টিনধারীর তুলনায় রিটার্ন জমা দেন তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ

প্রকাশিত: ১০:০৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
সংগৃহীত ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর আইন এই প্রথম বাংলায় করেছে। অনলাইনে এক পাতার ফরমের ব্যবস্থাও করেছে। কিন্তু যেভাবে টিআইএনধারীর সংখ্যা বাড়ছে, সে তুলনায় রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘কোনো দরকারে কেউ টিআইএন নেওয়ার পর কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে আর রিটার্ন দাখিল করছে না।

 

এ ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। রিটার্ন দাখিল করার পর না জানি কত ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এ জন্য টিআইএন নেওয়ার পর অন্তত প্রথম তিন-চার বছর কোনো করদাতাকে যেন কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন না করা হয়। প্রতিবছর ৩০ নভেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস পালন করে এনবিআর।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আয়কর সেবা মাসের শেষের দিকে এই দিবস পালন করা, করদাতাদের মধ্যে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না। সেবা মাসের শুরুতে যদি বড় পরিসরে দিবসটি পালন করা হয়, তাহলে প্রত্যক্ষ কর আদায়ে করদাতাদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

টিআইএনধারীর সংখ্যা : টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রতি বছরের জুন পর্যন্ত হিসাব করা হয়। এনবিআর থেকে জানা গেছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ৯৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৯ জনে।

 

একই ভাবে ২০২২ সালের জুন মাসে ছিল ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার ৮৪৯ জন, ২০২১ সালের জুন মাসে ছিল ৬৩ লাখ ৭৪ হাজার ১২২ জন, ২০২০ সালের জুন মাসে ছিল ৫০ লাখ ৪১ হাজার ৯৭০ জন, ২০১৯ সালের জুন মাসে ছিল ৪১ লাখ হাজার ১৮ হাজার ৮২৬ জন, ২০১৮ সালের জুন মাসে ছিল ৩৫ লাখ ২৮ হাজার ৬১৫ জন, ২০১৭ সালের জুন মাসে ছিল ২৯ লাখ ২২ হাজার ৯১২ জন, ২০১৬ সালের জুন মাসে ছিল ১৯ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৩ জন এবং ২০১৫ সালের জুন মাসে ছিল ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৫২ জন।

রিটার্ন দাখিল : রিটার্ন দাখিলের হিসাব করা হয় অর্থবছর বিবেচনায় নিয়ে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ছিল ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ২৬৩ জন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার ৯৮৮ জন। ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৪ লাখ ৬১৫ জন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ২২ লাখ ৯ হাজার ২৮০ জন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ১৭ লাখ পাঁচ হাজার ১৮৫ জন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬ জন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩ জন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ১০ লাখ ৯২ হাজার ৬৮৫ জন।

আয়কর আদায় : এনবিআরের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত ১২ বছরে প্রত্যক্ষ রাজস্ব আয় বা আয়কর বেড়েছে তিন গুণের বেশি। অর্থবছর অনুযায়ী : ২০১১-১২ অর্থবছরে আয়কর আহরণ হয়েছিল ২৯ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, একইভাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫২ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭০ হাজার ২০১ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭৩ হাজার চার কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৫ হাজার ২২৪ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে এক লাখ দুই হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল এক লাখ ১১ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। তবে টিআইএনধারীর তুলনায় রিটার্ন জমা দেন প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ।

এমন প্রেক্ষাপটে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ  বলেন, ‘প্রত্যক্ষ কর সরাসরি লোকদের কাছ থেকে নিতে হবে এবং এখানে মনোযোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে যিনি দেবেন এবং যিনি নেবেন দুই পক্ষেরই দায়িত্বশীল হতে হবে। এটা ভালো ব্যবহার দিয়ে হতে পারে, নিয়ম-কানুন সহজ করার মধ্য দিয়ে হতে পারে। করদাতা কিভাবে চাচ্ছেন, সেভাবে তাঁকে সাহায্য করে হতে পারে।’

পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অনেকেই টিন নিচ্ছে বিভিন্ন সেবা পাওয়ার জন্য। সেটা হয়ে গেলে তারপর আর রিটার্ন দিচ্ছে না। হয়তো একটা পণ্য কাস্টমস হাউস থেকে ছাড়াতে হবে তখন সে টিন নিল, তারপর হয়তো দেখা গেল তার কম্পনিই নেই আর। এগুলো বন্ধ করতে পারলে সমাধানটা হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমবার করদাতা যা ঘোষণা দেবে, সে যা ইচ্ছা করুক। রিটার্ন জমা শুরুর আগের সম্পদ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। রিটার্ন নিয়ে নিতে হবে। এখন আগে রিটার্ন দেননি কেন? এই প্রশ্ন করলেই কেউ আসতে চাইবে না। রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রথম দিকে আইন প্রয়োগে শিথিলতা দেখাতে হবে। তাহলে মানুষ ভয় পাবে না, টিন করবে, রিটার্ন দাখিলে উৎসাহিত হবে।’