নীতিমালা জারি

অপরিশোধিত তেল আমদানি-বিক্রির সুযোগ পেল বেসরকারি খাত

প্রকাশিত: ১১:৪৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২৩
সংগৃহীত ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে অপরিশোধিত তেল আমদানি ও পরিশোধন করে বিক্রির সুযোগ পেলেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা। গতকাল সোমবার ‘বেসরকারি পর্যায়ে রিফাইনারি স্থাপন, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিপূর্বক মজুদ, পরিশোধন, পরিবহন ও বিপণন নীতিমালা-২০২৩’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের বিপণন শুরুর প্রথম তিন বছর উৎপাদিত ৬০ শতাংশ ডিজেল, পেট্রল, অকটেন, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল কিনে নেবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। পাশাপাশি জ্বালানি পণ্য রপ্তানিরও সুযোগ রাখা হয়েছে নীতিমালায়।

নীতিমালায় বলা হয়, বেসরকারি রিফাইনারিতে উৎপাদিত ডিজেল, অকটেন, পেট্রল, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল বিপণন শুরুর প্রথম তিন বছর মোট উৎপাদিত জ্বালানি তেলের ৬০ শতাংশ সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিপিসিকে সরবরাহ করতে হবে। বাকি ৪০ শতাংশ জ্বালানি তেল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও নিজস্ব নিবন্ধিত বিপণন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবে। তবে বিক্রয় নেটওয়ার্কের স্বল্পতার কারণে কোনো বেসরকারি রিফাইনারি ৪০ শতাংশ তেল বিক্রি করতে না পারলে এর যেকোনো পরিমাণ বিপিসির কাছে বিক্রি করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে সরবরাহের ন্যূনতম দুই মাস পূর্বে বিপিসিকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে।

পরবর্তী দুই বছরে বেসরকারি রিফাইনারিগুলো তাদের উৎপাদিত তেলের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিক্রি করতে পারবে। বিপিসির চাহিদা না থাকলে সংস্থাটির অনাপত্তি গ্রহণ সাপেক্ষে বিদেশে পরিশোধিত জ্বালানি তেল রপ্তানিও করতে পারবেন বেসরকারি রিফাইনারি মালিকরা। 

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। তার মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন সক্ষমতা ১৫ লাখ টন।

ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধিত হয়ে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েলসহ সরকারি বিপণন কম্পানির মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। 

সক্ষমতা বাড়াতে ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ স্থাপনের প্রকল্প নিচ্ছে বিপিসি, যা ২০২৭ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হবে। এটি হলে আরো ৩০ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করা সম্ভব হবে। বর্তমানে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে রিফাইনারি স্থাপন, অপরিশোধিত তেল আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রিতে অংশগ্রহণের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, পেট্রোম্যাক্স, অ্যাকোয়া রিফাইনারিসহ কয়েকটি বেসরকারি কম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রণালয়ে।

অনানুষ্ঠানিক আলোচনার ভিত্তিতে ইতিমধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে রিফাইনারি স্থাপনের জন্য ভূমি উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু করেছে। 

উদ্যোক্তাদের যোগ্যতা
নীতিমালায় বলা হয়, উদ্যোক্তাদের জ্বালানি পণ্য উৎপাদন, বিপণন বা সরবরাহ ও প্লান্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে ন্যূনতম তিন বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথবা এসংক্রান্ত ন্যূনতম পাঁচ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিদেশি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চুক্তি থাকতে হবে।

রিফাইনারি স্থাপনে আগ্রহী বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোনো তিন বছরে প্রতিবছর টার্নওভার কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বা সমমূল্যের মার্কিন ডলারে হতে হবে। বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে দেশে নিজস্ব কিংবা যৌথ মালিকানায় বার্ষিক ন্যূনতম ১৫ লাখ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন বা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতাসম্পন্ন রিফাইনারি স্থাপন করতে হবে।

রিফাইনারিতে নিজস্ব জেটি সুবিধা থাকতে হবে। বেসরকারি উদ্যোক্তাকে আবেদনের সময় অফেরতযোগ্য ফি হিসেবে এক কোটি টাকার পে-অর্ডার বিপিসির অনুকূলে প্রদান করতে হবে।

পরিবহন ব্যবস্থাপনা
উৎপাদিত জ্বালানি তেল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহন করার লক্ষ্যে নিজস্ব মালিকানায় বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার মেট্রিক টন তেল পরিবহনে সক্ষম চার থেকে পাঁচটি কোস্টাল ট্যাংকার থাকতে হবে। যার প্রতিটি ডাবল হাল ডাবল বটম হতে হবে। ৮০০ থেকে এক হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার চার থেকে পাঁচটি বে-ক্রসিং শ্যালো ড্রাফট ট্যাংকার থাকতে হবে। এসব জাহাজ আবশ্যিকভাবে ক্লাস শ্রেণিভুক্ত এবং ডাবল হাল ডাবল বটমবিশিষ্ট হতে হবে।

নদীপথে পরিবহন কম হলে সে ক্ষেত্রে সড়কপথে পরিবহনের জন্য পর্যাপ্ত ট্যাংক-লরির ব্যবস্থা থাকতে হবে। ট্যাংক-লরির ধারণক্ষমতা ন্যূনতম ৯ হাজার লিটার থেকে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে। বেসরকারি উদ্যোক্তার মালিকানাধীন জাহাজ, ট্যাংক-লরি ও বিপণন নেটওয়ার্কসমূহ আবশ্যিকভাবে নিজস্ব লোগোর মাধ্যমে চিহ্নিতকরণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।