দ্রুত ২০ কোটি টাকার মাইলফলক ছোঁবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম

প্রকাশিত: ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩
আজ মঙ্গলবার পেনশনের যাবতীয় মাসিক কিস্তি সংগ্রহে সিটি ব্যাংক ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে দ্রুতই ২০ কোটি টাকা জমা হবে, যা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। এ ছাড়া এই কার্যক্রমে সরকারি সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি সিটি ব্যাংকের মাধ্যমেও কিস্তি দেওয়া যাবে।আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে পেনশনের যাবতীয় মাসিক কিস্তি সংগ্রহে সিটি ব্যাংক ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান এবং সিটি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

বেসকারি ব্যাংকের সঙ্গে এটাই প্রথম চুক্তি। এ  ছাড়া আরো তিনটি ব্যাংক পেনশন স্কিমে যুক্ত হবে।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাংলাদেশে অন্য কোনো বিনিয়োগ স্কিম সর্বজনীন পেনশন স্কিমের কাছাকাছিও নেই। থাকতেও পারে না।

কারণ যত খরচ আছে সব কিছু সরকার দিচ্ছে। এ জন্য বলতে পারি এটা সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্কিম। আমরা স্কিমের টাকা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করছি। এর চেয়ে সুরক্ষিত ব্যবস্থা বাংলাদেশে নেই।
ইতিমধ্যে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। যা দ্রুতই ২০ কোটি টাকা পার হয়ে যাবে।’তিনি বলেন, ‘সিটি ব্যাংক আসলো তৃতীয় ব্যাংক হিসেবে। আরো আসবে। এ ছাড়া আরো চারটি ব্যাংক, বিশেষ করে যারা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, তাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন।

এর মধ্যে প্রথমে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হলো। তারা পাইওনিয়ার হিসেবে আমাদের কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমাদের সমতা সুরক্ষা এবং প্রগতিতে মোটামুটি ভালো সাড়া পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের প্রবাসী স্কিম ধীরে চলছে। এ জন্য পেনশনে প্রবাসীদের যুক্ত করা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য, কিন্তু অন্য স্কিমগুলোকে বাদ দিচ্ছি তা নয়। একই সঙ্গে যে সকল ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহে ভালো করছে তাদেরকে আমাদের সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে।’একই অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংক পিএলসির এমডি ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘আমরা এই কর্মসূচির প্রমোটার নয়, সেলার হতে চাই। এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের পণ্যের সঙ্গে এই স্কিমকে যুক্ত করে দিতে হবে। সিটি ব্যাংকে যিনিই নতুন অ্যাকাউন্ট করবেন, সঙ্গে সঙ্গে পেনশন স্কিমের ফরমও পূরণ করবেন। সিটি ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নিচ্ছেন, তার সঙ্গে বান্ডলিং করতে হবে। এটা নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘পেনশন স্কিম আসলেই একটা ভালো কাজ। দেশের আর্থিক খাতকে বড় করা ও মানুষের সুরক্ষার জায়গা বাড়াতে পেনশন স্কিম বড় অবদান রাখতে পারে। পাশাপাশি এটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকের জন্যও সুরক্ষা হিসেবে কাজ করবে। পেনশন স্কিমে গ্রাহকদের অন্তর্ভুক্তি আরো বাড়াতে চাই।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান বলেন, ‘এখন এক কোটি ২০ লাখ মানুষ বৃদ্ধ। ২০৪১ সালে হবে তিন কোটি ৬০ লাখ। বৃদ্ধ লোকদের দায়িত্ব কে নেবে? সরকারকে নিতে হবে। সরকারকে যদি এই দায় থেকে বেরিয়ে আসতে হয়, তাহলে অবশ্যই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা বাস্তবায়নে আমদের সকলে মিলে কাজ করতে হবে। আমাদের কাজের মূল উদ্দেশ্য হবে বৃদ্ধদের রক্ষা করা। একদিন আমি, আপনিও বৃদ্ধ হব। আমাদের পিতা-মাতা যারা আছেন, তাদের যত্ন আমাদেরই নিতে হবে। ছেলে-মেয়েরা বিদেশ চলে যাচ্ছে, সুতরাং এটাই সঠিক সময়।’

সিটি ব্যাংকের মালয়েশিয়া মানি ট্রান্সফারের (সিবিএল) প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান ফারাজী বলেন, ‘আমরা প্রবাসী অংশটা নিয়ে কাজ করব। মালয়েশিয়ায় ১০ লাখের বেশি প্রবাসী কাজ করছেন। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে আমরা ৩৩ হাজার গ্রাহককে অনবোর্ড করতে পেরেছি। সেখানে আমাদের মোট গ্রাহক এখন ৫০ হাজারের বেশি। ১৫টি ব্রাঞ্চের মাধ্যমে এই অল্প সংখ্যক গ্রহককে আমাদের সেবায় যুক্ত করতে পেরেছি। একই সঙ্গে সিটিরেমিট পরিষেবার (অ্যাপ) মাধ্যমে অনেক বেশি প্রবাসীর কাছ পর্যন্ত যেতে পারব। সিটিরেমিটের মাধ্যমে প্রবাসীদের পেনশন স্কিমে যুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারব।’

অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, সমঝোতা স্মারকের ফলে সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের সব উপযুক্ত নাগরিক এবং প্রবাসীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ অনুযায়ী বিভিন্ন স্কিমের মাসিক কিস্তি ডিজিটাল পদ্ধতিতে জমা দিতে পারবেন।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ, হেড অব করপোরেট ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট তাহসিন হক, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মুর্শীদুল হক খান প্রমুখ।