চোখ ঢেকে ঘানি টানানোর মাধ্যমে আখ মাড়াই করে রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর রস জমিয়ে ছাঁকনি নিয়ে ছেঁকে রাখা হয় বড় কড়াইয়ে। পরবর্তীতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয় আখের রস। এরপর সেই রস লাল রং ধারণ করে গাঢ় হলেই
নামানো হয় কড়াই থেকে। এভাবেই তৈরি হয় মুখরোচক গুড়।
তবে প্রতিবছরই গুড় তৈরিতে খরচ বাড়ছে কৃষকদের। এবারের মৌসুমে আখ কাটা এবং মাড়াইয়ের কাজে একজন শ্রমিককে দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। যা গেল বছর ছিল ৪০০ টাকা বলে জানিয়েছেন গুড় উৎপাদনে জড়িতরা। ফলে খরচের তুলনায় গুড় ব্যবসা লাভজনক না হওয়ায় উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছেন তারা।

উপস্হিত বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফেজ চৌধুরী জানান, প্রতিবছর শীত মৌসুমে তিনি কাউতলী থেকে গুড় কিনে নিয়ে যান। সুস্বাদু এই গুড় তার বাড়ির সবাই অনেক পছন্দ করেন। বিভিন্ন পিঠা ও মুড়ির সাথে গুড় খেতে অনেক ভালো লাগে বলে জানান তিনি।

কাউতলী গ্রামের বাসিন্দা গুড় উৎপাদনকারী আলী মিয়া জানান, কয়েক বছর আগেও তাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আখ চাষ করত। কিন্তু দিন দিন আখ চাষীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আখ কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। সব মিলিয়ে গুড় তৈরিতে যে খরচ পড়ছে, সে অনুযায়ী দাম পাওয়া যায় না।

আরেক চাষী হোনা মিয়া জানান, বংশপরম্পরায় তিনি গুড় তৈরি করছেন। তবে ভালো লাভ না হওয়ায় বিগত সময়ের চেয়ে এবার কম জমিতে আখ চাষ করেছেন। তাছাড়া সরকারি কোন সাহায্য ও পান না আখ চাষে। এজন্য জমিতে এখন অন্য ফসলের চাষ করেন। এসব ফসল চাষ লাভজনক বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে পরশুরাম উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ‘এ বছর ১০০ টনের মতো গুড় উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। কীভাবে আখের ফলন বৃদ্ধি করে গুড়ের উৎপাদন বাড়ানো যায়- সে সম্পর্কে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ তুলনামূলক কম হওয়ায় কৃষকরা আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। আখের জমিগুলোতে কৃষকরা আলু, বেগুন ও কপির মতো চাহিদাসম্পন্ন ফলের চাষ করছেন।’